আরবি লাইপজিগ : 'জার্মানির সবচেয়ে ঘৃণিত দলের' উত্থানের গল্প
রেড বুলের মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘ইট গিভস ইউ উইংস’। অস্ট্রিয়ার ব্যবসায়ী ডায়াট্রিখ মাতেশিটজের হাতে গড়া শক্তিবর্ধক পানীয়ের এই কোম্পানি এখন আর শুধু এক দিকে আটকে নেই। বিভিন্ন খাতে সফল বিনিয়োগের মাধ্যমে রেড বুল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন মাতেশিটজ। মূলমন্ত্রটির মাধ্যমে আসলে রেড বুলের পানীয়ের গুণ বর্ণনা করা হয়নি, বরং রেড বুলের দর্শনের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যে দর্শনের ওপর ভর করে এতটা দূর এগিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। মাতেশিটজের মতে, “যেকোনো কিছু করে দেখানোর জন্য দক্ষতা, সক্ষমতা এবং ক্ষমতা দিয়ে সাহায্য করে রেড বুল।” কোম্পানিটিতে আবিষ্কারমনস্ক মস্তিস্কদের জন্য কাজের দারুণ পরিবেশ তৈরি করেছেন মাতেশিটজ।
জার্মান ক্লাব আরবি লাইপজিগ রেড বুলের সেই দর্শনের এক অনন্য উদাহারণ! ৩৩ বছর বয়সী তরুণ কোচ নাগেলসমানের তরুণ দল লাইপজিগ মাত্র ১১ বছর সময়ের মাঝেই কতটা দূর এগিয়ে এসেছে। এক দশক আগে ক্লাবটি জার্মান ফুটবলের পঞ্চম বিভাগে খেলছিল, আর আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ফ্রেঞ্চ চ্যাম্পিয়ন পিএসজির বিপক্ষে মাঠে নামবে তারা।
তবে লাইপজিগের এত দ্রুত উত্থানের জন্য কিন্তু রেড বুলকে কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢালতে হয়নি। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলোয় লাইপজিগের যে দলটি দুই লেগেই টটেনহামকে হারিয়েছে, সেই দলের খুব কোনো খেলোয়াড়কেই ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি দিয়ে দলে টানেনি পূর্ব জার্মানের ক্লাবটি। এই প্রতিবেদনে আমরা কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজব। কীভাবে আঞ্চলিকে ফুটবলের একটি ক্লাব জার্মানির লিগ শিরোপার দাবীদার হয়ে উঠল? লাইপজিগের উত্থানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি রেড বুলের ফায়দা কোথায়? আর লাইপজিগ কি সত্যিই জার্মানির সবচেয়ে ঘৃণিত ক্লাব?
যেভাবে শুরু হয়েছিল লাইপজিগের যাত্রা
২০০৬ সালে মাতেশিটজ প্রথম যখন জার্মানিতে ক্লাব কেনার কথা চিন্তা করেন, তখন অনেকেই ভ্রু কুঁচকে ছিলেন। জার্মান ফুটবলের সংস্কৃতির সঙ্গে নাকি এটা যায় না। একটি বড় কোম্পানি ক্লাবে টাকা ঢালবে আর সেই ক্লাব তরতর করে এগিয়ে যাবে, এটা জার্মানির অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না। এফসি সাশেন লাইপজিগে প্রথম বিনিয়োগের চেষ্টা করেছিলেন মাতেশিটজ, কিন্তু জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি) সেটি হতে দেয়নি।
