• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কিক অফের আগে : যে ম্যাচ বায়ার্ন মিউনিখ বনাম লিওনেল মেসির

    কিক অফের আগে : যে ম্যাচ বায়ার্ন মিউনিখ বনাম লিওনেল মেসির    

    কবে, কখন
    বার্সেলোনা-বায়ার্ন মিউনিখ
    চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল
    ১৫ আগস্ট, রাত ১.০০
    লিসবন


    লিসবনের যে ৮ দল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে এসেছে তাদের সবার চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এক করলে সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১০। এই ১০ টি শিরোপাই বার্সেলোনা আর বায়ার্ন মিউনিখের। দুই দলেরই ৫টি করে। কোয়ার্টার ফাইনালে কেন বার্সেলোনা-বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনা সবচেয়ে বেশি সেটা বোধ হয় এরপর আর না বললেও চলে।

    এই ম্যাচের মাহাত্ম্য আছে আরও একটি। ২০০৯, ২০১৩, ২০১৫ -তে এই দুইদল সবশেষ মুখোমুখি হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগে। প্রতিবার এই টাইয়ের জয়ী দল শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে থেমেছে। বায়ার্ন মিউনিখ টুর্নামেন্ট ফেভারিট, বার্সেলোনার এবারের হালচাল আলাদা। আগের দুইবার রোমা আর লিভারপুলের কাছে নাটকীয় ব্যর্থতার পর লা লিগার শিরোপা হারানো বার্সা এখন অনেকটাই দুর্বল। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। উলটো চিত্র বায়ার্নে, ঘরোয়া ডাবল জেতা হয়ে গেছে তাদের। ২০২০ সালে এক ম্যাচও হারেনি বাভারিয়ানরা। এমনকি সবশেষ ২৭ ম্যাচেও মাত্র একবার ড্র করেছে বায়ার্ন। এই সংখ্যাগুলো বলছে বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচের পরিস্কার ফেভারিট। তাদের বিদায় করে দিতে পারলে বার্সেলোনা সন্দেহাতীতভাবেই হয়ে যাবে টুর্নামেন্ট ফেভারিট।

    বলা যত সহজ, কাজ তার চেয়ে বহুগুণ কঠিন। কাগজে-কলমে এই বার্সাকে কোনোভাবেই আপনি এগিয়ে রাখতে পারবেন না। সমান দাঁড়ি পাল্লার একদিকে নতুন করে ওজন ঝুলিয়ে দিলে যেমন হয়, লিওনেল মেসিকে যে কোনো দলে বসিয়ে দিলে ওই অবস্থা হওয়ার কথা। কিন্তু মেসিও এবার যথেষ্ট নন। বার্সা আগেও প্রমাণ পেয়েছে এক খেলোয়াড়ের ওপর ভরসা করে সবসময় উতরে যাওয়া যায় না। এবার তো মেসির নেমেসিস আছেন অন্য দলে। রবার্ট লেভানডফস্কির গোলের কাছে এবার মেসি ম্লান।

    ৪৪ ম্যাচে ৫৪ গোল। লেভানডফস্কির পুরো মৌসুমের চিত্র এটি। চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা, ৭ ম্যাচে ১৩ গোল করা হয়েছে পোলিশ স্ট্রাইকারের। লেভানডফস্কি ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন। তাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন থমাস মুলার, সার্জ গ্যানাব্রিরা।
     


    আর বার্সার গত ১৪ বছরের ভেতর সবচেয়ে হতাশার মৌসুম পার করার দ্বারপ্রান্তে। গেল ১৩ মৌসুম শিরোপাবিহীন কাটেনি বার্সার। এই ১৩ মৌসুমই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বার্সা চ্যাম্পিয়নস লিগে রেকর্ড গড়েছে। কিন্তু সবশেষ শিরোপাটা ২০১৫ সালে। বার্সার মতো ক্লাবের জন্য যথেষ্ট নয় সেটা।

    দুই দলই মৌসুমের মাঝপথে কোচ বদলেছে। বায়ার্ন হানসি ফ্লিকের ছোঁয়ায় জাদুর মতো বদলে গেছে। মূলত ম্যান ম্যানেজমেন্টটা ঠিকঠাক করেছেন ২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী দলের সহকারি কোচ। বাকিটা তার ট্যাকটিক্যাল দর্শন। বার্সাও এমন কিছু চেয়েছিল, কিন্তু বদলায়নি বার্সার ভাগ্য।

