লিওঁকে শাস্তি দিয়ে ৭ বছর পর ফাইনালে বায়ার্ন
ফুলটাইম
লিওঁ ০-৩ বায়ার্ন মিউনিখ
ম্যানুয়েল নয়্যার এগিয়ে আসার পর কঠিন অ্যাঙ্গেলে বল না নিয়ে সোজাসুজি মেরে দিলে হত? কার্ল একাম্বির শট বারপোস্টে লেগে ফেরত না আসলে কী বদলে যেতে পারত ভাগ্য? লিওঁ ম্যাচ শেষে এই হিসাব কষবে। আরও কিছুদিন এসবনিয়েই হা-হুতাশ করবে। কী হলে, কী হতে পারত- এসব ভাবা অবশ্য বায়ার্ন মিউনিখের কাজ নয়। তারা সুযোগ পেয়েছে, তারা কাজে লাগিয়েছে। আগের ম্যাচে বার্সেলোনাকে অপদস্ত করার পর লিওঁ সঙ্গে বায়ার্নের একচ্ছত্র আধিপত্যই দেখানোর কথা ছিল। সেটা হয়নি, সেমিফাইনাল হয়েছে সেমিফাইনালের মতোই। তাতে অভিজ্ঞতা পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। নিখুঁত দলই উঠেছে ফাইনালে। আর আফসোসের সাগরে ভেসেছে লিওঁ।
ফরাসি ফাইনালের সুরভি ছড়ানোর স্বপ্ন তাই পূরণ হয়নি লিওঁর। বায়ার্নই এখন রবিবারের ফাইনালে পিএসজির প্রতিপক্ষ। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর আরও চারবার সেমিফাইনালে উঠেছিল বায়ার্ন। এই সাত বছরে একবারও ফাইনালে ওঠা হয়নি বাভারিয়ানদের।
চেলসি আর বার্সাকে উড়িয়ে দেওয়ার পর বায়ার্নের গায়ে টুর্নামেন্ট ফেভারিটের তকমা সেঁটেছে। লিওঁ সেই তুলনায় দুর্বল দল। বায়ার্নের ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার কথা ছিল। সেটা হওয়ার আগে লিসবনে উলটো তেজ দেখাল সেই লিওঁ।
হাই ডিফেন্সিভ লাইন কীভাবে জয় করতে হয় সেই টোটকা বের করে ফেলেছিল লিওঁ। তাও ম্যাচের ৪ মিনিটে। বায়ার্নের পাস ইন্টারসেপ্ট করে মিডফিল্ড থেকে দেওয়া থ্রু পাস মেমফিস ডিপাইকে নয়্যারের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে ফেলে দিয়েছিল। ডিপাইয়ের হাতে সময় ছিল অনেক, এগিয়ে আসা নয়্যারকে কোনাকুণি হারাতে গিয়ে তিনি মারলেন সাইডনেটে। আত্মবিশ্বাসী শুরুর পর আরও দুইবার বায়ার্নের বক্সের ভেতর দারুণ ক্রস ফেলল লিওঁ। কিন্তু সময়মতো কাজের লোকটা ছিলেন না জায়গামতো। ১৭ মিনিটে একাম্বি অবশ্য জায়গায়মতোই থাকলেন, বক্সের ভেতর থেকে যে শট মারলেন সেটা নয়্যারকেও হারাল। কিন্তু কাছের বারপোস্টে লেগে বেরিয়ে গেল বাইরে দিয়ে।
ওই পর্যন্ত ম্যাচে বায়ার্নের আক্রমণ ছিল একটি। লিওন গোরেতস্কার দুর্বল প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন লিওঁর গোলরক্ষক লোপেজ। হানসি ফ্লিক্সের আগের ম্যাচের একাদশের ওপর ভরসা না রাখার কারণ ছিল না। ৪-২-৩-১ এই খেলছিল বায়ার্ন। তবে তখনও পর্যন্ত রুডি গার্সিয়ার ৩-৫-২ যেটা রক্ষণে আবার ৫-৩-২ হয়ে যাচ্ছিল- সেই ফরমেশনই এগিয়ে থাকছিল মাঠে।
বড় দল আর ‘ছোট’ দলের ফারাক প্রমাণিত হয়েছে এরপর ম্যাচে। জশুয়া কিমিখের লং পাস ডান প্রান্তে পেয়েছিলেন সার্জ গ্যানাব্রি। তখনও গোলের ধারে কাছে ছিলেন না তিনি। কাট করলেন, তিনজন ডিফেন্ডার পেছনে ফেলে বক্সের সামনে গিয়ে বাম পায়ে করলেন শট। গ্যানাব্রির ওই এক মুহুর্তের জাদুতে বায়ার্ন স্বস্তিও ফিরে পেল। ১৭ মিনিটে লিওঁ বল লাগালো বারপোস্টে, ১৮ মিনিটে অন্যপ্রান্তে এগিয়ে গেল বায়ার্ন।
