"ভারতে ফিক্সিং-বিরোধী আইন হলে বদলে যাবে ক্রিকেট"
ম্যাচ ফিক্সিংকে ফৌজদারি অপরাধ ঘোষণা করে ভারতে সেটির জন্য আলাদা আইন করলে সেটি ক্রিকেট ও এর মাঝে দুর্নীতির খোলনলচে বদলে দেবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কমিশনের সমন্বয়ক স্টিভ রিচার্ডসন ও বিসিসিআইয়ের দুর্নীতিবিরোধী কমিশনের প্রধান অজিত সিংয়ের মতে, ভারতের ক্রিকেট-দুর্নীতির শেকড়টা প্রোথিত জুয়া-কেন্দ্রিক কর্মকান্ডে। এই জুয়া দমন করতে বর্তমানে ভারতে যে আইন, সেটিকে ‘হাস্যকর’ বলেও মনে করেন অজিত।
ভারতে বছরে প্রায় ৩০-৪০ হাজার কোটি রূপির জুয়া হয় বলেও অসমর্থিত সূত্রে জানতে পেরেছেন অজিত। তার মতে, শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নয়, উঠতি তরুণদের সহায়তার নামে অনেকেই শেষকালে তাদেরকে দিয়ে ফিক্সিংয়ের মতো কাজ করান, হয়ে ওঠেন তাদের 'গডফাদার'। আইপিএল নয়, ভারতের রাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন লিগে এসব খুবই বিষবাস্পের মতো ছড়িয়ে আছে বলে জানেন তারা। রিচার্ডসনের মতে, ফিক্সিংয়ে ক্রিকেটাররা মূল সমস্যা নন। তারা শুধুমাত্র দীর্ঘ এক সংযোগের চূড়ান্ত ব্যক্তি হিসেবে ফিক্সিংয়ের মতো কাজ করে থাকেন। ২০ জুন 'ভারতে ফিক্সিং-বিরোধী আইন প্রয়োজন কিনা' শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে এর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন রিচার্ডসন-অজিতরা।
১৮৬৭ সালের আইন অনুযায়ী ভারতে প্রকাশ্যে জুয়া খেলা বা বাজি ধরা যে ধরনের অপরাধ, সেটির শাস্তি নিয়ে অজিত বলেছেন, “জুয়ার বিপক্ষে একটা কঠোর আইন প্রয়োজন আমাদের। এখন যে আইন আছে, সেটি প্রাচীন, এবং এর জন্য শাস্তিটা হাস্যকর। শুধু ২০০ বা ৫০০ রুপি জরিমানা, আর কিছু নেই!”
রিচার্ডসনের মতে, সামনে ভারতে হতে যাওয়া দুটি আইসিসি টুর্নামেন্টের আগে আইন নিয়ে আরকেবার ভাবতে, “এই মুহুর্তে কোনও আইন নেই। ভারত পুলিশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল, কিন্তু তাদের হাত তো বাঁধা। আমরা শুধু দুর্নীতিবাজদের একটু বাধা দিতে পারি। এখন যেটি করি, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলি, যাতে তারা ইচ্ছামত তাদের কাজ করতে না পারে।
“কিন্তু আইন ভারতের খেলাটাই বদলে দেবে। আমাদের হাতে এখন ৫০-টির একটু কম তদন্ত আছে। এসবের বেশিরভাগই ভারতের সাথে সম্পর্কযুক্ত। খেলাধুলা রক্ষার জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর একটা ব্যাপার হবে, যদি ভারতে ম্যাচ-ফিক্সিংয়ের আইন করা হয়।”
তার মতে, ভারতের পুলিশ যথাসাধ্য চেষ্টা করে, তবে আইন নেই বলে একটা পর্যায়ে গিয়ে তাদের থেমে যেতে হয়।
২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বড় ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে ফিক্সিংকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাশ করেছে। আইসিসির দুর্নীতিদমন বিরোধী ইউনিট সহায়তা করেছে সে আইন প্রস্তুত করতে। সনাথ জয়াসুরিয়াসহ বেশ কয়েকজন আইসিসির দুর্নীতিবিরোধি ধারা ভঙ্গ করার পর এই পথে হেঁটেছে শ্রীলঙ্কা।
ইংল্যান্ডে ম্যাচ-ফিক্সিং বেশ আগে থেকেই ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে পড়ে। ‘ব্রাইবারি অ্যাক্ট’ নামে সে আইনের কারণেই সর্বশেষ পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান নাসির জামশেদের সাজা হয়েছে, ম্যানচেস্টারের এক আদালতে দোষ স্বীকার করার পর তার ১৭ মাসের কারাদন্ড হয়েছিল। এর আগে লর্ডসে স্পট-ফিক্সিংয়ের দায়ে পাকিস্তানের তিন ক্রিকেটার-- সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমিরের সাজা হয়েছিল ১৯০৬ সালের দুর্নীতিদমন অ্যাক্টের জায়গায় আসা এই ‘ব্রাইবারি অ্যাক্ট’-এর কারণে।
যেসব দেশে ফিক্সিং বা খেলাধুলায় দুর্নীতি অপরাধের মধ্যে পড়ে না, সেখানে আইসিসি বা সে দেশের ক্রিকেট বোর্ড শুধু ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড থেকে নিষিদ্ধ করতে পারে অভিযোগ প্রমাণ হওয়া ব্যক্তিদের।