কিক অফের আগে : লিঁওর বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী সিটির 'প্রতিশোধের' মিশন
কবে, কখন
ম্যানচেস্টার সিটি-লিওঁ
চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল
১৬ আগস্ট, রাত ১.০০
লিসবন
ঘরোয়া ফুটবল দাপিয়ে বেড়ায় ম্যানচেস্টার সিটি। এই মৌসুমে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আগে গত কয়েক মৌসুম ইংলিশ ফুটবলে একটি ত্রাসের নাম ছিল ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু ঘরোয়া ফুটবলের সেই ত্রাসই বারবার ইউরোপে এসে ভোঁতা হয়ে যায়। যেই টটেনহামকে গত মৌসুমে লিগে অনায়াসে দুইবার হারিয়ে দিয়েছিল সিটি, তাদের কাছেই চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাগ্রিগেটে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল সেবার। চ্যাম্পিয়নস লিগে আসলেই যেন সিটির শক্তি, মেশিনের মতো ফুটবল সব হাওয়া হয়ে যায়।
তবে চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে সিটির নতুন রুপ দেখা গেছে। শেষ ষোলয় রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে দুই লেগে ৪-২ অ্যাগ্রিগেটে হারিয়েছে সিটিজেনরা। আর সেই জয় থেকে পাওয়া আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়েই এবার ক্লাবের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে ওঠার মিশনে মাঠে নামতে যাচ্ছে গার্দিওলার দল। সামনে বাধা জুভেন্টাসকে বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া লিওঁ।
লিওঁ-র বিপক্ষে সিটির আগের রেকর্ড ভালো নয় মোটেই। ২০১৮-১৯ মৌসুমের অপ্রতিরোধ্য সিটিকে সেবার গ্রুপ পর্বে দুই লেগেই আটকে দিয়েছিল লিওঁ। প্রথম ম্যাচে ইতিহাদে ২-১ গোলে হারের পর লিওঁ-র মাঠে গিয়েও ২-২ গোলে ড্র করে ফিরেছিল সিটিজেনরা। আর চলতি মৌসুমে তো আরও ভয়ংকর রুপে হাজির হয়েছে লিওঁ। ফেঞ্চ লিগে খুব বেশি কিছু করতে না পারলেও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের বাড়ি ফেরার টিকিট ধরিয়ে দেওয়া তো কম কথা নয়।
আর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই সন্তুষ্ট থাকতে চায় না ফ্রেঞ্চ ক্লাবটি। দলের ড্রেসিং রুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের স্বপ্ন বোনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লিওঁ ডিফেন্ডার মার্সাল, “ড্রেসিংরুমে সবাই ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। আর সেখান পর্যন্ত যেতে পারলে আমাদের চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার ভালো সুযোগ রয়েছে। আমরা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে, দর্শকবিহীন মাঠে খেলব। আর সেই ধরনের পরিবেশে ফেবারিটরা নাও জিততে পারে। এটাই হয়ত আমাদের সুযোগ।”
মূলত চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের সংস্করণে করোনার কারণে কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালের ফরম্যাট পরিবর্তনের কারণেই স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাচ্ছে ছোট-বড় সব দল। কারণ দুই লেগে অনেক কিছু পরিবর্তন করা যায়, ভুল শোধরানোর সুযোগ থাকে। কিন্তু এক লেগে পাওনা একেবারে হাতেনাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর তাই চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় থেকে মোটে ৩ ম্যাচ দূরে থাকা লিওঁ স্বপ্নে বাধ দিচ্ছে না।
তবে একইভাবে সিটিও নতুন এই ফরম্যাটকে নিজেদের জন্য সুবিধাজনকই মনে করছে। দলটির রাইটব্যাক কাইল ওয়াকার এই ফরম্যাটকে সিটির খেলার ধরনের সাথে মানানসই বলে বর্ণনা করেছেন। গার্দিওলাও এই ফরম্যাটের সঙ্গে সিটির অভ্যস্ততার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, “আমরা এফএ কাপ, কারাবাও কাপে এভাবেই খেলি, এভাবে খেলতে আমরা অভ্যস্ত। এখানে কোনও দ্বিতীয় সুযোগ নেই। আপনি আছেন নয়ত নেই। এই ফরম্যাটে কৌশল পুরো ভিন্ন। যেকোনো কিছুই হতে পারে। এটা নকআউট ম্যাচ, তবে আমরা তৈরি।”
গার্দিওলাকে তৈরি থাকতেই হবে। কারণ সিটিতে গার্দিওলা ঘরোয়া ফুটবলের সব ট্রফি কয়েকবার করে জিতলেও তার কাছে চ্যাম্পিয়নস লিগ অধরাই থেকেছে। সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ না জিততে পারলে তার সব সাফল্যই মূল্যহীন হয়ে পড়বে, তার সিটি ক্যারিয়ারকে ‘ব্যর্থ’ হিসেবে ধরে নেওয়া হবে বলে একসময় রসিকতা করেছিলেন গার্দিওলা নিজেই।
দলের খবর
রিয়াল মাদ্রিদের পর লিওঁ-র বিপক্ষেও দলের মূল স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোকে পাচ্ছেন না পেপ গার্দিওলা। তবে তার জায়গায় ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল হেসুস নিয়মিত পারফর্ম করায় অবশ্য খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না সিটিজেনদের। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে হেসুস আছেনও দারুণ ফর্মে, এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে সিটির হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলে (৯) হাত রয়েছে তার। এবারের টুর্নামেন্টে এরই মধ্যে তিনি ৬ গোল এবং ৩ টি অ্যাসিস্ট করেছেন। আর নিষেধাজ্ঞার পর উইংব্যাক বেঞ্জামিন মেন্ডি আবারও স্কোয়াডে ফিরেছেন।
সিটির বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ফ্রেঞ্চ ক্লাবটিতে তেমন কোনো চোট সমস্যা নেই। জুভেন্টাসের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে দলে জায়গা না পেলেও সিটির বিপক্ষে আবারও প্রথম একাদশে ফিরতে পারেন তারকা ফরোয়ার্ড মুসা ডেম্বেলে। আর সিটির অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা জেসন দেনায়ের সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে লিওঁ-র রক্ষণ সামলাবেন।
সম্ভাব্য একাদশ
ম্যানচেস্টার সিটি
এডারসন, ওয়াকার, ফার্নান্দিনহো, লাপোর্তে, ক্যান্সেলো, ডি ব্রুইন, রড্রিগো, গুন্দোয়ান, মাহরেজ, হেসুস, স্টার্লিং
লিওঁ
লোপেস, দেনায়ের, মার্সেলো, মার্সাল, ডুবয়, ক্যাকেরেত, গিমারায়েস, আওয়ার, কর্নেত, ডেম্বেলে, ডিপায়
হেড টু হেড
চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যানচেস্টার সিটি এবং লিওঁ এর আগে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে গ্রুপ পর্বে ম্যাচ দুটি খেলেছিল সিটি এবং লিওঁ। ইতিহাদে প্রথম ম্যাচটিতে লিওঁ-র কাছে ২-১ গোলে সেবার হেরে গিয়েছিল সিটি। আর ফিরতি লেগে লিওঁ-র মাঠে গিয়ে ২-২ গোলে ড্র করেছিল সিটিজেনরা।
প্রেডিকশন
ম্যানচেস্টার সিটি ২-১ লিওঁ