এরপর সেন্ট পলি, ১৮৬০ মিউনিখ এবং ফরচুনা ডুসেলডর্ফের মতো ক্লাবগুলোকে কেনার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখছিলেন মাতেশিটজ। জার্মান ফুটবল ভক্তরা তখন রীতিমত রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে রেড বুলের বিরুদ্ধে। তবে শেষ পর্যন্ত পূর্ব জার্মানির লাইপজিগ অঞ্চলের কোনো একটি ক্লাবকেই কেনার বিষয়ে মনস্থির করেন তিনি। এই অঞ্চলের কোনো ক্লাবই জার্মান ফুটবলে তেমন একটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। সেরা সাফল্য বলতে লোকোমোটিভ লাইপজিগ ১৯৮৭ সালে ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপের ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল। তবে সেখানে আয়াক্সের কাছে হেরে বাদ পড়তে হয়েছিল তাদের।
শেষ পর্যন্ত মাতেশিটজ পঞ্চম বিভাগের ক্লাব এসএসভি মার্ক্রানস্টাট নামের একটি ক্লাবকে কিনে নেন। ২০০৯-১০ মৌসুমে খেলার মাঠে নামার আগে আবারও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে লাইপজিগ। তবে এই বিষয়টি খুব একটা নতুন ছিল না রেড বুলের জন্য। ২০০৫ সালে অস্ট্রিয়া সালজবুর্গের খোলনলচে পাল্টে যখন সেটিকে রেড বুল সালজবুর্গ করা হয়েছিল, তখনও ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়েছিল ক্লাবটিকে। জার্মানিতে দীর্ঘ সময় ঘরে গবেষণা এবং আলোচনার পর একদম নিচ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল রেড বুলের লাইপজিগ।
২০১৬ সালে লাইপজিগ বুন্দেসলিগায় উত্তীর্ণ হওয়ার আগে ২২ বছর ধরে সেই শহরের কোনো দল জার্মানির মূল লিগে ছিল না। এমনকি ২০০৯ সালে এনার্জি কটবাস অবনমিত হওয়ার পর গোটা পূর্ব জার্মানি থেকেও কোনো দল বুন্দেসলিগায় খেলার সুযোগ পায়নি। আর তাই বুন্দেসলিগায় ওঠা লাইপজিগের জন্য তখন যেন অনেকটা স্বপ্নের দুয়ার খুলে যায়।
লাইপজিগের পত্রিকা ভোকসযেইতুংয়ের প্রধান প্রতিবেদক গুইদো শাফার খুব কাছ থেকে ক্লাবটির উত্থান দেখেছেন। তার মতে, “লাইপজিগের উত্থান শহরের জন্য ভালো, পূর্ব জার্মানির জন্য ভালো। দুইটি ক্লাব কেমি এবং লোক লাইপজিগ ছাড়া বাকি পুরো শহর লাইপজিগকে ভালোবাসে। আর এই শহরে লাইপজিগের মানের একটি ক্লাব থাকার মাহাত্ম্যও সবাই এখন বুঝতে পারছে। ক্লাবটির ফ্যানবেজও ক্রমেই বড় হচ্ছে। এখন তো প্রতিটি ম্যাচেই ৪০ হাজার টিকিট বিক্রি করে থাকে লাইপজিগ।”
তবে লাইপজিগ শহরের ভালোবাসা পেলেও জার্মানিতে এখনও লাইপজিগকে নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি। বিশেষ করে লাইপজিগের প্রতিপক্ষরা ক্লাবটির বিপক্ষে বেশ সোচ্চার। বুন্দেসলিগায় নিজেদের প্রথম মৌসুমেই প্রতিপক্ষ সমর্থকদের কড়া প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয়েছিল তাদের।
ডিএফবির নিয়ম অনুযায়ী জার্মান ক্লাবগুলোকে সবসময়ই ‘৫০+১’ আইন মেনে চলতে হবে। মানে ক্লাবের কর্তৃত্ব থাকতে হবে সমর্থকদের হাতে। তারাই ক্লাবের অধিকাংশ শেয়ারের মালিক হবে এবং টিকিটের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিজেদের মত তুলে ধরতে পারবে তারা। তবে প্রতিপক্ষ সমর্থকদের মতে ক্লাবে মাত্র ১৭ জন সদস্য রাখার মাধ্যমে এই আইনটির অপব্যবহার করেছে লাইপজিগ। আর সেই ১৭ জনের বেশিরভাগই আবার পরোক্ষভাবে লাইপজিগের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে দলের নামের সঙ্গে কোম্পানির নাম জুড়ে দেওয়া গেলেও জার্মানিতে সেটার অনুমতি নেই। তাই ক্লাবটির নাম আরবি লাইপজিগ হলেও এর পূর্ণ রুপ রেড বুল লাইপজিগ নয়, বরং রাসেনবলস্পোর্ট লাইপজিগ।
