• এশিয়া কাপ ২০১৬
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ!

    ২২ গজের সেলুলয়েড : মাহমুদউল্লাহর ম্যাচ!    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে! 


     

    স্ট্যাম্পড নাকি রান-আউট!

    প্রথম আন্তর্জাতিক ফিফটি করতে প্রয়োজন তিন রান। মোহাম্মদ মিঠুন একটু তাড়াহুড়োই করে ফেললেন! রোহান মুস্তাফার টসড-আপ ডেলিভারিটা পয়েন্টের দিকে ঠেলে দিয়েই ছুটলেন রান নিতে। কিন্তু বলটাই যে গেল না পয়েন্টের দিকে! ইনসাইড-এজ হয়ে বল গেল পেছনে, উইকেটকিপার ধরে ভেঙ্গে দিলেন স্ট্যাম্প। যেহেতু রান নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন মিঠুন, নিয়মানুযায়ী হলেন রান-আউট। তাড়াহুড়োটা একটু তাড়াতাড়িই করে ফেলেছিলেন বোধহয়!

     

    আমজাদের ফিরে আসা

    ২ রানে তাঁর বলেই মিঠুনের ক্যাচ ফেলেছিলেন শাহজাদ। মিঠুন ওই ওভারেই পরে নিয়েছিলেন আরও ১১ রান। ২ ওভারে আমজাদের খরচ ছিল ২৩ রান। তৃতীয় ওভারে এসে দিলেন আরও ৯। তবে টি-টোয়েন্টির নিয়ম মেনেই যেন শেষ ওভারটা আগের তিন ওভারের পুরো বিপরীত, দিলেন মাত্র দুই রান। তাঁর ফুলটস বুঝতে না পেরে বোল্ড হলেন সাকিব, পরের বলেই নুরুলকে বানালেন ক্যাচ। ৩ ওভারে ২৩ রান দেয়া আমিরাত অধিনায়কের ৪ ওভার শেষে বোলিং ফিগার দাঁড়ালো ৩৪ রানে ২ উইকেট। শুধু আমজাদ নয়, ৪০ রানের মধ্যে বাংলাদেশের ৫ উইকেট নিয়ে তো ম্যাচে ফিরলো আরব আমিরাতও!

     

    মুস্তাফা বনাম তাসকিন -এক

    শেষ ওভারে চাইলেই ‘ম্যানক্যাড’ করতে পারতেন রোহান মুস্তাফা। বল করার আগেই যে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তাসকিন। করলেন না, ‘সুযোগ’ দিলেন তাসকিনকে। এক বল পরে লং-অফে গেল রিয়াদের শট, দ্বিতীয় রানটা সহজ হলো না। মুস্তাফা এবার থ্রো-টা ঠিকমতো হাতে জমাতে পারলেন না, পারলে তাসকিন আউটই হতেন! পরের বলে কাভারে খেললেন রিয়াদ, এবার আর ভুল করলেন না মুস্তাফা। তৃতীয়বার এসে তাসকিনকে করতে পারলেন রান-আউট!

     

    মুস্তাফা বনাম তাসকিন-দুই

    আমিরাতের বোলিং ইনিংসের শেষ ওভারটা করেছিলেন তিনি। আমিরাতের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুটাও হলো তাঁরই হাতে। প্রথম বলটা প্রথমে মেরে খেলার কথা ভাবলেও শেষ মুহুর্তে সরে এলেন সে ভাবনা থেকে। পরের বলে চালিয়ে খেলতে গিয়ে হলেন ব্যর্থ। তারপরের বলটা আরও বেশী বুঝলেন না, বল এজ হয়ে গেল তৃতীয় স্লিপে। তবে বুঝলেন না ফিল্ডার সৌম্যও! হাত ফসকে বেড়িয়ে গেল ক্যাচ, বেঁচে গেলেন মুস্তাফা। ‘প্রতিশোধ’টাও নেয়া হলো না তাসকিনের!

