ভারানের ভুলে সিটির কাছে ভরাডুবি রিয়ালের
ফুলটাইম
ম্যানচেস্টার সিটি ২-১ রিয়াল মাদ্রিদ
দুই লেগ মিলে ৪-২ গোলে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে সিটি
রাফায়েল ভারান এই ম্যাচ ভুলে যেতে চাইবেন। সার্জিও রামোস ছিলেন না, রাফায়েল ভারানের সঙ্গী এডার মিলিতাও হতে পারতেন নড়বড়ে। যাকে নিয়ে শঙ্কা ছিল না সেই ভারানই ভুল করলেন। একবার নয়, দুইবার। ওই দুইবারই গোল করলো ম্যানচেস্টার সিটি। রক্ষণের ভুলের চড়া মাশুল দিয়ে জিনেদিন জিদান পেলেন ক্যারিয়ারের চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম নক আউট টাই হারের স্বাদ। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর মতো এখানেও পেপ গার্দিওলা টপকে গেলেন জিদানকে। রিয়াল মাদ্রিদ টানা দ্বিতীয়বার কাটা পড়ল চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে। আর ম্যান সিটি উঠে গেল চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে, সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ জুভেন্টাসকে হারানো অলিম্পিক লিওঁ।
পরের রাউন্ডে যেতে রিয়ালকে দুই গোল করতে হত। রিয়াল উলটো হজম করলো দুই গোল। তার আগ পর্যন্ত সিটির রক্ষণ যে খুব পেপ গার্দিওলাকে খুব একটা স্বস্তি দিচ্ছিল তেমনটাও না। প্রথমার্ধ পর্যন্তও ম্যাচের ভাগ্য ছিল ঝুলে, প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও ভারান করলেন আরেক ভুল। প্রথমবার ৯ মিনিটে রাহিম স্টার্লিং গোল করেছিলেন, পরের বার ৬৮ মিনিটে গোল করলেন গ্যাব্রিয়েল হেসুস। ওই গোলে সাঙ্গ হয়েছে রিয়ালের লড়াই স্পৃহা।
ভারানের প্রথম ভুলটা পুরোপুরি তার একার নয়। নিচ থেকে বিল্ড আপ করার চেষ্টা করছিল রিয়াল। স্টার্লিং, হেসুসরা প্রেস করে যাচ্ছিলেন রিয়ালের বক্সের ভেতর পর্যন্ত। হেসুসের প্রেসেই চাপে পড়ে গেলেন ভারান, বল হারালেন, হেসুস করলেন কাটব্যাক। গোলের সামনে থাকা স্টার্লিংয়ের শুধু বলটা পুরে দিতে হলো জালে। স্বপ্নের শুরুটা সিটি পেল উপহার থেকে (১-০)।
জিদান একাদশে সম্ভাব্য সবাইকেই রেখেছিলেন। আক্রমণভাগে এক রদ্রিগোর সংযোজন ছিল চমক। এডেন হ্যাজার্ডও ফিরেছিলেন। মিনিট বিশেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রিয়াল ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিল। করিম বেনজেমা, হ্যাজার্ড দুইজনই গোলে শট নিলেন। কিন্তু দুইবারই এডারসন বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। ২৯ মিনিটে আর বেনজেমাকে আটকানো গেল না। রদ্রিগো বাম প্রান্তে দারুণভাবে কাটিয়ে ক্রস করলেন। বেনজেমার কাছ থেকেই পাস পেয়েছিলেন রদ্রিগো, তিনি বাইলাইনের কাছাকাছি যেতে যেতে ফ্রি রান নিয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন বেনজেমা। তার সঙ্গে আর তিন ডিফেন্ডার ছিলেন, সেন্টারব্যাক পজিশনে থাকা ফার্নানদিনহোরই দায়িত্বটা ছিল। বেনজেমা তাকে দর্শক বানিয়ে লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করে রিয়ালকে ফিরিয়ে আনেন ম্যাচে (১-১)।
