কিক অফের আগে : 'জটিল' গার্দিওলা, 'সরল' জিদান, ডাগ আউট যখন মাঠের চেয়েও বড়
কবে, কখন
ম্যানচেস্টার সিটি-রিয়াল মাদ্রিদ
৮ আগস্ট, রাত ১.০০
ইতিহাদ স্টেডিয়াম
চ্যাম্পিয়নস লিগ, দ্বিতীয় রাউন্ড, দ্বিতীয় লেগ
প্রথম লেগের ফল রিয়াল মাদ্রিদ ১-২ ম্যান সিটি
রিয়াল মাদ্রিদের কাজ কতোটা কঠিন? ঘরের মাঠে প্রথম লেগে হেরেও পরের রাউন্ডে যাওয়ার সর্বশেষ কীর্তি রিয়াল গড়তে পেরেছিল ১৯৭১ সালে। রিয়াল মাদ্রিদের কাজ ঠিক এতোটাই কঠিন।
আপনি অবশ্য প্রশ্ন তুলতে পারেন, এই রিয়াল মাদ্রিদ তো অন্য রিয়াল মাদ্রিদ। ফেব্রুয়ারিতে ইস্কোর গোলে এগিয়ে গিয়েও পরে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়া রিয়ালও না। এই রিয়াল তো পৃথিবী বদলে যাওয়ার পর বদলে গেছে নিজেরাও। এই রিয়াল তো জিনেদিন জিদানের শক্ত ভীতের ওপর দাঁড়িয়ে। তাহলে রিয়াল পারবে না কেন?
রিয়াল মাদ্রিদ পারবে কি না সেই নিশ্চয়তা কেউই আপনাকে দিতে পারবে না। তবে এই টাইয়ে পিছিয়ে থাকার জন্য যা যা উপকরণ দরকার সবকিছুই জুটেছে রিয়ালের কপালে। ঘরের মাঠে হজম করা দুই অ্যাওয়ে গোল, সার্জিও রামোসের লাল কার্ড- প্রথম লেগের পর আসলে অনেকটাই উবে গেছে রিয়ালের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা নতুন করে প্রাণ পেয়েছে রিয়ালের লা লিগা জয়ের পর।
রিয়ালের যখন তরতর করে ফর্মে ফিরেছে, সিটি ততোই পিছু হটেছে। এফএ কাপ সেমিফাইনালে আর্সেনালের কাছে হার বা চেলসি ও সাউদাম্পটনের কাছে লিগের হার জুন-জুলাই মাসেও রক্ষণের দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে ভালোমতো। সেসব বিশ্লেষণ করার যথেষ্ট সময়ও পেয়েছেন জিনেদিন জিদান। রিয়াল লিগ শেষ করার পর সিটি খেলেছে আরও দুই ম্যাচ। রিয়ালের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তাই আরও আগেই।রামোসকে ছাড়া কতো কঠিন রিয়ালের কাজ? চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ রামোসকে ছাড়া অসহায়। অধিনায়ক রামোসকে ছাড়া সবশেষ ৬ ম্যাচে ৫ বারই তারা হেরেছে ইউরোপে। ডিফেন্ডার রামোসের অভাব তো আছেই, সেটা হয়ত এডার মিলিতাও সামাল দিতে পারবেন। কিন্তু ব্যক্তি রামোসের অভাব পূরণ করবেন কে? রামোসের জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেবেন এমন কেউ রিয়ালে নেই। লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুস, করিম বেনজেমারা সিনিয়র ফুটবলার- এই স্কোয়াডে অভিজ্ঞতার ঘাটতি নেই, এরপরও রামোস তো রামোসই!
এই ম্যাচটা উতরে গেলেই এরপর থেকে সব এক লেগের ম্যাচ। অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে দূরত্ব হবে আর ৩ ম্যাচের। নক আউট পর্বে রিয়ালের খ্যাতি আছে, জিদানের খ্যাতি আরও বেশি। কোচিং ক্যারিয়ারে তো কখনও চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট টাই হারেননি তিনি!
পরের রাউন্ডে যেতে শুধু জিতলেই হবেনা, রিয়ালকে দুই গোল করতেই হবে। গোল করা আবার রিয়ালের জন্য সমস্যার কারণ। লিগের শেষ অংশে গিয়েও রিয়াল ঠিক অতোটুকুই করেছে যতটুকু না করলেই নেই। সেই মানসিকতা কি সিটির বিপক্ষে যথেষ্ট হবে?
