পঞ্চপান্ডবের দুঃখ ভোলার দিন?
মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, তামিম ইকবাল - বাংলাদেশকে কাঁধে নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক দিন থেকেই। এই সময়ে কত আনন্দ-হাসি-কান্নার সাক্ষী হয়েছেন, কত ঝড় দেখেছেন। কিন্তু একটা গোপন ব্যথা এই পাঁচজনই বয়ে বেড়াচ্ছেন সন্তর্পণে। ফাইনালে দুই বার স্বপ্নভঙ্গের বেদনার অভিজ্ঞতা তো বাংলাদেশের এই পাঁচজনেরই আছে!
চার বছর আগের ওই ফাইনাল তো আসলে বাংলাদেশের সবার মনেই গোপন একটা ক্ষতের মতো হয়ে আছে। শেষ ওভারে দরকার ছিল ৯ রানের। কিন্তু মাত্র ২ মাত্র রানের জন্য ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় “এত কাছে তবু এত দূরের” গল্প। অন্য সবাই পারলেও মাহমুদউল্লাহ কি কখনো ভুলতে পারবেন? প্রথম বলে দুই রান নিতে পারলে তো ম্যাচের গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। শেষ বলে শাহাদাতকে স্ট্রাইক না দিয়ে নিজে থাকলেও তো গোটা বাংলাদেশকে হয়তো ডুবে যেতে হতো না অনন্ত বিষাদে।
না, সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, তামিমদের কেউই তো আসলে ভুলতে পারবেন না। বোলিংয়ে অমন আশা জাগানিয়া শুরুর পরও বাংলাদেশ পা হড়কাবে, সেটা কে ভেবেছিল? গ্রুপ পর্বে যে পাকিস্তান কাঁটা হয়ে ছিল, কে ভেবেছিল ফাইনালে সেই পাকিস্তানেই পা কাটবে? স্বপ্নের একটা টুর্নামেন্ট কাটানো সাকিব নিশ্চয় ভাবেননি। ৩৬ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর ৬৮ রানের একটা মহামূল্যবান ইনিংস খেলেছিলেন। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের পুরস্কারটাও তো বিষম একটা বোঝাই হয়ে ছিল তাঁর জন্য।
মুশফিকই বা সান্ত্বনা খুঁজবেন কী করে ? মাত্র ১০ রানে ওই সময় উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে না আসলে তো আক্ষেপে পুড়তে হয় না। মাশরাফিও কি কম চেষ্টা করেছিলেন? ৯ বলে ১৮ রান করে তো বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন ম্যাশই। তামিমের ৬০ রানও দিন শেষে সান্ত্বনাই হয়ে থেকেছে শুধু।
স্বপ্নভঙ্গের বেদনা কেমন, সেদিন জেনেছিল গোটা বাংলাদেশ। সাকিবের বুকে মাথা গুজে কাঁদছেন মুশফিক - টিভি পর্দার দৃশ্যটা কাঁদিয়েছে গোটা বাংলাদেশকে। কিন্তু ওই পাঁচজন জানেন, দুঃখের দহন-করুণ রোদন কীভাবে তিন বছর ধরে তিলে তিলে ক্ষয় করেছে তাঁদের।
১৬ জানুয়ারি, ২০০৯। প্রথমবারের মতো কোনো ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেট সেদিন পুরোপুরিই বোলারদের মৃগয়া, আর ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যখন শুরু থেকেই আসা যাওয়ার মিছিলে, শিরোপার বাতিঘরটা একটু একটু করে মিলিয়ে যাচ্ছিল দূরে। তামিম, মুশফিক, সাকিবের ব্যাট সেদিন হেসে ওঠেনি, মাহমুদউল্লাহই অকূল পাথারে যা একটু বৈঠা ধরেছিলেন।
কিন্তু বোলিংয়ের প্রথম ছয় ওভারেই শিরোপার রেখা হঠাৎ দূর দিগন্ত থেকে চলে এলো হাতছানি দেওয়া দূরত্বে। প্রথম ছয় ওভারেই শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট নেই, বাংলাদেশ তখন বুঁদ লঙ্কাবধের আনন্দে। শ্রীলঙ্কার সামনে ১৫২ রান তখন মনে হচ্ছিল সিংহল সমুদ্রে মিলিয়ে যাওয়া কোনো ঢেউ। সাঙ্গাকারা নাবিক হয়ে পথ দেখাচ্ছিলেন একাই। এক ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে আবার স্টেডিয়ামে গর্জন তোলেন সাকিব। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন রাবণ হয়ে গেলেন মাহারুফ-মুরালিধরন। কে ভেবেছিল, ব্যাট হাতে আনাড়ি মুরালিধরন সেদিন তাঁর জীবনের সেরা ইনিংস খেলে ফেলবেন? সাকিব, মাশরাফি বল হাতে দারুণ করেও শেষ পর্যন্ত ডুবেছিলেন হতাশায়।
কাল আরেকটি ফাইনাল ফিরে এসেছে সেই মিরপুরে। যে অদৃশ্য বোঝাটা দীর্ঘদিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন, সেটির ভারমুক্তির সুযোগ। দিনে দিনে যে দেনা জমতে জমতে পাহাড়সম হয়েছে, সেটা কি কাল সুদেআসলে তুলে নিতে পারবেন তাঁরা?