• এশিয়া কাপ ২০১৬
  • " />

     

    ২২ গজের সেলুলয়েড : সাব্বিরের 'টেক-অফ' আর সৌম্যর 'প্রত্যাবর্তন'

    ২২ গজের সেলুলয়েড : সাব্বিরের 'টেক-অফ' আর সৌম্যর 'প্রত্যাবর্তন'    

    ছবির পরে ছবি চলে নাকি তৈরী হয় সিনেমা। ক্রিকেট ম্যাচও তো তাই। টুকরো টুকরো অসংখ্য ছবি জন্ম নেয় যেখানে। ২২ গজ আর সবুজ ওই উদ্যানের ছবিগুলোকে যদি ধরা যেত সেলুলয়েডে! 


     

    শুন্য আর শুন্য

    আগের দিন আউট হয়েছিলেন রোহিত শর্মা আর আজিঙ্কা রাহানে। দুই ওপেনার, দুজনের নামের পাশেই শুন্য। মোহাম্মদ মিঠুন আর সৌম্য সরকার, দুইজন আজ আবার ফিরলেন শুন্য ‘ব্যাটে’ই! টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের শুন্য রানের ওপেনিং জুটির এটি তৃতীয় ঘটনা। পাল্লেকেলেতে ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে হংকংয়ের সঙ্গে ম্যাচে এনামুল হকের সঙ্গে দু'বারই শুন্য রানে আউট হয়েছিলেন তামিম ইকবাল।

     

    সাব্বিরের ‘টেক-অফ’!

    ৩ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪, উইকেট নেই ২টি। তাঁর রান ৩, বল খেলেছিলেন আটটি। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে নুয়ান কুলাসেকেরাকে মিডউইকেট দিয়ে মারলেন চার। দলের প্রথম, তাঁরও প্রথম বাউন্ডারি তো বটেই। পরের বলে লং অন দিয়ে ছয়, তারপরের দুই বলে দুই চার। সে ওভারে মোট নিলেন ১৮ রান। সাব্বিরের ‘ওড়া’ যেন শুরু সেখান থেকেই। ৬ষ্ঠ ওভারের থিসারা পেরেরাকে মারলেন টানা তিন চার। তারপর ছয় ওভার বাউন্ডারি নেই কোনো, একটু যেন ‘ল্যান্ড’ করেছিলেন! এরপর শিহান জয়াসুরিয়ার এক ওভারে একাই নিলেন ১৭ রান, ৫ বলে। শেষ পর্যন্ত সাব্বির রহমান থামলেন বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৮০ রানের ইনিংস খেলেই। সাব্বিরের আগে আছেন তামিম (৮৮*), সাকিব(৮৪) ও নাজিমউদ্দিন(৮১)।

     

    ‘অভাগা’ তাসকিন

    আরব আমিরাতের রোহান মুস্তাফার ক্যাচটা ছেড়েছিলেন সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় স্লিপেই। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই সৌম্য আবার ছাড়লেন, এবার দীনেশ চান্ডিমালকে। দু'বারই দুর্ভাগা বোলার তাসকিন আহমেদ! প্রথম ওভারটা মেডেন-উইকেট পেতে পারতেন, উল্টো শেষ বলে হলো চার। প্রথম ম্যাচে রোহিত শর্মার ক্যাচ ছেড়েছিলেন সাকিব আল হাসান, পয়েন্টে। ওই তাসকিনের বলেই!

     

    সৌম্যর প্রত্যাবর্তন

    তাসকিনকে যদি অভাগা বানান, সাকিবকে তাহলে ‘ভাগ্যবান’ বানালেন সৌম্য! দাঁড়িয়ে ছিলেন মিড-অফে, দিলশানের ক্যাচটা ধরলেন প্রায় সীমানার কাছাকাছি গিয়ে! ঠিকমতো দেখলেন, দৌড় দিলেন পেছন দিকে, হাতে নিলেন, দুই কনুইয়ে ভর দিয়ে সামলালেন ভারসাম্য। ‘আদর্শ’ ক্যাচ, এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরাই হয়তো! একটু আগেই ক্যাচ মিসের যন্ত্রনা কী ‘রাজকীয়’ভাবেই না ভুললেন সৌম্য!

