যেভাবে ডিন জোনসের ১০ মিলিয়ন ডলার বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন এল্টন জন
ডিন জোনস। এলটন জন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ডেভিড বেকহ্যামের বিয়ে। আর ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যদি যোগসূত্র খুঁজে না পান, তাহলে এই গল্পটা আপনাকে সহায়তা করবে।
সদ্যপ্রয়াত সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জোনস খেলার ছাড়ার পর কোচিং ও ধারাভাষ্যের সঙ্গে করেছিলেন ব্যবসাও। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ছিল তার। ১৯৯৯ সালে সে প্রতিষ্ঠান থেকেই ১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার প্রায় বিনিয়োগ করেও ফেলেছিলেন তিনি, যেটি করলে বড়সড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাকে ‘বাঁচিয়ে’ দিয়েছিলেন জন।
ফিফার বিশ্ব একাদশকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলানো, অস্ট্রেলিয়ার রক ব্যান্ড ‘ইন এক্সেস’ বা আইএনএক্সএস-কে মঞ্চে ফেরানোর মতো সফল ইভেন্ট আয়োজন করেছিল তার কোম্পানি। মাইকেল হাচেন্স মারা যাওয়ার পর সিডনি অলিম্পিককে সামনে রেখে মঞ্চে ফিরেছিলেন ‘ইন এক্সেস’।
দুই ইভেন্টই ব্যবসাসফল হয়েছিল, তবে জোনসের রীতিমতো ঘরবাড়ি হারিয়ে ফেলার অবস্থাও হয়েছিল এর আগে। ঋণ করেছিলেন নিজের বাড়ির ওপর, ‘ইন এক্সেস’ শেষ মুহুর্তে ইভেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়েও নিতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য লাভবান হয়েছিলেন জোনস। তবে এমন ঝুঁকি আর নেবেন না, ভেবেছিলেন এমন।
১৯৯৯ সালে ট্রেবলজয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আগ্রহ দেখিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া সফরের। জোনস আবারও আগ্রহী হলেন। চুক্তি করেও ফেলেছিলেন প্রায়, তবে এর আগে একবার দেখা করতে গিয়েছিলেন দীর্ঘদিনের বন্ধু এলটন জনের সঙ্গে।
“বললাম, ‘আমি বলি কী, এটা কি কাল করা যায়? আজ একটা অ্যাপয়েনমেন্ট আছে আমার”, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে আলোচনার সময় তাদেরকে জানিয়েছিলেন জোনস।
জুনে শেন ওয়াটসনের ‘লেসন লার্নট উইথ দ্য গ্রেটস’ পডকাস্টে ঘটনাটা খুলে বলেছিলেন তিনি।
“জুলাইয়ে জনকে তাদের (ম্যান ইউনাইটেড) আসার তারিখটা বলেছিলাম। সে বলল, ‘ডিন, আমার একটা চুক্তি আছে, (ফলে কিছু বলতে পারবো না)। আমি বরং পাশের রুমে যাই, তুমি আমার ডেস্কে একবার চোখ বুলাও।”
“ডেস্কে গিয়ে দেখি বেকহ্যামের বিয়েতে জনকে বাজানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আর এর সময়ও একই (ম্যান ইউনাইটেডের আসার সময়েই)।”
“আমি বুঝলাম, তার মানে অর্ধেক দল বেকহ্যামের বিয়েতেই যাবে!”
জোনস এরপর আর সেই চুক্তি করেননি, আরেক ব্যবসায়ীকে সে সত্ত্ব দিয়ে দিয়েছিলেন। জন তাকে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, সে অনুযায়ী ঠিকই ম্যান ইউনাইটেডের অনেক তারকাই সেবার অস্ট্রেলিয়া যাননি।
সিডনি ও মেলবোর্নের দুটি ম্যাচে বেকহ্যাম ছাড়াও অনুপস্থিত ছিলেন পল স্কোলস রয় কিন, গ্যারি নেভিল, এমনকি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনও। তবে তারা যে অস্ট্রেলিয়া যাবেন না, সে ব্যাপারটা জোনসের কাছে রীতিমতো অস্বীকার করেছিলেন ইউনাইটেড ম্যানেজমেন্ট। তবে বিজ্ঞাপনে ঠিকই নাম ছিল সেসব তারকার।
“অর্ধেক দল আসেইনি! আমি ঘর, বাড়ি-- সবই হারিয়ে ফেলতে পারতাম সেবার। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায় মজা আছে, তবে সবই আসলে কার কতোবড় নেটওয়ার্ক, সেটির ওপর।”
এমনিতে ক্রিকেটভক্ত জনের সঙ্গে জোনসের বন্ধুতা বেশ আগে থেকেই। জোনস মারা যাওয়ার পর ব্রেট লির সঙ্গে একটা ছবি পোস্ট করে জন লিখেছিলেন, “গত সপ্তাহেই ডিন জোনস ও ব্রেট লির মুম্বাইয়ে তোলা দারুণ এই ছবিটা পেয়েছিলাম আমি। ডিন চলে গেল। জীবন বড়ই নিষ্ঠুর। দারুণ একজন ক্রিকেটার, অসাধারণ একজন বাবা ছিল সে।”