• অন্যান্য খবর
  • " />

     

    'অভিশপ্ত' রবিনহো, বেকার পাতো: ব্রাজিলের দুই তারার ঝরে পড়ার গল্প

    'অভিশপ্ত' রবিনহো, বেকার পাতো: ব্রাজিলের দুই তারার ঝরে পড়ার গল্প    

    একজন এক সময় গড়েছিলেন ব্রিটিশ ট্রান্সফার রেকর্ড, তার সময়ের সেরা খেলোয়াড়দের ছোট্ট তালিকায় রাখা হতো তাকে। আরেকজনও ছিলেন একই রকম প্রতিভাবান, ১৯ বছর বয়সেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ইতালিতে। দুজনের মধ্যে মিল আছে আরও, ব্রাজিলের হলুদ জার্সি তে দুজনেরই যাওয়ার কথা ছিল অনেক দূর। রবিনহো সেটা কিছুটা পারলেও আলেকজান্ডার পাতোর ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। তবে নিয়তির নির্মম তামাশায় দুজন এখন এসে দাঁড়িয়েছেন একই পরিণতির সামনে। ৩১ বছর বয়সে পাতো এখন ক্লাবহীন, ৩৬ বছর বয়সে রবিনহোরও মাত্র হয়েছে একই পরিণতি।

    আগে পাতোর গল্পটা বলা যাক। ইউরোপিয়ান ফুটবল অনুসরণ করলে পাতোর সেই সোনালী সময়টা অনেক দূরের গল্প মনে হতে পারে। তবে পাতোর বয়স এখন ৩১, এই বয়সেই ইউরোপ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। আর সেখানে পাতো এখন খুঁজে পাচ্ছেন না ক্লাব। বা বলা ভালো, কোনো ক্লাব চাইছে না তাকে।

    অথচ এক যুগ আগেও সেটা অভাবনীয় ছিল। ইন্টারন্যাশিওনাল থেকে আসার পর প্রথ মৌসুমেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ইতালিতে, মিলানের হয়ে সেই মৌসুমে করেছিলেন ১৮ গোল। ব্রাজিলের হয়েও গোল পেয়েছিলেন অভিষেকেই, এমনকি পেলের সঙ্গেও তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছিল তার। ১৯ বছরও হয়নি তার, সেবার হয়েছিলেন মিলানের সর্বোচ্চ গোলদাতা। বিশ্ব ফুটবল আরেক রত্ন পেয়ে গেছে, এ নিয়ে সংশয় ছিল না কারো। পরের মৌসুমে রিয়ালের বিপক্ষে মিলানের ৩-২ গোলের জয়ে দুই গোল করেছিলেন দ্বিতীয়ার্ধে। সেই মৌসুমেও গোল পাচ্ছিলেন নিয়মিত।

    এরপর থেকে পাতোর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে উলটো দিকে। চোটের ছোবলে মাঠের বাইরেই বেশি সময় কাটাতে হচ্ছিল, নিয়মিত খেলার সুযোগ পাছচিলেন না। সেটা প্রভাব ফেলল তার ফর্মেও, একাদশে জায়গা হারিয়ে ফেললেন। ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত চোটের সঙ্গে লড়াই করেই থাকতে হয়েছে তাকে। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ মৌসুমে পাতো যোগ দিলেন করিন্থিয়ানসে। সেখানেও খুব বেশি সাফল্য পাননি, ঠিকানা বদলে ধারে এসেছেন সাও পাওলোতে। এখানে নিজেকে ফিরে পেলেন কিছুটা, ২০১৬ সালে চেলসিতে এসেছেন আবার ধারে, ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেলেন আরেকবার। কিন্তু ছয় মাসে মাত্র দুইটি ম্যাচে নামার সুযোগ পেলেন। ছয় মাস পর চেলসি থেকে আবার ফিরে গেলেন করিন্থিয়ানসে। 