জার্মানির সবচেয়ে ঘৃণিত ক্লাব বলা হয় লাইপজিগকে। প্রতিপক্ষ সমর্থকেরা যেন সহ্যই করতে পারে না এই ক্লাবটিকে। প্রায়ই তাদের ম্যাচ বয়কট করে থাকে তারা, ২০১৭ সালে লাইপজিগ সমর্থকদের ওপর হামলা করে ২৮ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড আটকও হয়েছিল। শুধু সমর্থকরাই নন, প্রতিপক্ষ ক্লাবগুলোর কর্তা-ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমও লাইপজিগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দ্বিধা করেনি। লাইপজিগ যখন প্রথম বুন্দেসলিগায় উত্তীর্ণ হয়, ক্লাবটির ব্যাপারে তখন ডর্টমুন্ডের প্রধান নির্বাহী হানস জোয়াকিম ওয়াটজকে তখন বলেছিলেন, “রেড বুলের মুনাফার জন্যই ক্লাবটি তৈরি হয়েছে।” কয়েক মাস আগেই জার্মানির অন্যতম শীর্ষ ফুটবল ম্যাগাজিন ‘১১ ফ্রয়েন্ড’ বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে তাদের ম্যাচ কাভার করতে অস্বীকৃতি জানায়।
তবে শাফারের বিশ্বাস, নাগেলসমানের নতুন ধারার ফুটবল জার্মানদের হৃদয় জয় করে নেবে। তাদের আক্রমণাত্মক, হাই প্রেসিং খেলার ধরন লোকজনকে লাইপজিগের দিকে টানবে বলে মনে করেন তিনি, “কিছু আন্দোলন হয়েছে, বিশেষভাবে ডর্টমুন্ড, ইউনিয়ন বার্লিন এবং অসবার্গের সমর্থকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে জার্মানি এবং লাইপজিগের জন্য ইউরোপে শ্রদ্ধা বেড়েই চলেছে। লাইপজিগ এবং জার্মান ফুটবলের জন্য এটা খুবই ভালো খবর।”
রালফ রাংনিকের স্বপ্নের ঘর
জার্মান লিগ পিরামিড যেন অনেকটা এক ঝটকায় পাড়ি দিয়েছে লাইপজিগ। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৮ বছরের মাঝেই চার ধাপ পেরিয়ে বুন্দেসলিগায় পৌঁছে যায় তারা। এর আগেও অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল সহ বেশ কয়েকটি দেশে ফুটবলে বিনিয়োগ করেছে রেড বুল। তবে জার্মানিতে এমন সাফল্য রেডবুলের ফুটবল সাম্রাজ্যের জন্য একটি বড় অর্জনই বটে।
“২০১২ সালে রাংনিককে দিয়েই সবকিছু শুরু হয়েছিল”-- যোগ করলেন শাফার। রেড বুলের হেড অফ গ্লোবাল ফুটবল এবং সাবেক লিভারপুল ম্যানেজার জেরার্ড হুলিয়ের ২০১২ সালে সাবেক হফেনহাইম এবং শালকে ম্যানেজার রালফ রাংনিককে ক্লাবে নিয়ে আসেন। লাইপজিগ এবং সালজবুর্গের স্পোর্টিং ডিরেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। তার অধীনে জার্মান ফুটবল পিরামিডের একের পর এক ধাপ পার হতে থাকে লাইপজিগ। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বিভাগ থেকে বুন্দেসলিগায় ওঠার মৌসুমে তিনি নিজেই ডাগআউটে দাঁড়িয়েছিলেন।
শাফারের মতে, “রাংনিক হচ্ছে এই ক্লাবের মূল স্বপ্নদ্রষ্টা। সে দারুণ একজন মানুষ, সে নিজেই সবকিছু করেছে। সে লাইপজিগে আসার পর থেকেই সবকিছু বদলে যায়। তার আমলে ক্লাবে তারুণ্য ছেয়ে যায়, আরও গতিময় হয় সবকিছু। আজ পর্যন্ত তার দর্শনেই এগিয়ে যাচ্ছে লাইপজিগ।”