এই দুইদল সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ২০১০ সালেও। সেবার প্রথম লেগে আরিয়েন রোবেন করেছিলেন প্রথম গোল। রোবেন-রিবেরির কেউ এখন নেই। কিন্তি গ্যানাব্রির ওই গোল মনে করিয়ে দিল রোবেনকেই।
লিওঁ এরপর একরকম হারিয়েই গেল। বায়ার্ন জেঁকে বসল অনুমিতভাবেই। ৩৩ মিনিটে আবার আবার গ্যানাব্রির গোল। এবার ইভান পেরিসিচ বাম প্রান্ত থেকে নিচু ক্রস করলেন, রবার্ট লেভানডফস্কি স্লাইড মেরে বল ঢোকাতে গিয়ে মিস করে গেলেন, লোপেজও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বল ঠেকাতে। কিনতি লিওঁ গোলরক্ষকের হাত ফস্কে সেই বল বেরিয়ে যাওয়ার পর গোলের সামনে থাকা গ্যানাব্রি শুধু বাকি কাজ সারলেন এক টাচে।
বিরতির আগ পর্যন্ত বায়ার্ন ব্যবধান বাড়াতে পারত আরও। লেভানডফস্কিই মিস করে গেলেন গোটা দুই সুযোগ। বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার ম্যাচের একেবারে শেষদিকে তৃতীয় গোলটি করার আগে আরও কয়েকবারই হতাশ হয়েছিলেন। এর মাঝের সময়টায় অবশ্য লিওঁ লড়াইও থামায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেম একাম্বি। ৫৪ মিনিটে তার সেই চেষ্টা আটকে গেছে সামনে পাহাড় হয়ে দাঁড়ানো নয়্যারের সেভে।
ততোক্ষণে ডিপাইকে তুলে নিয়েছেন রুডিগার। সিটির বিপক্ষে জোড়া গোল করা মুসা ডেম্বেলেও নেমেছেন মাঠে। কিন্তু দুই গোলের লিডটা টপকানো অসম্ভবই ছিল প্রায় লিওঁর বিপক্ষে। তবে লেভানডফস্কি ৮৮ মিনিটে কর্নার থেকে হেডে গোল করার পর লড়াইয়ের সেই স্পৃহাটুকুও হারিয়ে ফেলতে হয় লিওঁকে।
লেভানডফস্কি এই নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ৯ ম্যাচেই গোল করলেন। এই আসরে তার ১৫ গোল করা হয়ে গেছে। গ্যানাব্রিও ৯ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল। ফিলিপ কৌতিনহো বদলি নেমে আরেকবার গোল করেছিলেন, তবে অফসাইডে বাতিল হয়েছে সেটি। বেঞ্জামিন পাভার্দও নেমেছিলেন চোট থেকে সেরে উঠে। পুরো বায়ার্নই ছন্দে। আরও একবার ট্রেবল জয়ের হাতছানি তাদের সামনে। তবে পিএসজিকে একটা রাস্তা দেখিয়ে গেছে লিওঁ। বায়ার্নের হাইলাইন ভাঙার মন্ত্রটা কিলিয়ান এমবাপে, নেইমাররা রপ্ত করতে পারলে বায়ার্নকে ভোগান্তিতেই পড়ার কথা।
তবে এই হাইলাইন তো বায়ার্নের খেলার অংশই। জেনেশুনেই ওইটুকু ঝুঁকি নেয় ফ্লিকের দল। পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাই নিজদের ওপর ভরসা না রাখার কোনো কারণই নেই বায়ার্নের জন্য। ফাইনালটা যে উপভোগ্য হবে, তা তো এতোক্ষনে বুঝে যাওয়ার কথা আপনারও!
লিওঁ
লোপেস, মার্সেলো, ডিনায়ের, মার্সাল, দুবইস, কাকেরেত, গুইমারেস, আওয়ার, কর্নেট, একাম্বি, ডিপাই
বায়ার্ন মিউনিখ
নয়্যার, কিমিখ, বোয়াটেং, আলাবা, ডেভিস, থিয়াগো, গোরেতস্কা, কোমান, মুলার, গ্যানাব্রি, লেভানডফস্কি
ম্যাচ প্রিভিউ পড়ুন