কিক অফের আগে : পিএসজির বিপক্ষে ইউনাইটেডের সম্বল প্যারিসের সেই রাত
কবে, কখন
পিএসজি-ম্যান ইউনাইটেড
২১ অক্টোবর, রাত ১.০০
বছর দেড়েক আগে আগে এই দুই দলের শেষ দেখাতেই চাকরিটা একরকম পাকা করে ফেলেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ ওলে গানার সোলশার। চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম লেগে ২-০ হেরেও প্যারিসে ৩-১ গোলের জয়ের অভাবনীয় এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছিল ইউনাইটেড। আর পিএসজি আরও একবার ডুবেছিল হতাশার চোরাবালিতে।
ঠিক দুই বছর চিত্র এখন পালটে গেছে অনেকটাই। সোলশারকে ইউনাইটেডের দায়িত্বটা দেওয়া আদৌ সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল কি না প্রশ্ন উঠে গেছে সেটা নিয়েই। আর পিএসজি গতবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠে হতাশার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে ঠিকই। কিন্তু ১৯ মাসের আগের ম্যাচটা পিএসজির জন্য দুঃসহ স্মৃতি হয়ে আছে এখনও। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ হলেও সেই স্মৃতি ভুলতে পিএসজি উঠেপড়েই লাগবে ইউনাইটেডের বিপক্ষে।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের পর অবশ্য নতুন মৌসুমের শুরুতে ধাক্কা খেয়েছিল পিএসজি। গত কয়দিনে তাও সামাল দিয়ে ফেলেছে থমাস তুখলের দল। লিগের প্রথম দুই ম্যাচ হেরেও পিএসজি ৭ ম্যাচ শেষে এখন পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে। ঘরোয়া লিগে ঠিক পথেই আছে তারা। শেষ ম্যাচে মেতজের বিপক্ষে নিয়মিত একাদশের ৯ জন খেলোয়াড়কে ছাড়া খেলতে নেমেছিল পিএসজি। তাতেও তারা জয় পেয়েছে ৪-০ ব্যবধানে। নিজেদের শক্তি আর সামর্থ্যের নিদর্শন পিএসজি জানিয়ে রেখেছে ইউনাইটেডকে।
চ্যাম্পিয়নস লিগে প্যারিসে ইউনাইটেডের মহাকাব্যিক রাতে অ্যান্ডার হেরেরা ছিলেন রেড ডেভিলে। মৌসুম শেষেই পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। চার শিরোপা জিতে এরপর খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও। ম্যাচের আগে তিনিও দুই দলের মানের পার্থক্যটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন আরেকবার, "গত মৌসুম আমাদের দারুণ গেছে। আমাদের হারানো সহজ হবে না।"
"আমাদের দলে দারুণ কিছু তারকা আছে। ওই খেলোয়াড়দের আবার আমাদের মতো খেলোয়াড়দের সাহায্য দরকার। আমি খুবই খুশি যে দল যা চাচ্ছে সেটা দিয়ে যেতে পারছি। যতদিন পর্যন্ত আমার কদর আছে, ততোদিন পর্যন্ত পিএসজতেই আমি খুশি।"
সোলশার আসলে সবশেষ কবে চাপে ছিলেন না সেটা মনে করাই কষ্ট। পিএসজির বিপক্ষে শেষ ম্যাচটাই কোচিং ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন এখনও পর্যন্ত। ইউনাইটেডকে তিনিই আবার চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরিয়ে এনেছেন। কিন্তু লাইপজিগ, পিএসজির গ্রুপে ইউনাইটেডের জন্য একমাত্র সহজ প্রতিপক্ষ তুরস্কের ক্লাব ইস্তাম্বুল বাসেকসাহির। দ্বিতীয় রাউন্ডে দলকে নিয়ে যেতে হলে ইউনাইটেডকেও দ্রুতই ফিরতে হবে ফর্মে। ঘরের মাঠে টটেনহামের কাছে ৬-১ গোলে উড়ে যাওয়ার পর নিউক্যাসেলকে শেষের ঝড়ে ৪-১ গোলে হারিয়ে ক্ষতে খানিকটা প্রলেপ দিতে পেরেছে ইউনাইটেড। তবে লিগে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে ২ জয় আর ২ হার ইউনাইটেডের অধাবাহিকতার কথাই বলছে।
