বার্সা-বায়ার্ন ম্যাচ মানেই রোমাঞ্চকর গোল উৎসব
চ্যাম্পিয়নস লিগের মিনি-টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেছে লিসবনে। ফরম্যাট বদলে নকআউট পর্বের ম্যাচগুলো সব এক লেগে নেমে এসেছে। এক লেগের কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালের পর ২৪ আগস্ট লিসবনে হবে ফাইনাল। কোয়ার্টার ফাইনালে চারটি ম্যাচের ভেতর অনুমিতভাবেই বার্সেলোনা-বায়ার্ন মিউনিখের ম্যাচ নিয়ে আছে বাড়তি উন্মাদনা। দুটি দলই পাঁচবার ইউরোপ সেরা হয়েছে। আর দুই দল ইউরোপে একে অপরের বিপক্ষে খেলেছেও মোট ৫ টি টাই। সেমিফাইনালে ৩ বার, কোয়ার্টার ফাইনালে এবং গ্রুপ পর্বে একবার করে মুখোমুখি হয়েছে বার্সেলোনা। তবে এবারই প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টে এক লেগের ম্যাচ খেলবে বার্সা-বায়ার্ন।
ইউয়েফা কাপ, ১৯৯৫-৯৬ (সেমিফাইনাল)
প্রথম লেগ : বায়ার্ন মিউনিখ ২ - ২ বার্সেলোনা, দ্বিতীয় লেগ : বার্সেলোনা ১ - ২ বায়ার্ন মিউনিখ
১৯৯৬ সালে ইউরোপের দুই জায়ান্ট বার্সেলোনা এবং বায়ার্ন মিউনিখ প্রথম একে অপরের বিপক্ষে খেলেছিল। সেই বছরের এপ্রিলে মিউনিখের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে ইউয়েফা কাপে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বায়ার্নের মাঠে খেলতে নেমেছিল ইয়োহান ক্রুইফের বার্সেলোনা। অলিম্পিয়াস্টাদিওনে সেই ম্যাচে শুরুতে লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র করেছিল বার্সেলোনা।
তবে সেই মৌসুমে তখন পর্যন্ত অপরাজিত থাকা দুই অ্যাওয়ে গোল নিয়েও পরের রাউন্ডে যেতে পারেনি। ঘরের মাঠে একের পর এক আক্রমণের পসরা সাজিয়েছিল তারা। কিন্তু কাতালানরা জাল খুঁজে পাওয়ার আগেই বায়ার্নের বাবেল ৪০ মিনিটে এবং ৮৪ মিনিটে উইটেজেক বার্সার জালে বল পাঠান। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে বার্সার দে লা পেনিয়া একটি গোল শোধ করলেও বায়ার্নের কাছে হেরে শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় বার্সেলোনাকে। বায়ার্ন পরে ফাইনালে ফ্রেঞ্চ ক্লাব বোর্দোকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তোলে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ, ১৯৯৮-৯৯ (গ্রুপ পর্ব)
প্রথম লেগ : বায়ার্ন মিউনিখ ১ - ০ বার্সেলোনা, দ্বিতীয় লেগ : বার্সেলোনা ১ - ২ বায়ার্ন মিউনিখ
বার্সেলোনা এবং বায়ার্ন মিউনিখ ইউরোপে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৯৮-৯৯ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগে। সেবারও ফল পক্ষে আসেনি বার্সেলোনার। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে কাতালানদের রীতিমত শাসন করেছিল বাভারিয়ানরা। বার্সা গোলরক্ষক রুড হেস্প বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেভ না করলে সেদিন বড় ব্যবধানেই হারতে হত কাতালান ক্লাবটিকে।
ফিরতি লেগে ঘরের মাঠে বার্সেলোনাকে জিততেই হত। গ্রুপে মাত্র ৪ পয়েন্ট নিয়ে তখন ধুঁকছিল লুই ফন হালের দল। কিন্তু আবারও একই ফল! বার্সেলোনা প্রথমার্ধে পাওয়া পেনাল্টি থেকে এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল করে আবারও ন্যু ক্যাম্প থেকে জয় তুলে নেয় বায়ার্ন মিউনিখ। সেবার আর গ্রুপ পর্ব পেরুনো হয়নি বার্সেলোনার। বায়ার্ন এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সেই গ্রুপ থেকে নকআউট পর্বে উঠেছিল।
