উদিনেসের চমকে শিরোপা উদযাপন করতে পারলো না জুভেন্টাস
ফুলটাইম
উদিনেসে ২-১ জুভেন্টাস
ইতালির চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কাটায় কাটায় ৩,০০০ তম দিন ছিল। ২০১২ সালের মে মাস থেকেই ইতালির চ্যাম্পিয়ন জুভেন্টাস। আজ ম্যাচ জিতলেই টানা নবম শিরোপাটাও ঘরে উঠত। সেসব কিছু হয়নি। উদিনেসে চমকে দিয়েছে তাদের। জুভেন্টাসের উদযাপনটা স্থগিত করতে হচ্ছে কিছুদিনের জন্য। যোগ করা সময়ে গোল খেয়ে মৌসুমের পঞ্চম হারের স্বাদ পেয়েছে বিয়াঙ্কোনেরিরা। তবে পরের ম্যাচে ঘরের মাঠে সাম্পদোরিয়াকে হারালে অবশ্য শিরোপা আবার ঠিকঠাক ফিরে আসবে তুরিনে।
রেলিগেশনের জোনের ঠিক ওপরে থেকে ম্যাচ শুরু করা উদিনেসের বিপক্ষে প্রথমার্ধে লিড নিয়েছিল জুভেন্টাসই। ম্যাথিয়াস ডি লিট বক্সের বাইরে থেকে করা দুর্দান্ত শটে ৪২ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেন। এই মৌসুমে লিগে ডি লিটের গোল গিয়ে দাঁড়ায় তাতে চারে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, পাউলো দিবালা, গঞ্জালো হিগুয়াইনের পর জুভেন্টাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। ইউরোপের শীর্ষে ৫ লিগে ডিফেন্ডার হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সী ডিফেন্ডার হিসেবে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডও গড়া হয়েছে ডাচ ডিফেন্ডারের।
গোলটা অনেকক্ষণ ধরেই আসি আসি করছিল। এর আগে উদিনেসের গোলরক্ষক হুয়ান মুসো অন্তত দুইবার জুভেন্টাসকে গোলবঞ্চিত করেছেন। একবার সতীর্থকে আত্মঘাতী গোলের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। আরেকবার স্বদেশী পাউলো দিবালার বক্সের বাইরে থেকে করা গোলমুখী শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। দিবালার 'পার্টনার ইন ক্রাইম' ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও গোলে শট করেছিলেন বক্সের বাইরে থেকে। সে দফায় মুসোকে কিছু করতেও পারতেন না, তবে রোনালদোর শট অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে যায়।
গত কয়েক ম্যাচ ধরে লিড নিয়েও খেই হারানো অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে জুভেন্টাসের। সেই ভূত দ্বিতীয়ার্ধে আবার চেপে ধরেছে বনুচ্চি-কিয়েলিনিবিহীন জুভেন্টাসের রক্ষণকে। প্রথমার্ধে উদিনেসে শুরুটা ভালো করলেও গোলের সামনে তেমন একটা উজ্বল ছিল না। একটি ক্রস থেকে দানিলো আত্মঘাতী গোল দিয়ে বসেছিলেন প্রায়, উদিনেসের গোলের কাছাকাছি গিয়েছিল ওই একবারই তখন।
বিরতির পর সপ্তম মিনিটে কেন সেমার বাম দিক থেকে করা একটি ক্রসে কপাল খুলে যায় উদিনেসের। দূরের পোস্ট থেকে ডাইভিং হেডারে সেই বল জালে জড়িয়ে দেন ইলিয়া নেতোরোভস্কি। গোল খেয়ে ম্যাচে ফেরার সবরকম চেষ্টা করে গেছে জুভেন্টাস। তবে বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই ছিল বক্সের বাইরে থেকে। সাইডওয়েজ পাস ছাড়া মাঠের মাঝখান দিয়ে জুভেন্টাসকে আক্রমণও সাজাতে দিচ্ছিল না উদিনেসের শক্ত রক্ষণ। দিবালা আরেকবার শটে নিয়েছিলেন দূর থেকে। প্রথমার্ধের মতো একই ফল পেয়েছেন, মুসো আটকে দিয়েছেন। রোনালদোও খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
জয়ের জন্য জুভেন্টাস যখন অলআউট আক্রমণে নেমেছে তখনই উদিনেসে সুযোগ বুঝে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল দিয়ে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছে। এই আক্রমণে অবশ্য সেকো ফোফানার বড় অবদান আছে। মিডফিল্ডে বল জিতেছিলেন তিনি। ম্যাচেরন নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও দারুণ গতিতে এরপর অ্যালেক্স সান্দ্রো আর ডি লিটকে পেছনে ফেলে গোলের সামনে চলে যান ফোফানা। এগিয়ে আসা ভোজায়িক সেজনির নিচ দিয়ে বাম পায়ের নিচু শটে গোল করে বল জড়িয়ে দেন জালে।
দারুণ জয়ে রদ্রিগো ডি পলের উদিনেসে এখন অনেকটাই নিরাপদ। পয়েন্ট টেবিলের ১৫ তে উঠে এসেছে তারা। আর জুভেন্টাসের শিরোপা নিশ্চিত করতে দরকার শেষ ৩ ম্যাচ থেকে অন্তত পয়েন্ট। দুইয়ে থাকা আটালান্টা বাকি ৩ ম্যাচ জিতলেও পয়েন্ট হবে জুভেন্টাসের সমান। সেক্ষেত্রে হেড টু হেডে এগিয়ে থেকে শিরোপা জিতবে জুভেন্টাস। নাটকীয় কিছু না হলে অবশ্য এমন কিছুর সম্ভাবনা নেই। শিরোপা হেসে খেলেই জুভেন্টাসের জেতার কথা। কিন্তু গত এক মাসের ফর্ম জুভেন্টাস সমর্থকদের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ একে দেবে নিশ্চিতভাবেই। এই নিয়ে শেষ ৫ ম্যাচে মাত্র একবার জয়ের মুখ দেখা বিয়াঙ্কোনেরিরা হারলো দ্বিতীয়বার। দুইবারই শুরুতে এগিয়ে গিয়ে। ম্যাচ জেতার মতো অবস্থানে থেকে ১৮ পয়েন্ট হারিয়েছে এবার জুভেন্টাস। চ্যাম্পিয়ন হতে যাওয়া দলের সঙ্গে সেটা বেমানানই।