    তবে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কটা চুকে যায়নি, ভিয়ারিয়ালের হয়ে খেলার সুযোগ পেলেন। তবে এক মৌসুম পরেও পাতোর জন্য ভালো প্রস্তাব পায় ভিয়ারিয়াল, চীনের ক্লাব তিয়াজিন কুয়ানজিনের কাছে বিক্রি করে দিল ১৮ মিলিয়ন ইউরোতে। চীনে এসে আবার গোলের দেখা পেলেন পাতো। এবার খেলতে পারলেন মুক্তভাবে, পরের দুই মৌসুমে করলেবন ৩৬ গোল। কিন্তু আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলতে যাচ্ছিলেন, দরকার ছিল আরও বড় চ্যালেঞ্জের। ফিরলেন সেই পাও পাওলোতে, চুক্তি হলো ২০২২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু এক বছর পরেই ২০২০ সালে এসে পাতো জানলেন, সাও পাওলো চুক্তি শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফ্রি এজেন্ট হয়ে গেলেন, কিন্তু কোনো ক্লাব থেকে ডাক পেলেন না। ৩১ বছর বয়সে পাতো তাই হয়ে পড়লেন বেকার। যে ব্রাজিলে একসময় তাকে পেলের উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছিল, সেখানে ক্যারিয়ারটা থেমে গেল ২৭ ম্যাচে ১০ গোল করে।

    রবিনহোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অবশ্য তেমন নয়। পাতোর মতো কুড়ি থেকেই ঝরে যাননি, ইউরোপিয়ান ফুটবলে সুবাস ছড়িয়েছেন অনেকটা সময়। সান্তোস থেকে রিয়াল মাদ্রিদে এসে টানা দুই মৌসুমে লিগ জয়ে রেখেছিলেন অবদান, যতদিন রিয়ালে ছিলেন সেই সময়ে তার চেয়ে বেশি গোল ছিল শুধু রাউল ও রুদ ফন নিস্টলরয়ের। রিয়াল থেকে ব্রিটিশ ট্রান্সফারের রেকর্ড গড়ে রবিনহো এলেন ম্যান সিটিতে, সেখানেও প্রথম মৌসুমে হলেন চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে সেখানে বেশিদিন থাকা হয়নি। সান্তস থেকে ধারে কিছুদিন খেলে নতুন ঠিকানা হয় এসি মিলান।

    ইতালিতে প্রথম মৌসুমটা স্বপ্নের মতোই কাটে রবিনহোর। মিলান জেতে সিরি আ, গত এক দশকে যেটা তাদের একমাত্র লিগ জয়ের সুখস্মৃতি হয়ে থেকেছে। মিলানে খেলেছেন এরপর আরও তিন বছরম তার পর দ্বিতীয় দফায় ফিরেছেন সান্তোসে। রবিনহোর যাযাবর জীবন চলছেই।

    সান্তোস থেকে চীনের গুয়াংঝুতে ফিরলেন, এরপর ব্রাজিলের অ্যাটলেটিকো মিনেইরো হয়ে পাড়ি জমালেন তুর্কি ক্লাব সিভাসপুরে। এরপর ইস্তাবম্বুল বাসাকসেহিরের হয়ে খেলে তুর্কি লিগ জিতলেন গত মৌসুমে, দেখালেন জাদুটা শেষ হয়ে যায়নি তখনও। ক্যারিয়ারের শেষবেলায় আবার ফিরলেন সান্তোসে। এবার তার বেতন হলো মাসে ২৭১ ডলার মাত্র, বা বাংলাদেশি টাকায় ২৩ হাজার টাকা। ব্রাজিলে পেশাদার ফুটবলে এটা ন্যুনতম মজুরি, রবিনহো বললেন টাকার জন্য, হৃদয়ের জন্য এসেছেন সান্তোসে। আবেগময় একটা শেষের চিত্রনাট্যটা জমে উঠছিল, কিন্তু সেটা বদলে গেল অন্যদিক থেকে।

    ইতালিতে থাকার সময় একটা গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন রবিনহো। একটা গণধর্ষণে যুক্ত থাকার জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, সেজন্য নয় বছরের কারাদন্ড হয়েছিল তার। রবিনহো সান্তোসে আসার পরেই বিতর্কের ঝড় উঠেছিল। সান্তোসের মূল স্পন্সর নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল, মিডিয়াতেও উঠছিল প্রতিবাদ। তুমুল গণদাবির মুখে রবিনহোর সঙ্গে চুক্তিটা বাতিল করে সান্তোস। রবিনহো ৩৬ বছর বয়সে হয়ে পড়েন ক্লাবহীন, খুব সম্ভবত শেষ হয়ে গেল ক্যারিয়ারও।

    পাতো আর রবিনহো, দুজনের শেষটা হতে যাচ্ছে ভুলে যাওয়ার মতো।