     

    চান্ডিমাল আর তাসকিন!

    আউট হতে পারতেন প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই। তাসকিনের বলে সৌম্য ক্যাচটা ছাড়লেন। চান্ডিমাল টিকলেন আরও অনেক্ষণ, তবে নড়বড়ে ছিলেন বেশ। আউট হওয়ার আগের বলটাও রিভার্স সুইপ করেছিলেন মাহমুদউল্লাহকে, হলো না ঠিক, বল গেল পেছনে। ওই ওভারে ১০ রান চলে আসার পরেও পরের বলে আবার করলেন রিভার্স সুইপ, এবার স্লগ। বল গেল ওই তাসকিনের হাতেই!

     

    স্পিনের আগমন

    ভারতের সঙ্গে পঞ্চম বোলার হিসেবে এসেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, চার পেসারের পরে প্রথম স্পিনার। দ্বিতীয় ম্যাচে সাকিব আল হাসান, পঞ্চম বোলার হিসেবেই। এবার তৃতীয় বোলার হিসেবেই সাকিবকে আনলেন মাশরাফি। দিলশানকে ফিরিয়ে তার প্রতিদানটাও দিলেন ভালভাবেই! পরে নিয়েছেন জয়াসুরিয়ার উইকেটও, আর রিয়াদের ঝুলিতে গেছে দীনেশ চান্ডিমালের উইকেটটা।

     

    সোহানের ব্যস্ত দিন!

    চান্ডিমালের ক্যাচটা ঠিকমতো নিতে পারেননি। আম্পায়ার আলোচনা করতে চাইছিলেন, সোহান নিজেই বললেন, ক্যাচটা নিতে পারেননি! পরে রিয়াদের বলে 'এজ' হওয়ার মতো হলো, রিয়াদ আবেদন করলেন তারস্বরে। তবে সোহান রইলেন চুপচাপ। এরপর একটা স্ট্যাম্পড, একটা রান-আউটের আবেদন করলেন, ব্যাটসম্যান বেঁচে গেলেন বেশ ব্যবধানেই! তারপর ব্যাটসম্যান করতে গেলেন রিভার্স সুইপ, স্ট্যাম্পের বাইরে প্যাডে লাগলো বল। বোলার রিয়াদ একটু আবেদন করেই থেমে গেলেন, তবে সোহান থামলেন না! পরে করলেন একটা স্ট্যাম্পড, ম্যাচ শেষ হওয়ার পর বল দিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙ্গেই করলেন জয়ের উদযাপনের শুরুটা!

     

    এবং শ্রীলঙ্কা

    অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এই তালিকায় ছিল শ্রীলঙ্কাও। টেস্ট খেলুড়ে সব দেশকে ওয়ানডে হারানো হয়ে গেলেও টি-টোয়েন্টি যেন এক রহস্যের নাম বাংলাদেশের। তবে সে তালিকা থেকে শ্রীলঙ্কাকে বাদ দিল আজ বাংলাদেশ। অবশ্য স্কটল্যান্ড ও হংকংয়ের সংগেও জয় ‘অধরা’ থেকে গেছে বাংলাদেশের। একটি করে ম্যাচ খেলে তাতেই যে হারতে হয়েছে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে!

     

    ইকোনমিক্যাল মুস্তাফিজ

    ৪ ওভারে ১৯ রান, উইকেট ১টি। ইকোনমি রেট ৪.৭৫। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে পেসারদের মধ্যে সেরা দশটি ইকোনমি রেটের বোলিং স্পেলের ৪টিই এখন মুস্তাফিজুরের। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন সৈয়দ রাসেল, তালিকার শীর্ষে তাঁর সেই স্পেলই। ১৪,১৭ আর ১৯ - এই তিন ওভারে ৪,৪ আর ৫ রান দিয়ে 'ফিফটি-ফিফটি' হয়ে ঝুলতে থাকা ম্যাচটিকে সহজ জয় বানানোর মূল কারিগর মুস্তাফিজই!