নাগেলসমানের হাতে ক্লাবের দায়িত্ব তুলে দেওয়ার আগে দুইবার ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্বও পালন করেছিলেন রাংনিক। অবশেষে গত মাসে রেড বুল প্রজেক্টের গ্লোবাল স্পোর্ট এবং ডেভেলপমেন্টের প্রধানের পদ ছাড়েন তিনি। তার উত্তরসূরি হিসেবে ৬২ বছর বয়সী রাংনিক বেছে নিয়েছেন মার্কাস ক্রোশেকে। রেড বুল প্রজেক্টে তার কাজের ফলে ফুটবল বিশ্বে রাংনিকের সুখ্যাতি বেড়ে যায় অনেক। এসি মিলানও ক্লাবের সংস্কারের জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবছিল, যদিও সেটি শেষ পর্যন্ত আর হয়নি।
লাইপজিগের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখাই এখন নতুন স্পোর্টিং ডিরেক্টর ক্রোশের একমাত্র লক্ষ্য, “অন্যান্য ক্লাবের মতো আমাদের স্পনসরের কাছ থেকে অনেক সমর্থন পাই আমরা, এটা দারুণ বিষয়। আমরা সবসময়ই রেড বুলের সঙ্গে আমাদের ভাবনা ভাগাভাগি করি, নিউইয়র্ক এবং ব্রাজিলের ক্লাবের সঙ্গেও মিলে মিলে মিশে পরিকল্পনা করি আমরা। আমরা বিশ্বাস করি, সামনের দিনগুলোতে আমরা লাইপজিগের একটি নিজস্ব পরিচয় গড়ে তুলতে পারব।
আগামীর তারকাদের সূতিকাগার
লাইপজিগের জন্য খেলোয়াড় সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ফর্মুলা মেনে চলতেন রাংনিক। ২৩ বা তার কম বয়সী খেলোয়াড়দের স্কাউট করে দলে টানতেন তিনি। আর তাদের ঠিকঠাক পরিচর্যার মাধ্যমে অসাধারণ ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার কাজটা করত লাইপজিগ। ক্রোশের কথাতেও রাংনিকের সেই দর্শনই উঠে আসল, “আমরা তরুণ, প্রতিভাবান এবং খেলতে মুখিয়ে আছে এমন ফুটবলারদেরই খুঁজি। আমরা বড় তারকদের আনতে একগাদা অর্থ ব্যয় করতে রাজি না, আমরা বরং আগামীর তারকা তৈরি করতে চাই।”
২৭ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে নিজেদেরই অস্ট্রিয়ান ক্লাব সালজবুর্গ থেকে নাবি কেইতাকে দলে টেনেছিল লাইপজিগ। এটিই এখন পর্যন্ত ক্লাবের সবচেয়ে দামী সাইনিং। ২০১৮ সালে ২১ মিলিয়ন পাউন্ড লাভে তাকে লিভারপুলের কাছে ছেড়ে দেয় লাইপজিগ। এছাড়া সদ্য চেলসিতে যোগ দেওয়া তিমো ভের্নার, দলটির সুইডিশ ফরোয়ার্ড এমিল ফর্সবার্গ, মিডফিল্ডার মার্সেল সাবিতজারদের রাংনিকের ফর্মুলাতেই খুঁজে বের করেছে লাইপজিগ।
আর লাইপজিগের খেলোয়াড় বেচা-কেনার এই পদ্ধতিতে ইউরোপে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। খেলোয়াড় এবং ক্লাব দুই পক্ষের জন্যই এটি অত্যন্ত লাভজনক বলে মনে করেন কেতেরেত ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী জেমস পাওয়েল, “রেড বুলের নিজেদের ক্লাবগুলোর মাঝে খেলোয়াড় আদান-প্রদানের মাধ্যমে এর মালিক বেশ লাভবান হচ্ছেন।”
রেড বুলের নিজেদের ক্লাবগুলোর মাঝে খেলোয়াড় আদান-প্রদানের প্রক্রিয়া বেশ সহজ। যেমন মিডফিল্ডার হানস উলফ এবং আমাদু হায়দারাকে গত মৌসুমে খেলোয়াড় অদল-বদলের চুক্তির মাধদমে সালজবুর্গ থেকে নিয়ে এসেছে লাইপজিগ। কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোলটি করা টাইলার অ্যাডামসকেও নিউইয়র্ক রেড বুলস থেকে নিয়ে এসেছিল লাইপজিগ। একইভাবে দলের তারকা ডিফেন্ডার দায়ত উপামেকানোও সালজবুর্গের একটি ফিডার ক্লাব থেকে উঠে এসেছিলেন। অনেকেই ক্লাবের এই প্রক্রিয়াকে সিটি ফুটবল গ্রুপের কাঠামোর