'আটালান্টা ম্যাজিকের' পুনরাবৃত্তি করতে পারবে ক্রাসনোদার এবং রেনে?
চ্যাম্পিয়নস লিগের গত আসরে সবাইকে চমকে দিয়েছিল আটালান্টা। প্রথমবার ইউরোপের সবচেয়ে বড় মঞ্চে খেলতে এসেই কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিল জিয়ান পিয়েরো গাস্পেরিনির দল। কোয়ার্টার ফাইনালে পিএসজির সঙ্গে দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ মুহূর্তের গোলে না হারলে দলটির যাত্রা আরও দীর্ঘ হতে পারত। এবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে চারটি ক্লাবের অভিষেক হচ্ছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুল বেসেকসাহির ও ডেনমার্কের মিডশিলানের সঙ্গে এবার প্রথম খেলছে ফ্রান্সের রেনে ও রাশিয়ার ক্রাসনোদারেরও। শেষের দুই ক্লাবের গল্পটা অবশ্য আর সব নবাগতের চেয়ে একটু অন্যরকম।
এই শতাব্দীতেই রাশিয়ান ক্লাব ক্রাসনোদারের জন্ম হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর রাশিয়ান লিগের দ্বিতীয় ডিভিশন (তৃতীয় স্তরে) খেলা শুরু করে। সেখানে প্রথম মৌসুমে ক্লাবটি তৃতীয় স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করেছিল।তাই স্বাভাবিকভাবে তাদের প্রমোশন পাওয়ার কথা ছিল না। তবে প্রথম বিভাগে দুটি ক্লাব পরের মৌসুমে খেলতে অস্বীকৃতি জানানোয় রাশিয়ান লিগ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রথম বিভাগে খেলতে আমন্ত্রণ জানায়। প্রথম বিভাগে পরের মৌসুমে তারা পঞ্চম স্থানে থেকে মৌসুম শেষ করে। তবে অর্থনৈতিক কারণ তিনটি ক্লাব রাশিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে না পারায় আবারও সৌভাগ্যজনকভাবে সেখানে জায়গা হয় তাদের।
২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে নিয়মিত লিগের সেরা চারে থেকেছে ক্লাবটি। এরই মধ্যে পাঁচ মৌসুমে ইউরোপা লিগে খেলেছে দলটি। ২০১৬-১৭ এবং ২০১৮-১৯ মৌসুমে টুর্নামেন্টের শেষ ষোলো পর্যন্ত গেছে ক্রাসনোদার।
গত মৌসুমে রাশিয়ান লিগে তৃতীয় স্থানে থাকার সুবাদে চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাইপর্ব খেলার পেয়েছিল ক্রাসনোদার। বাছাইপর্বে গ্রিক ক্লাব পাওককে দুই লেগেই ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে তারা।
মূল পর্বে ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন সেভিয়া এবং ২০১২-১৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী চেলসির সঙ্গে গ্রুপ ই-তে রয়েছে তারা।
গ্রুপ ই-তে ক্রাসনোদারের অপর সঙ্গী ফ্রেঞ্চ ক্লাব রেনে। ক্লাবের ১১৯ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানজনক আসরে জায়গা পেয়েছে দলটি। অবশ্য এক্ষেত্রে করোনাভাইরাস মহামারী ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে কাজ করেছে ক্লাবটির জন্য। কারণ করোনা মহামারী ইউরোপে আঘাত হানার পর অন্য সব লিগের মতো ফ্রেঞ্চ লিগও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এবং বেশ কিছু স্বাস্থ্য প্রটোকল তৈরি করে ইউরোপের বড় লিগগুলো আবারও মাঠে গড়ায়। তবে ফ্রান্স সেই মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবল আর শুরু করেনি। এতে করে করোনার কবলে পড়া অসম্পূর্ণ মৌসুমে লিগ টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকার সুবাদে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেয় তারা।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের বেশ কয়েকজন তরুণ তারকা দলটির নতুন উত্থানের পেছনে অবদান রেখেছেন। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের দিকে নজর থাকবে সবার। এর মাঝে সবচেয়ে বড় নামটি হচ্ছে মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার। অ্যাঙ্গোলায় জন্ম নেওয়া এই ১৭ বছর বয়সী ফুটবলারের এরই মধ্যে ফ্রান্স জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ সহ ইউরোপের বাঘা বাঘা সব ক্লাব তাকে দলে ভেড়াতে চাইছে। অবশ্য রেনের দুর্ভাগ্য, মৌসুম শুরুর আগেই প্রতিভাবান গোলরক্ষক এদুয়ার্দো মেন্ডিকে গ্রুপ ই-তে তাদের প্রতিপক্ষ চেলসির কাছে হারিয়েছে তারা। কিন্তু চলতি ফ্রেঞ্চ লিগে এখন পর্যন্ত রেনে ভাল ফর্মেই আছে, লিল আর পিএসজির ঠিক পরেই আছে তারা।
এবারের আসরে ক্রাসনোদার এবং রেনের দিকে আলাদাভাবে নজর রাখতে হবে। গ্রুপের অপর দুই দল চেলসি এবং সেভিয়া অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আছে, ই গ্রুপ থেকে পরবর্তীতে রাউন্ডে যাওয়ার জন্য নিশ্চিতভাবেই তারা ফেবারিট। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের দুই নতুন মুখ ক্রাসনোদার এবং রেনের সামর্থ্য আছে বাজি পাল্টে দেওয়ার।