ইব্রাহিমোভিচের দুই গোলে ৪ বছর পর ডার্বি জিতল মিলান
ফুলটাইম
এসি মিলান ২-১ ইন্টার মিলান
ফাঁকা মাঠেও ম্যাচ শেষে গোলবারের একপাশে গিয়ে লাফিয়ে উঠলেন মিলান ফুটবলাররা। মাঠে ছিল হাজার খানেক সমর্থক উপস্থিত ছিল, তবে তাদের বেশিরভাগই ইন্টার সমর্থক। কিন্তু সান সিরোতে এমন রাতে ভরা গ্যালারির কথা মনে না পড়ে পারে না, সেই অভাবটা মিলান টের পেল 'পূর্নাঙ্গ' উদযাপন করতে না পেরে। এমন রাত সাম্প্রতিক সময়ে কমই দেখেছে মিলান। ২০১৬ সালে সবশেষ মিলান ডার্বি জিতেছিল রোসোনেরিরা। এরপর থেকে লিগে একবারও ইন্টার মিলানকে হারাতে পারেনি তারা। ৪ বছরের অপেক্ষা পর এমন জয় তো দারুণ কিছুই!
মিলানের দারুণ জয়ের রুপকার ইব্রাহিমোভিচ। ৩৯ বছর বয়সীর জোড়া গোলে ইন্টারকে হারিয়েছে মিলান। সান সিরোতে দুই মিলানের জন্য ঘরের মাঠ। ওই এক মাঠেই দুই দল প্রতি মৌসুমে লিগের ম্যাচ খেলে। একটা অফিসিয়ালি হোম, অন্যটা অ্যাওয়ে। এই ম্যাচ ছিল ইন্টারের জন্য হোম। সে হিসেবে ঘরের মাঠে মিলান আসলে ইন্টারকে হারালো ১০ বছর পর! ২০১০ সালের ওই ম্যাচেও মিলানের জয়ের নায়ক ছিলেন ইব্রাহিমোভিচ। সেবার শেষ পর্যন্ত লিগ শিরোপাও জিতেছিল মিলান।
সিরি আতে টানা চার জয়ে মিলান এখন উড়ছে। স্টিভেন পিওলির ছাড়া সিরি আতে শরভাগ জয়ের রেকর্ড নেই কারও। মিলান এবার লিগ জিততে পারবে কি না সেটা এখনই অনুমান করা সম্ভব নয়। তবে ইব্রাহিমোভিচ এমন ফর্মে থাকলে সবই হয়ত সম্ভব! স্টেফানো পিওলির দল এই নিয়ে সবশেষ ২০ ম্যাচে অপরাজিত। টানা ২৪ ম্যাচে গোলও করেছে তারা। জানুয়ারিতে ইব্রাহিমোভিচ মিলানে ফেরার পর আক্ষরিক অর্থেই ভাগ্য বদলে গেছে তাদের। এবার ভাগ্য ফিরেছে মিলান ডার্বিতেও।
করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠে মিলান ডার্বিতে প্রথমবারের মতো মাঠে নেমছিলেন ইব্রাহিমোভিচ। ম্যাচের ১৩ মিনিটে পেনাল্টিটাও আদায় করে নিয়েছিলেন তিনিই। আলেক্সান্ডার কোলারাভ বক্সের ভেতর ঢুকে পরা ইব্রাহিমোভিচকে পেছন থেকে ফাউল করেছিলেন। স্পটকিক থেকে সামির হান্দানোভিচ অবশ্য ইব্রাহিমোভিচের প্রথম শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরতি শটে আর রক্ষা করতে পারেননি দলকে। ইব্রাহিমোভিচই হয়ে হেসেছেন তখন।
মিনিট পাঁচেক না গড়াতেই এরপর আরও একবার গোল করে বসেন ইব্রাহিমোভিচ। বাম দিক থেকে রাফায়েল লিয়াওর দারুণ ক্রস গোলের সামনে এসে পড়লে হাফ ভলিতে বল ইন্টারের জালে বল ঢুকিয়ে দেন তিনি। সাবেক খেলোয়াড়ের জোড়া গোলে মুহুর্তেই ম্যাচটাও হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যায় ইন্টারের।
প্রথমার্ধেই রোমেলু লুকাকু এক গোল শোধ করে দিয়ে দিশাহীন ইন্টারকে পথ দেখিয়েছিলেন। দুইদলই এরপর প্রথমার্ধে দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। তবে গোল আর পায়নি কেউ। অবশ্য লুকাকু এদিন আরেকটু নিখুঁত হতে পারলে হয়ত হারটা এড়াতেও পারত ইন্টার। বিরতির আগে কর্নার থেকে হেডে ফাঁকায় থেকেও বল বাইরে মেরেছিলেন লুকাকু।
দারুণ প্রথমার্ধ শেষে দ্বিতীয়ার্ধটা অবশ্য হয়েছে পুরো বিপরীত। আক্রমণে তেমন ধারালো ছিল না দুইদলের কেউই। সময় যত গড়িয়েছে মিলান জয়ের দিকে এগিয়েছে। কিন্তু যোগ করা সময়ে গিয়ে জ্বলে উঠেছিল ইন্টার। সেখানেও লুকাকুর কাছেই গিয়েছিল দারুণ দুইটি সুযোগ। একবার লাউতারো মার্টিনেজের পাস থেকে বল পেয়ে গিয়েও গোলের সামনে তাতে ঠিকমতো পা ছোঁয়াতে পারেননি বেলজিয়ান স্ট্রাইকার। ম্যাচের একেবারে শেষ কিকে দারুণ ব্যাকহিলেও জিয়ানলুজি দোনারুমাকে আর বোকা বানাতে পারেননি তিনি।
টানা ৪ জয়ে সিরি আর পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে এখন মিলান। ৪ ম্যাচ ৭ পয়েন্ট নিয়ে নেরাজ্জুরিরা আছে ৭ নম্বরে। নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পারাই যেখানে উৎসবের উপলক্ষ্য এনে দেয়, সেখানে তাদের হারিয়ে শীর্ষস্থান পোক্ত করতে পারলে তো উদযাপনে রঙ চড়ার কথা আরও! ইব্রাহিমোভিচরা বোধ হয় সে কারণেই আর ফাঁকা গ্যালারিকে তোয়াক্কা করেননি। ম্যাচের আগে মিলান সমর্থকেরা হাজার হাজার বাইক চেপে ক্লাবের টিম বাসের যাত্রা সঙ্গী হয়ে স্টেডিয়াম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন। ম্যাচের পর তাদের অভাব মনে পড়ারি কথা রোসোনেরিদের!