শেষবার প্যারিসে দুই দলের ম্যাচে ছিলেন না নেইমার। এরই মধ্যে এই মৌসুমে নেইমারের দুই গোল আর এক অ্যাসিস্ট করা হয়ে গেছে। দারুণ ফর্মে আছেন ব্রাজিলিয়ান। তিনি ছন্দে থাকলে পিএসজি হয়ত কোনোরকম দুর্ভোগ ছাড়াই পার পেয়ে যাবে ইউনাইটেডের বিপক্ষে।
থমাস তুখল অবশ্য এসবের কোনো কিছুতেই বিশ্বাসী নন। তিনি দুই বছর আগের স্মৃতিও মনে করতে চান না। গতবার যে তার দল চ্যাম্পিয়নস লিগ ছোঁয়ার কাছে গিয়ে খালি হাতে ফিরেছে সেটাও আমলে আনতে চান, "সত্যি বলতে এসব ভেবে লাভ নেই। গতবারের কথা মনে না রাখা কষ্টকর, দুই বছর আগের স্মৃতিও মনে না আসা কঠিন। কিন্তু এসব আসলে কোনো কাজে আসে না। এটা একটা নতুন মৌসুম। আমাদের একেবারে শুন্য থেকেই শুরু করতে হবে।"
দলের খবর
পিএসজির বিপক্ষে দলের অধিনায়কের আর্মব্যান্ড যাচ্ছে ব্রুনো ফার্নান্দেজের কাছে। হ্যারি ম্যাগুয়েরকে এই ম্যাচে দলে রাখেননি সোলশার। রক্ষণের সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে ইউনাইটেড কোচের জন্য। এরিক বায়িই চোটে পড়েছেন।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এডিনসন কাভানির প্রশংসা করে এরপর থমাস তুখল বলেছিলেন, গোল করার কাজটা যেন কাভানি বুধবার (পিএসজি-ইউনাইটেড ম্যাচের পরদিন থেকে) করেন। তুখলের কথা ফলে গেছে। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে নতুন ক্লাবের হয়ে অভিষেকটা হচ্ছে না এডিনসন কাভানির। শেষ মুহুর্তে ফিটনেস শঙ্কায় তাকে রেখেই প্যারিসে গেছে ইউনাইটেড।
পিএসজিতেও চোটের কারণে ম্যাচ মিস করবেন মার্কো ভেরাত্তি, মাউরো ইকার্দি, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, থিলো কেহরেররা। লিগের শেষ ম্যাচে এসিএল ইনজুরি নিয়ে হুয়ান বার্নেট লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে গেছেন। থিয়াগো সিলভা, কাভানি, চুপো মোটিংদের মতো অভিজ্ঞরা ক্লাব ছাড়ার পর তুখলের কাজ বেড়েছে এবার। অবশ্য ফ্লোরেঞ্জিকে পেয়ে সেই অভাব খানিকটা পূরণও হয়েছে পিএসজির।
সম্ভাব্য একাদশ
পিএসজি
নাভাস, ফ্লোরেঞ্জি, মার্কিনিয়োস, কিমপেম্বে, কুরযাওয়া, হেরেরা, দানিলো, রাফিনহা, ডি মারিয়া, নেইয়াম্র, এমবাপে
ম্যান ইউনাইটেড
ডি গিয়া, ওয়ান বিসাকা, লিন্ডেলফ, তুয়ানজিবি, শ, মাতিচ, পগবা, মাতা, র্যাশফোর্ড, ফার্নান্দেজ, মার্শিয়াল
প্রেডিকশন
দলের মান বা ফর্ম- দুইয়ের বিচারে পিএসজির সঙ্গে লড়াই করা ইউনাইটেডের জন্য কষ্টকরই। এই দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে মাত্র দুইবার। ২০১৯ এর ওই ম্যাচের পর দুই দলের অবস্থাই প্রমাণ করেছে কোন উন্নতি টেকসই আর কোনটা ভঙ্গুর। দুই দলের মাঝের ফারাকটাই এবার বেরিয়ে আসার কথা।
পিএসজি ৩-০ ইউনাইটেড