বায়ার্ন এবং ইউনাইটেড দুইদলই সেবার খেলেছিল ন্যু ক্যাম্পের ফাইনালে। ঐতিহাসিক সেই ফাইনালে বায়ার্ন সমর্থকরা যখন জয়োল্লাস শুরু করে দিয়েছিলেন প্রায়, ঠিক তখনই ম্যাচের যোগ করা সময়ে ইউনাইটেডের টেডি শেরিংহ্যাম এবং রেড ডেভিলদের বর্তমান কোচ ওলে গানার সোলশার গোল করে ন্যু ক্যাম্পে লাল পতাকা ওড়ান।
চ্যাম্পিয়নস লিগ, ২০০৮-০৯ (কোয়ার্টার ফাইনাল)
প্রথম লেগ : বার্সেলোনা ৪ - ০ বায়ার্ন মিউনিখ, দ্বিতীয় লেগ : বায়ার্ন মিউনিখ ১ - ১ বার্সেলোনা
২০০৮-০৯ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল বার্সা-বায়ার্ন। আগের দুই টাইয়ের চেয়ে এবারের গল্পটি পুরোপুরি আলাদা। প্রথম লেগে ন্যু ক্যাম্পে ৯৩ হাজার দর্শকের সামনে প্রথমবারের মতো ইউরোপে বায়ার্নকে হারায় বার্সেলোনা। তাও আবার বাভারিয়ানদের জালে এক হালি গোল পুরে। ম্যাচের প্রথম ১২ মিনিটেই লিওনেল মেসি এবং স্যামুয়েল ইতো-র গোলে পিছিয়ে পড়ে বায়ার্ন, এরপর ৩৮ মিনিটে মেসি এবং তার পাঁচ মিনিট পর থিয়েরি অঁরি আরও দুইবার বায়ার্নের জালে বল পাঠান। ৪-০ গোলের জয়ে প্রথম লেগ শেষেই যেন টাইয়ের নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় আনুষ্ঠানিকতার দ্বিতীয় লেগ ১-১ গোলে ড্র হলেও প্রথম লেগের নৈপুণ্যে বার্সা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। সেমিতে চেলসিকে হারায় বার্সেলোনা, আর ফাইনালে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যান ইউনাইটেডকে পরাস্ত রোমে ট্রফি উঁচিয়ে ধরে কাতালানরা।
চ্যাম্পিয়নস লিগ, ২০১২-১৩ (সেমিফাইনাল)
প্রথম লেগ : বায়ার্ন মিউনিখ ৪ - ০ বার্সেলোনা, দ্বিতীয় লেগ : বার্সেলোনা ০ - ৩ বায়ার্ন মিউনিখ
২০০৮-০৯ চ্যাম্পিয়নস লিগে দুই দলের প্রথম লেগের পুরো উল্টো চিত্র দেখা যায় ২০১২-১৩ মৌসুমে। সেবার ন্যু ক্যাম্পে ৪-০ গোলে বায়ার্নকে ধরাশায়ী করা বার্সেলোনা এবার নিজেরাই অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় এক হালি গোল হজম করে।
ফিরতি লেগেও নিস্তার পায়নি টিটো ভিলানোভার বার্সেলোনা। ন্যু ক্যাম্পে আরও ৩ গোল হজম করে কাতালান ক্লাবটি। অ্যাগ্রিগেটে ৭-০ গোলে বায়ার্নের কাছে হেরে সেবার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেয় তারা। আর বায়ার্ন ফাইনালে আরেক জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তোলে।
চ্যাম্পিয়নস লিগ, ২০১৪-১৫ (সেমিফাইনাল)
প্রথম লেগ : বার্সেলোনা ৩ - ০ বায়ার্ন মিউনিখ, দ্বিতীয় লেগ : বায়ার্ন মিউনিখ ৩ - ২ বার্সেলোনা
আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ, আবারও সেমিফাইনালে মুখোমুখি বার্সেলোনা-বায়ার্ন মিউনিখ। তবে চিত্রপট বদলে গেছে আমূল। বার্সেলোনার এমএসএন (মেসি, সুয়ারেজ, নেইমার) ত্রয়ী তখন ইউরোপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ন্যু ক্যাম্পে প্রথম লেগে তাদের সামনে দাড়াতেই পারেনি জার্মান চ্যাম্পিয়নরা। মেসির দুই গোল এবং নেইমারের এক গোলে ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখে বার্সেলোনা।
তবে আগে চারবার অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় গিয়েও একবারও জয়ের মুখ দেখেনি বার্সেলোনা। তাই ফিরতি লেগের আগে বার্সার ড্রেসিং রুমে কিছুটা স্নায়ুচাপও ছিল বৈকি। সেবারও জার্মান দুর্গ ভেদ করতে পারেনি বার্সেলোনা। তবে সেই ম্যাচে বায়ার্নের কাছে হারলেও আগের লেগের ৩ গোলের সঙ্গে আরও দুই গোল যোগ করতে সমর্থ হয় কাতালান ক্লাবটি। আর তাই বায়ার্ন দ্বিতীয় লেগে ৩ গোল দিয়ে ম্যাচ জিতেও কোনও লাভ হয়নি। অ্যাগ্রিগেটে ৫-৩ গোলে বিদায় নিতে হয় বাভারিয়ানদের। ফাইনালে জুভেন্টাসকে হারিয়ে এরপর ঐতিহাসিক ট্রেবল পূর্ণ করে লুইস এনরিকের বার্সেলোনা।