পেপ গার্দিওলার দলের রক্ষণ দেখে জিদান আশাবাদী হতেই পারেন। ফার্নান্দিনহো জাত ডিফেন্ডার নন, রক্ষণে তারই থাকার কথা। ওই প্রান্ত দিয়ে এডেন হ্যাজার্ড আর করিম বেনজেমার কম্বিনেশন প্লের ওপর নির্ভর করছে অনেককিছু। নড়বড়ে রক্ষণে সিটির ডিফেন্সিভ হাইলাইন অনেকটাই বক্সের কাছাকাছি জায়গায় অবস্থান করে আজকাল। সেটাও রিয়ালের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে। লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুসের সৃজনশীলতার ওপর আস্থা হারানোর কারণ নেই, কাসেমিরোর ঠান্ডা মাথার দুর্দান্ত ওয়ার্ক রেটের ওপরও আস্থা রাখা যায় পুরোপুরি- এদের সঙ্গে ফেদেরিকো ভালভার্দে হয়ে যেতে পারেন তুরুপের তাস। বক্সের ভেতর তার লেট রান ভোগাতে পারে সিটির রক্ষণকে।
ভালভার্দে অবশ্য খেলবেন কী না তার নিশ্চয়তা নেই। ৪-৪-২ না হয়ে ৪-৩-৩ অ্যাটাকিং ফর্মেশন হলে জিদান হয়ত ভিনিসিয়াসকেই নামাবেন মাঠে। তার গতিও সাহায্য করতে পারে রিয়ালকে। মোট কথা এই ম্যাচের পুরোটাই আসলে ডাগ আউটের কারসাজি।
কোচ পেপ গার্দিওলার গায়ে 'জিনিয়াস' তকমা জুটেছে বহু আগে। অথচ সবশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগে তিনি সফল হয়েছিল ২০১১ সালে। এই রেকর্ডটা তার নামের পাশে বেমানান। জিদান অবসশ্য টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেও লোকমুখে এখনও গার্দিওলার সমকক্ষ হয়ে পারেননি। কে কাকে সেকেন্ড গেসের গেমে হারিয়ে দেন সেটাই গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।
চ্যাম্পিয়নস লিগের গার্দিওলার একটা বদনাম আছে। অতিরিক্ত 'চিন্তা-ভাবনা' করে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি, অর্থাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন বেশি। জিদান উলটো, যেভাবে জেতা লাগবে, তার জন্য সব করবেন তিনি। গার্দিওলা একরোখা। বায়ার্ন মিউনিখ আর ম্যান সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে নক আউট পর্বে হারা প্রতিটি ম্যাচেই একাদশে কিছু না কিছু চমক তিনি রেখেছিলেন। চমক ছিল আসলে এই দুই দলের আগের ম্যাচেও। রিয়ালের বিপক্ষে হেসুস সেদিন খেলেছিলেন লেফট উইঙ্গার হিসেবে। অবশ্য সেবার গার্দিওলা উতরে গিয়েছিলেন।
কাজটা গার্দিলার জন্যই সহজ। ৯০ মিনিট ধরে দুই গোল হজম না করলেই হলো, নিজেদের কিছু না করলেও চলবে। কাগজে-কলমে সহজ কাজটাই মাঠে করতে হবে গার্দিওলার সিটিকে। নইলে অস্তিত্ব নিয়ে সঙ্কটে পড়ে যেতে পারেন খোদ গার্দিওলাও।
দলের খবর
রিয়ালের স্কোয়াডে নেই গ্যারেথ বেল ও হামেস রদ্রিগেজ। তাদের ছাড়াই ইংল্যান্ড গেছে রিয়াল মাদ্রিদ। রামোস থাকবেন না মাঠে, তবে দলের সঙ্গে গেছেন তিনি। ম্যান সিটি দলে পাচ্ছে না সার্জিও আগুয়েরোকে। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার আগেই ছিটকে গেছেন।
সম্ভাব্য একাদশ
ম্যান সিটি
এডারসন, ওয়াকার, ফার্নান্দিনহো, লাপোর্তে, ক্যান্সেলো, রদ্রি, গুন্দোয়ান, ডি ব্রুইন, মাহরেজ, স্টার্লিং, হেসুস
রিয়াল মাদ্রিদ
কোর্তোয়া, কারভাহাল, ভারান, মিলিতাও, মার্সেলো, কাসেমিরো, মদ্রিচ, ক্রুস,, ভালভার্দে, হ্যাজার্ড, বেনজেমা
হেড টু হেড
সবমিলিয়ে ৫ দেখায় রিয়াল জিতেছে ৩ বার, সিটি ১ বার। এর আগে ২০১৫-১৬ মৌসুমে সেমিফাইনালে দুইদল মুখোমুখি হয়েছিল। সেবার ১-০ তে জিতে ফাইনালে উঠে পরে শিরোপাও জিতেছিল রিয়াল।
প্রেডিকশন
ম্যানচেস্টার সিটি ১-১ রিয়াল মাদ্রিদ