দ্বিতীয়ার্ধেও কোর্তোয়াই সিটিকে আটকে রেখেছিলেন। আর সিটি প্রথম লেগের মতো অতিরিক্ত নিখুঁত হওয়ার প্রচেষ্টায় একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করে যাচ্ছিল। ৫৩ থেকে ৬৬ মিনিট পর্যন্ত অন্তত তিনবার সুযোগ হাতছাড়া করে সিটি। একবার ইলকে গুন্দোয়ান ভালো জায়গা থেকে নিজে শট না দিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেন। কেভিন ডি ব্রুইন আরও একবার ছিলেন সিটির প্রাণ। তিনিও গোলের সামনে গিয়ে শট করার ঠিক আগে দানি কারভাহালের কাছে আটকে যান। ৬৬ মিনিটে হেসুসের দারুণ এক শট কোর্তোয়া আরও দুর্দান্ত এক সেভে আটকে দেওয়ার পর আরও একবার হতাশ হতে হয় সিটিকে।
এর দুই মিনিট পরই কপাল খুলে যায় সিটির। রিয়ালের ওপর তেমন চাপ ছিল না। ভারানের কাছে বল উড়ে এসেছিল। প্রথম দফায় হেডে বলের নাগাল মিস করে গেলেন তিনি। ভারান এরপর ব্যাক পাস দিতে গেলেন কোর্তোয়াকে, কিন্তু রাতটা যে তার নয় সেটা যেন আগেই নির্ধারণ হয়ে ছিল। পেছন থেকে হেসুস দৌড়ে এসে কোর্তোয়া ধরার আগেই পা ছুঁয়ে দিলেন সেই বলে। হেসুসের বুদ্ধিদীপ্ত টাচে কাঙ্ক্ষিত গোলটাও পেয়ে গেল সিটি (২-১)। গার্দিওলা প্রথম গোলের পর ছোটখাট এক লাফ দিয়েছিলেন, এবার উড়লেন আরেকটু বেশি।
ম্যাচ খেলতে না পারলেও দলের সঙ্গে এসেছিলেন রামস। ইতিহাদের গ্যালারিতে বসে পুরোটা সময়ই দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করে গেছেন। তবে সেসব আর কাজে আসল কই! ভারানের ভুল আর প্রথম লেগের হার- রিয়াল ততক্ষণে বুঝে গেছে এই সিটির চেয়ে অনেকদিক থেকেই পিছিয়ে তারা।
এরপর রিয়ালকে আর সেভাবে সুযোগই দেয়নি সিটি। জিদান বদলি হিসেবে আসেনসিও, ভাসকেজ, ভালভার্দে, ইয়োভিচকে পর্যন্ত নামিয়েছেন মাঠে, তবু ভিনিয়সিয়াসের দ্বারস্থ হননি। দলটার নাম রিয়াল মাদ্রিদ বলেই অবশ্য একেবারে শেষ মিনিট পর্যন্তও সিটিকে পুরো মনোযোগ ধরে রেখে খেলতে হয়েছে।
ফাঁকা ইতিহাদে উদযাপনের তেমন একটা উপলক্ষ্য পায়নি সিটি। তবে জয়টা যখন রিয়ালের বিপক্ষে তখন তার মাহাত্ম্য কমে না ফাঁকা মাঠেও। ম্যাচের বড় অংশটা হয়েছে ডাগ আউটে, জিদানকে সেখানে টপকে গিয়ে রেকর্ডও গড়া হয়েছে গার্দিওলার। এর আগে ২০১০-১১ মৌসুমে বার্সেলোনার কোচ হয়ে রিয়ালকে বিদায় করেছিলেন গার্দিওলা। এবার দ্বিতীয়বার একই কাজ করলেন। ইউরোপের সবচয়ে সফল ক্লাবকে দুইবার বাদ দেওয়া কোচের সংখ্যা এর আগে ছিল দুইজন মাত্র। মার্সেলো লিপ্পি আর অটোমার হিটজফিল্ডের পাশে বসেছেন গার্দিওলা। জিদান অবশ্য তার চেয়ে কম সময়ে ৩ বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। গার্দিওলা সবশেষে সেই ৯ বছর আগে জিতেছিলেন ইউরোপ সেরার পুরস্কার। রিয়ালকে হারানোর পর বাকি পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য বড় জ্বালানিই পেল সিটি।
ম্যান সিটি একাদশ
এডারসন, ওয়াকার, ফার্নান্দিনহো, লাপোর্তে, ক্যান্সেলো, রদ্রি, গুন্দোয়ান, ডি ব্রুইন, ফোডেন, স্টার্লিং, হেসুস
রিয়াল মাদ্রিদ একাদশ
কোর্তোয়া, কারভাহাল, ভারান, মিলিতাও, মেন্ডি, কাসেমিরো, মদ্রিচ, ক্রুস, রদ্রিগো, হ্যাজার্ড, বেনজেমা