     

    'মুস্তাফা বনাম মুস্তাফি'

    তাসকিনের বলে আউট হলেন না, তবে ‘প্রায়’ আউট হলেন মুস্তাফিজুরের বলে। স্লোয়ারটা বুঝতে না পেরে ক্যাচ দিলেন মুস্তাফিজের দিকেই, বলটা হাতেও পড়লো তাঁর। হাত থেকে বেরিয়েও গেল না, তবে শেষ মুহুর্তে মুস্তাফিজের হাত থেকেই বল ছুঁলো মাটি! আউট ভেবে ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দিয়েও ফিরে এলেন মুস্তাফা। তবে পরের ওভারে ঠিকই হাঁটতে হলো সেদিকেই, মাশরাফির বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন থার্ডম্যানে। ধরলেন সেই মুস্তাফিজই!

     

    মুস্তাফিজ, সঙ্গে কাটার!

    মুস্তাফার ক্যাচটা হয়নি শেষ পর্যন্ত। তবে মোহাম্মদ শাহজাদের ক্যাচটা যাকে বলে ‘লোপ্পা’! মুস্তাফিজ তা নিলেন ‘পরিস্কার’ভাবেই! পরের বলে আবার অফ-কাটার, স্বপ্নীল পাতিল ফ্লিক করতে গেলেন। বল কানায় লেগে ওপরেই উঠলো শুধু, এবার ক্যাচ গেল মাশরাফির দিকে। ভুল হয়নি বাংলাদেশ অধিনায়কের, দুইয়ে দুই হয়ে গেল মুস্তাফিজুরেরও!

     

    মুশফিক যখন কিপার নন

    এর আগে তাঁর খেলা ৪৬ টি-টোয়েন্টিতে দুইবার ঘটেছিল এমন। শেষ জিম্বাবুয়ে সিরিজে একাদশে থেকেও কিপিং-গ্লাভস ছেড়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে নুরুল হাসান নিয়েছিলেন সে দায়িত্ব। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে সিরিজ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন মুশফিক, শেষ দুই ম্যাচে নুরুলের হাতেই ছিল কিপিংয়ের দায়িত্ব। এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে দলে ছিলেন না নুরুল, উইকেটের পেছনে তাই আবারও মুশফিক। আমিরাতের সঙ্গে ম্যাচে একাদশে এলেন নুরুল, উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বটা আবার ছেড়ে দিলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক।

     

    ধরাশায়ী আমজাদ!

    বোলিংয়ের শেষটা করেছিলেন ভালই। তবে ব্যাটিংয়ের শেষটা ভাল হলো না আমজাদের। ১০ বলে তিন রান করে হলেন হিট উইকেট। যুক্ত হলেন মোহাম্মদ হাফিজ, গ্যারেথ হপকিন্স, দীনেশ চান্ডিমাল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, মিসবাহ-উল-হক ও ডেভিড ওবুয়াদের তালিকায়। টি-টোয়েন্টিতে আমজাদের আগে হিট-উইকেট হয়েছিল এ ছয়জনই। আগের ছয়জনের তালিকায় বাংলাদেশ নামটা ছিল না, আমজাদ আর মাহমুদুল্লাহর ‘কল্যাণে’ যুক্ত হলো তা!

     

    এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ!

    ত্রয়োদশ ওভারে নেমেছিলেন, বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ৮৩। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলটা ছেড়ে দিলেন! ছয় বলে যখন এক রান, মারলেন ছয়। আবার গুটিয়ে নিলেন নিজেকে, ১৯ ওভার শেষেও তাঁর রান ছিল ২১ বলে ১৯। শেষ ওভারে এলো ১৭, সবকটিই নিলেন মাহমুদউল্লাহ! ২৭ বলে তাঁর রান হলো ৩৬, বাংলাদেশের জয়ে যা রাখলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পরে বল হাতে ২ ওভারে ৫ রান দিয়ে নিলেন ২ উইকেট। ফিল্ডিংয়ে পয়েন্টে শাইমান আনোয়ারের ক্যাচটাও নিলেন অসাধারণভাবে!

    ম্যাচসেরা রিয়াদ হবেন না তো আর কে!  

     

    পরে ব্যাটিংয়ে সর্বনাশ

    টসজয়। আগে ফিল্ডিং। ম্যাচ হারা। এশিয়া কাপের প্রথম তিন ম্যাচের পরিসংখ্যান এমনই। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ হারলো ভারতের কাছে, দ্বিতীয় ম্যাচে আরব আমিরাত শ্রীলঙ্কার কাছে। আমিরাত আবার হারলো টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়ে!

    চতুর্থ ম্যাচ থেকে টসে জিতলে কি অধিনায়করা ভাববেন একটু অন্যভাবে?