রোড টু ফাইনাল : কেমন ছিল পিএসজি এবং বায়ার্নের ফাইনাল যাত্রা?
পিএসজি এবং বায়ার্ন মিউনিখ। লিসবনে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে এবার লড়বে ফ্রান্স এবং জার্মানির চ্যাম্পিয়ন। ঘরোয়া লিগে দুই দলই দোর্দণ্ড প্রতাপে খেলে আসছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্নের সাফল্য বলার মতো, পাঁচবার এই টুর্নামেন্টের শিরোপা ঘরে তুলেছে ক্লাবটি। কিন্তু এই মানদণ্ডে পিএসজির অবস্থান অন্য মেরুতে। ঘরোয়া লিগে স্টিমরোলার চালালেও ইউরোপে পিছলে যাওয়ার পুরনো অভ্যাস আছে তাদের। ক্লাবের ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ফাইনালের দেখা পেয়েছে প্যারিসের ক্লাবটি। আর এবারের আসরে দুই দলের পারফরম্যান্স দেখে কমবেশি সবাই একমত, সেরা দুটি দলই এসেছে ফাইনালে।
পিএসজি : স্বচ্ছন্দেই পেরিয়েছে প্রতিটি ধাপ
গত তিন মৌসুমে শেষ ষোল থেকে ছিটকে পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল পিএসজির। তারায় ঠাসা দল নিয়েও বারবার খালি হাতে ফিরতে হয়েছে দলটিকে। তবে এবার যেন পণ করে এসেছেন নেইমাররা, শিরোপা নিয়েই ঘরে ফিরবেন। তাই তো গ্রুপ পর্ব থেকেই কঠিন সব প্রতিপক্ষকে তুচ্ছ করে নেইমার-এমবাপেদের প্যারিস ফাইনাল পর্যন্ত উঠেছে। শিরোপা থেকে তারা এখন মোটে ৯০ মিনিটের দূরত্বে রয়েছে।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ড্র-তে এবার রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে গ্রুপ এ-তে জায়গা হয়েছিল পিএসজির। তবে গ্রুপ পর্বে চ্যাম্পিয়নস লিগের অভিজাত ক্লাবটিকে পাত্তাই দেয়নি তারা। প্রথমে ঘরের মাঠে আনহেল ডি মারিয়ার জোড়া গোলে চড়ে রিয়াল মাদ্রিদকে ৩-০ গোলে হারায় পিএসজি। আর মাদ্রিদের মাঠে গিয়ে শেষ দশ মিনিটে দুই গোল করে ম্যাচ ড্র করে ফিরেছিল তারা। গ্রুপের অন্য দুই প্রতিপক্ষ টার্কিশ ক্লাব গ্যালাতাসারে এবং বেলজিয়ান ক্লাব ব্রুজকে হোম এবং অ্যাওয়ে ম্যাচ মিলিয়ে ছয়টি করে গোল দিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই শেষ ষোলয় পা রাখে পিএসজি।
‘অপয়া’ শেষ ষোলয় এরলিং ব্রুট হালান্ড-জেডন সানচোদের বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের মুখোমুখি হয়েছিল পিএসজি। উড়তে থাকা ডর্টমুন্ডের কাছে প্রথম লেগে ২-১ গোলে হেরে আরেকবার স্বপ্নভঙ্গের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল পিএসজি। তবে প্যারিসের পার্ক ডি প্রিন্সে দ্বিতীয় লেগে আর ভেঙে পড়েনি পিএসজি। প্রথমার্ধে নেইমার এবং হুয়ান বের্নাতের দুই গোলে ম্যাচ জিতে নেয় পিএসজি। অ্যাগ্রিগেটে ৩-২ গোলে জিতে তিন মৌসুম পর কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় পিএসজি।
কোয়ার্টার এবং সেমিফাইনালে যথাক্রমে আটালান্টা এবং লাইপজিগের মুখোমুখি হয়েছিল পিএসজি। ইউরোপিয়ান জায়ান্ট না হলেও দুটি দলই এবারের টুর্নামেন্টে চমক হয়ে এসেছিল। কিন্তু এবারের পিএসজি যে আর আগের মতো নেই। কোয়ার্টারে শেষ মুহূর্তের দুই গোলে আটালান্টার হৃদয় ভেঙেছিল পিএসজি, আর সেমিতে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ-টটেনহামকে বিদায় করে দেওয়া লাইপজিগকে মাটিতে নামিয়ে এনেছিলেন নেইমাররা। তারকাবহুল আক্রমণভাগ বেশি আলোচনায় থাকলেও এবারের আসরে পিএসজির রক্ষণ আলো কেড়েছে। ফাইনালের আগ পর্যন্ত ১০ ম্যাচে মাত্র ৫ বার পিএসজির জালে বল প্রবেশ করেছে।
আর ফাইনালে পিএসজির সামনে বাধা আরেক জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ। ২৪ আগস্ট প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে হলে পিএসজিকে অপরাজেয় জার্মানদের জয়রথ রুখে দিতে হবে।
বায়ার্ন মিউনিখ : দুর্দান্ত বায়ার্নের সামনে দাড়াতে পারেনি কেউ
সকাল দেখলেই দিনের বাকিটা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় বলে একটা কথা আছে। বায়ার্নের এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ যাত্রার কথাটা হুবহু মিলে যায়। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচেই গতবারের রানার্স আপ টটেনহামের মাঠে গিয়ে ৭ গোল দিয়ে আসে বায়ার্ন। এমনিতেও সমৃদ্ধ অতীতের কারণে ফেবারিটের তকমা পেতে বেশি কিছু করতে হয় না বায়ার্নকে। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই তাদের অন্যতম ফেবারিট বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে টটেনহামের বিপক্ষে সেই ম্যাচের পর আর কোনো সন্দেহ ছিল না, এবারের আসরে বায়ার্নের সামনে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো খুব কম দলই আছে।
আদতে হয়েছেও তাই। রেকর্ড ২৪ গোল দিয়ে গ্রুপ পর্বের ছয় ম্যাচের সবগুলো জিতেছে হানসি ফ্লিকের দল। এরপরও শেষ ষোলতেও অব্যাহত হত থাকে টমাস মুলারদের জয়রথ। দুই লেগ মিলিয়ে ফ্র্যাংক ল্যাম্পার্ডের চেলসিকে ৭ গোল দেয় বায়ার্ন। কোয়ার্টার ফাইনালে লিওনেল মেসির বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগে নকআউট পর্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হার উপহার দেয় জার্মান ক্লাবটি। ৮-২ গোলে বার্সেলোনাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে তারা।
সেমিফাইনালে ‘জায়ান্ট কিলার’ লিওঁ-কেও পাত্তা দেয়নি তারা। জুভেন্টাস এবং ম্যানচেস্টার সিটিকে বিদায় করে দেওয়া লিওঁ-কে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বায়ার্ন। ১০ ম্যাচের সবকটিতে জয় নিয়েই ফাইনালে এসেছে বায়ার্ন। রবার্ট লেভানডফস্কি-সার্জ গ্যানাব্রিদের আক্রমণভাগ ১০ ম্যাচে ৪২ বার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছে। ১৫ গোল করে এরই মধ্যে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন বায়ার্নের গোলমেশিন লেভানডফস্কি। ফাইনালে আর দুই গোল করলেই এক মৌসুমে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সর্বোচ্চ ১৭ গোলের রেকর্ড ছোঁবেন তিনি, আর হ্যাটট্রিক করলে ছাড়িয়ে যাবেন তাকে।