    বায়ার্নের সংখ্যাগুলো শুধু সংখ্যা নয়। কিকে সেতিয়েনও জানেন সেটা। কিন্তু ম্যাচটা একপেশে হবে- এমন ধারণার সঙ্গে একমত নন তিনি, “ওদের নিয়ে শঙ্কার তো শেষ নেই। ওরা আপনাকে চাপে ফেলতে পারে, আবার একইতালে রক্ষণও করতে পারে। আক্রমণে অনেকজন একসঙ্গে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ওদের প্রেসিং যদি ঠেকাতে পারি, তাহলে আমার বিশ্বাস ওদের ঘায়েল করা সম্ভব। আমার মনে হয় না, এক দল দাপট দেখাবে এই ম্যাচে।”

    ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মলেনে সেতিয়েন জোর দিলেন দলের ওপরই। মেসি একা  যে সবসময় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবেন না সেটা তারও অজানা নয়, “আমি দলের শক্তির ওপর বিশ্বাস করি। মেসিকে বল দিয়ে সাহায্য করতে হবে। এটা সত্যি যে মেসি একাই গোল বানিয়ে নিতে পারে। কিন্তু দলের শক্তি ছাড়া মেসিও দমে যাবে। এটা সবার জন্য সত্যি।”   

    ম্যাচটা তাই ঘুরে ফিরে দুর্দান্ত বায়ার্ন বনাম মেসির। বায়ার্ন কোচ হানসি ফ্লিক অবশ্য সংবাদ সম্মেলনেই মেসিকে আটকানোর কৌশল বাতলে দিয়েছেন, “আমরা মেসিকে আটকানোর কথা ভেবেছি। কী ভেবেছি সেটাও বলে দেই। ওর বিপক্ষে আমাদের একটা দল হয়ে খেলতে হবে। ওকে থামাতে হবে, আর চাপে রাখতে হবে।”

    ফ্লিকের বায়ার্নের জন্য চ্যালেঞ্জ তাই বড় না। অবস্থাচিত্তে একজনকে আটকালেই ম্যাচটা হাতের মুঠোয় চলে আসার কথা বায়ার্নের।

    দলের খবর
    সার্জিও বুসকেটস আর আর্তুরো ভিদাল দুইজনই ফিরছেন দলে। বুস্কেটস একাদশে ফিরবেন সেটা মোটামুটি নিশ্চিত। সেতিয়েন ফ্ল্যাট ৪-৪-২ ফর্মেশনে দল সাজালে আর্তুরো ভিদালেরও থাকার কথা তাতে। বক্স টু বক্স রোলে তখন খেলবেন তিনি।  এই ম্যাচের জন্য উসমান ডেম্বেলেকেও বার্সা পাচ্ছে প্রায় এক বছর পর। অবশ্য তার খেলার নিশ্চয়তা নেই। অ্যান্টোয়ান গ্রিযমানকে একাদশে রাখবেন কি না- সেটা এক বড় সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছে সেতিয়েনের জন্য।  

    জেরোম বোয়াটেং আর কিংসলে কোমানের চোট নিয়ে সংশয়ে ছিল বায়ার্ন। তবে দুইজনেরই একাদশে থাকার কথা। বেঞ্জামিন পাভার্দ চোটে পড়েছেন, তাই জশুয়া কিমিখ চলে যেতে পারেন রাইটব্যাকে। আর থিয়াগোর সঙ্গে তখন মিডফিল্ডে জুটি গড়বেন লিওন গোরেতস্কা। বার্সেলোনা থেকে ধারে বায়ার্নে যাওয়া ফিলিপ কৌতিনহোর সাইড বেঞ্চেই থাকার কথা।

    সম্ভাব্য একাদশ
    বার্সেলোনা

    টের স্টেগান, সেমেদো, পিকে, ল্যাংলেট, আলবা, ডি ইয়ং, বুসকেটস, রবার্তো, ভিদাল, মেসি, সুয়ারেজ

    বায়ার্ন মিউনিখ
    নয়্যার, কিমিখ, বোয়াটেং, আলাবা, ডেভিস, থিয়াগো, গোরেতস্কা, মুলার, গ্যানাব্রি, কোমান, লেভানডফস্কি

    হেড টু হেড
    বায়ার্নের বিপক্ষে বার্সার রেকর্ড মোটেই সুবিধার নয়। ১০ দেখায় মাত্র দুইবার জয় পেয়েছে তারা। দুইবারই ম্যাচ ছিল ন্যু ক্যাম্পে। আর দুই ম্যাচ হয়েছে ড্র, বাকি ৬ বারই জিতেছে বায়ার্ন। ২০১৩ সালে দুই লেগ মিলিয়ে বায়ার্নের কাছে ৭-০ গোলেও হেরেছিল বার্সা।

    প্রেডিকশন
    বার্সেলোনা ০-২ বায়ার্ন মিউনিখ