টাইব্রেকারে জুভেন্টাসকে হারিয়ে কোপার শিরোপা নাপোলির
ফুলটাইম
নাপোলি ০-০ জুভেন্টাস
(টাইব্রেকারে ৪-২ এ জয়ী নাপোলি)
নির্ধারিত ৯০ মিনিটে নাপোলিকে আটকে রেখেছিলেন জিয়ানিলুইজি বুফন আর বারপোস্ট। অন্যপ্রান্তে অ্যালেক্স মেরেটকে তেমন একটা পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি জুভেন্টাস। টাইব্রেকার ভাগ্যে বুফন আর কিছুই করতে পারলেন না। মেরেটই হয়ে গেলেন নায়ক। পাউলো দিবালার প্রথম শট ঠেকিয়ে দেওয়ার পর দানিলো মারলেন আকাশে উঁচিয়ে। আর টাইব্রেকারে নাপোলি নিখুঁত, ৪ শটেই সফল তারা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে আর পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগই দেয়নি নাপোলি। দারুণ এক জয়ে ২০১৪ সালের পর আবারও কোপা ইতালিয়ার শিরোপা ঘরে তুলেছে নাপোলি।
ফাঁকা মাঠের টাইব্রেকার রোমাঞ্চ অবশ্য অদ্ভুতই হলো। আরও অদ্ভুতুড়ে হলো শিরোপা প্রদান অনুষ্ঠান। নেচে গেয়ে গলা ফাটিয়ে নিজেদের উদযাপন নিজেদের ভেতরই রাখতে হয়েছে নাপোলিকে। রোমের অলিম্পিক সেটডিয়াম প্রদক্ষিণ করার কসরতটুকুও আর এবার করতে হয়নি শিরোপা জিতে!
নাপোলি গোলরক্ষক মেরেটের অবশ্য এই ম্যাচ খেলারই কথা ছিল না। ডেভিড অস্পিনা নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না দলে। ইতালিয়ান গোলরক্ষক সুযোগ পেয়ে সময়মতো সেরেছেন কাজের কাজটা। ম্যাচ শেষে তরুণ মেরেট বলেছেন, বুফনের মতো কিংবদন্তীর বিপক্ষে খেলে শিরোপা তুলে ধরতে পেরে আরও তার আনন্দ হয়েছে দ্বিগুণ।
তবে রাতটা মোটেই ভালো গেল না মাউরিসিও সারির। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে জিতে ইতালিতে প্রথমবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরার হাতছানি ছিল তার। জেনেরো গাত্তুসোর দলের কাছে হেরে সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে সারির। গাত্তুসোর সামনে শুরু থেকেই বর্ণহীন ছিল সারির জুভেন্টাস। নাপোলির দায়িত্বে ১৪৭ ম্যাচেও কোনো শিরোপা জেতা হয়নি সারির, আর গাত্তুসো মৌসুমের মাঝপথে দলের দায়িত্ব নিয়ে ১৭ তম ম্যাচে এসে পেলেন শিরোপা। সেটা তার কোচিং ক্যারিয়ারেরও প্রথম। ২০০৩ সালে খেলোয়াড় হিসেবে কোপার শিরোপা জিতেছিলেন গাত্তুসো, ১৭ বছর পর জিতলেন কোচ হিসেবে।
পুরো ম্যাচে রোনালদো-দিবালারা ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। ডগলাস কস্তাও বদলি হওয়ার আগ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ দৌড়ে হতাশ করেছেন। ফিট না হওয়ায় গঞ্জালো হিগুয়াইন স্কোয়াডেই ছিলেন না। নাপোলির রক্ষণ ভেঙে বলার মতো কোনো আক্রমণই সাজাতে পারেনি বিয়াঙ্কোনেরিরা। কৌলিবালিরা আঠার মতো পুরোটা সময় লেগেছিল তাদের সঙ্গে।
নাপোলির চেহারা অবশ্য ছিল আলাদা। লরেঞ্জো ইনসিনিয়ে প্রথমার্ধেই ফ্রি কিক থেকে বারপোস্টের কারণে গোলবঞ্চিত হয়েছিলেন। এরপর বিরতির আগে আরও দুইবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বুফন। একবার ডিয়েগো ডেমে, আরেকবার সেই ইনিসিনিয়েকেই এক মিনিটের ব্যবধানে দুর্দান্ত দুইটি সেভে গোলবঞ্চিত করেন ৪২ বছর বয়সী গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধেও নাপোলি বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করেও কাজের কাজটি করতে পারছিল না। অবশ্য নির্ধারিত সময়েই ম্যাচটা জিতে নিতে পারত নাপোলি। তাও একেবারে ম্যাচের শেষ মুহুর্তে। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে মাতেও পলিতানোর গোলমুখী হেড এক হেড দারুণ এক সেভে আটকে দিয়েছিলেন বুফন। রিবাউন্ডে এলজিফ এলমাস পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকেও মেরেছিলেন বারপোস্টে।
তিন মাস পর ফুটবল ফেরায় খেলোয়াড়দের শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রেখে কোপা ইতালিয়াতে অতিরিক্ত সময় বাদ দেওয়ার হয়েছিল আগেই। নির্ধারিত সময় ফুরিয়ে গেলে ১১ বছর পর কোপার ফাইনাল খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। জুভেন্টাসের প্রথম কিকটি নিতে এসেছিলেন দিবালা। জোরালো শট হলেও দিক-নিশানা ঠিকঠাক আন্দাজ করে মেরেট ঠেকিয়ে দেন সেই শট। দ্বিতীয় শট আকাশে উঁচিয়ে মারেন দানিলো। অ্যারন রামসে আর লিওনার্দো বনুচ্চি সফল কিক নিয়েছিলেন জুভেন্টাসের হয়ে। তবে ইনসিনিয়ে, পলিতানো, ম্যাক্সিমোভিচ, মিলিক বুফনকে আর কোনো সুযোগই দেননি।
ম্যাচ শেষে রোনালদোর অবশ্য একটা আফসোস সঙ্গী হওয়ার কথা। টাইব্রেকারে তো বরাবরই দুর্দান্ত তিনি, অথচ কিক নেওয়ারই সুযোগ পেলেন না তিনি। জুভেন্টাসে যোগ দেওয়ার পর দ্বিতীয়বারের চেষ্টাতেও কোপা ইতালিয়ার শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তার। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো টানা দুই ফাইনাল হারলেন রোনালদো। ডিসেম্বরে সুপার কোপা দে ইতালিয়ার ফাইনালে লাৎসিওর কাছে হেরেছিল জুভেন্টাস।
ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর ভেতর ইতালিতে কেবল ফুটবল ফিরেছে কাপ টুর্নামেন্ট দিয়ে। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগের পর ফাইনালের নিষ্পত্তি হলো ৫ দিনের ব্যবধানে। সিরি আ আবার মাঠে ফিরবে শনিবার থেকে। ২৩ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে বোলোনিয়ার মাঠে খেলতে যাবে জুভেন্টাস। লিগের ১২ ম্যাচ বাকি থাকতে দুইয়ে থাকা লাৎসিওর চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে আছে রোনালদোরা। কোপা খোয়ালেও 'আসল' কাপটা আর হারাতে চাইবে না জুভেন্টাস।