সঙ্গে তুলনা করেন। ম্যানচেস্টার সিটিতে খেলোয়াড় সরবরাহ করতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কিছু ফিডার ক্লাব রয়েছে সিটির। একইভাবে লাইপজিগের জন্যও রেড বুল অনেকগুলো ফিডার ক্লাব তৈরি করেছে, যারা লাইপজিগকে তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের যোগান দেয়। আর এভাবেই খুব বেশি বিনিয়োগ ছাড়াই ইউরোপের অন্যতম সেরা দল গড়ে তুলেছে মাত্র ১১ বছর বয়সী ক্লাবটি।
“আমরা এরই মধ্যে প্রমাণ করেছি যে, খেলোয়াড়দের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে আমরা তাদের ক্যারিয়ারের পরবর্তী ধাপে পৌঁছাতে সাহায্য করি। এখনকার সময়ে ফুটবলে সফল হতে হলে ভালো স্কাউটিং সিস্টেম খুবই জরুরী”-- যোগ করেন ক্রোশে।
লাইপজিগের উত্থানে রেড বুলের লাভটা কোথায়?
গত বছর ফোর্বসের প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ১০০ ব্র্যান্ডের তালিকায় ৭১-তম স্থানে ছিল রেড বুল। কোম্পানিটির ব্র্যান্ড মূল্য ৭.৬ বিলিয়ন পাউন্ডের চেয়েও বেশি। প্রতি বছর বিশ্বের ১৭১ টি দেশে প্রায় ৭০০ কোটির মতো শক্তিবর্ধক পানীয়ের ক্যান বিক্রি করে রেড বুল। তাহলে ফুটবলে রেড বুলের স্বার্থটা কোথায়?
মূলত তরুণ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতেই ফুটবলে বিনিয়োগ করেছে রেড বুল। রেড বুলের প্রতিটি ক্লাবের পরতে পরতে ব্র্যান্ডটির ছাপ লক্ষ্য করা যায়। আর এর মাধ্যমেই বৈশ্বিক পরিচিতি আরও বৃদ্ধি করার আশাতেই ফুটবলে বিনিয়োগ করেছে রেড বুল। ফর্মুলা ওয়ান, ইস্পোর্টস এবং এক্সট্রিম স্পোর্টসেও এজন্যই বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আর সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থ মাথায় রেখে ফুটবলে বিনিয়োগ করলেও রেড বুল প্রজেক্টের বিভিন্ন ক্লাব এখন বড় ধরনের সাফল্য পাচ্ছে। যা ব্র্যান্ড হিসেবে রেড বুলের ইমেজকে আরও শক্তিশালী করছে।
লাইপজিগের ভবিষ্যৎ কী?
ক্রোশের বক্তব্য অনুযায়ী, গত মৌসুমের শুরুতে আগামী মৌসুমে আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ক্লাবটি। জুনে বুন্দেসলিগা পুনরায় শুরু হওয়ার পর সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছে ক্লাবটি। লিগ টেবিলে তাদের সামনে ছিল কেবল চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ এবং বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।
আর এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে লাইপজিগের অগ্রযাত্রাকে ক্লাবের সঠিক পথে থাকার প্রমাণ হিসেবে দেখছেন ক্রোশে, “আমাদের তরুণ দলটির লক্ষ্য অনেক বড়। আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। সাফল্য সহজে আসে না। আমরা নকআউট পর্বে উঠতে চেয়েছিলাম এবং আমরা সেই লক্ষ্যে সফল হয়েছি। আমাদের ক্লাবের উন্নতিতে সেটা একটা বড় পদক্ষেপ ছিল। আমি এটা বলব না যে, আমরা যেভাবে কাজ করার চেষ্টা করছি সেটাই সেরা পদ্ধতি। অন্য আরও অনেক ফর্মুলাতেই সাফল্য পাওয়া যায়। তবে আমরা আমাদের পরিকল্পনায় বিশ্বাস করি এবং আশা করি সামনে আরও অনেক সাফল্য আমাদের অপেক্ষায় আছে।”