বার্সেলোনার বড় জয়ে মেসির নতুন রেকর্ড
ফুল টাইম
বার্সেলোনা ৫ - ১ ফেরেঙ্কভারোস
গতবারের ক্ষত ভুলে বড় জয়ে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ মিশন বড় জয়ে শুরু করেছে বার্সেলোনা। পেনাল্টি থেকে লিওনেল মেসির গোলে শুরু, এরপর আনসু ফাতি, ফিলিপে কুতিনহো, পেদ্রি, উসমান দেম্বেলেরা একে একে বল জালে পাঠিয়েছেন। ঘরের মাঠে স্বাচ্ছন্দ্যেই হাঙ্গেরির ক্লাব ফেরেঙ্কভারোসকে কুপোকাত করেছে কাতালানরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে জেরার্ড পিকে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় বড় জয়েও পুরোপুরি স্বস্তিও পায়নি বার্সেলোনা।
২৭ মিনিটে বল জালে পাঠিয়ে আরও একটু নতুন রেকর্ড গড়েছেন মেসি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১৬ মৌসুমে গোল করার কীর্তিও গড়া হয়েছে তার। মেসি ভাগ বসিয়েছেন রায়ান গিগসের রেকর্ডে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে একটানা এতোগুলো মৌসুম গোল করার রেকর্ড নেই আর কারও।
এসবের আগে ফেরেঙ্কভারোসের বিপক্ষে শুরুটা আত্মবিশ্বাসী ছিল না বার্সেলোনার। প্রথম দশ-পনের মিনিটে বল দখলে এবং প্রাণবন্ত ফুটবলের দিক দিয়ে বার্সেলোনা কিছুটা পিছিয়ে ছিল হাঙ্গেরিয়ান ক্লাব ফেরেঙ্কভারোসের চেয়ে। এমনকি দশম মিনিটে ফেরেঙ্কভারোসের স্ট্রাইকার তরমাক এনগুয়েন একবার বল জালেও পাঠিয়েছিলেন, তবে অফসাইডের জন্য বাতিল হয়ে যায়। আর তার দশ মিনিট পর আবারও বার্সার বক্সে হানা দেয় ফেরেঙ্কভারোস। তখন এনগুয়েনের পাস থেকে ইসায়েল দা সিলভার বল ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে।
তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে বার্সেলোনার সাথে ফেরেঙ্কভারোসের পার্থক্য পরিষ্কার হয়ে যায়। শুরুর জড়তা কাটিয়ে বার্সেলোনা গতিময় এবং বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল খেলা শুরু করে। রোনাল্ড কোমান প্রথমবারের মতো আন্টোয়ান গ্রিযমানকে ছাড়াই একাদশ বাছাই করেছিলেন। তাকে প্রয়োজনও হয়নি বার্সার। মেসি-কুতিনহো-ফাতি-ত্রিনসাওদের আক্রমণভাগ ফেরেঙ্কভারোসকে চেপে ধরেছিল শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার পর থেক। ২৭ মিনিটে হেলায় একটি পেনাল্টি হজম করে বসে ফেরেঙ্কভারোস। মেসি ডান প্রান্ত দিয়ে দারুণভাবে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুঁকে যান, আর তখন পা ছড়িয়ে তাকে ফাউল করে বসেন সেন্টার ব্যাক কোভাসেভিচ।
আর সেই গোলের পর প্রথমার্ধের বাকি সময়টা একমুখী ট্র্যাফিক চলে। ৩৬ এবং ৩৯ মিনিটে দুর্দান্ত সেভে ফেরেঙ্কভারোস গোলরক্ষক দিবুস যথাক্রমে ফাতি এবং ত্রিনসাওকে গোলবঞ্চিত করেন। তবে গোল হজমের পর একেবারে চুপসে যাওয়া ফেরেঙ্কভারোস বার্সেলোনার ব্যবধান বাড়ানোর প্রচেষ্টা রুখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
৪২ মিনিটে ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের শুন্য ভাসানো ফরোয়ার্ড বলে ফার্স্ট টাইম শটে বল জালে জড়ান বার্সেলোনার ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড ফাতি। যদিও তার শটটি মিসকিক ছিল ,তবুও প্লেসিং ঠিকঠাক হওয়াতে ফেরেঙ্কভারোস গোলরক্ষকের সামনে সেটি ঠেকানোর কোনো সুযোগ ছিল না। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১৮ পেরুনোর আগেই একের অধিক গোলের মালিক হয়েছেন ফাতি।
প্রথম গোলের পর থেকে পাওয়া আধিপত্য দ্বিতীয়ার্ধেও ধরে রাখে বার্সেলোনা। ৫২ মিনিটে কুতিনহোও বুঝে নেন নিজের গোল। বক্সের বাম প্রান্তে আনমার্কড থাকা কুতিনহো ফাতির পাস ধরে কাছের পোস্টে ফেরেঙ্কভারোসের গোলরক্ষককে পরাস্ত ম্যাচ ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যান।
তবে বার্সেলোনার এই একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যেই আবারও বার্সার বক্সে আতঙ্ক হয়ে ফিরে আসেন তর্কসাপেক্ষে ফেরেঙ্কভারোসের সেরা খেলোয়াড় এনগুয়েন। ৬৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সের ভেতর আসেন তিনি। পুরোটা সম ইয়তাকে তাড়া করেন জেরার্ড পিকে। কিন্তু তাকে বৈধভাবে রুখতে বার্সেলোনার অভিজ্ঞ সেন্টার ব্যাক, উল্টো এনগুয়েন যখন শট নিতে যাচ্ছিলেন তখন তার হাত ধরে টেনে তাকে বক্সের ভেতর ফেলে দেন। বক্সের ভেতর এমন চ্যালেঞ্জের পর রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখাতে এক মুহুর্তও বিলম্ব করেননি। সেখান থেকে পাওয়া স্পট কিক সফলভাবে কাজে লাগিয়ে ম্যাচে ব্যবধান কমান ইহোর খারাতিন।
পিকের লাল কার্ডের পর বার্সেলোনা কিছুটা নিচে নেমে খেলতে থাকে। তবে এর কোনো সুযোগ আদায় করতে পারেনি ফেরেঙ্কভারোস। উল্টো ৮২ মিনিটে দুই বদলি ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বেলে এবং পেদ্রির দারুণ সংযোগে আরও একটি গোল পেয়ে যায় বার্সেলোনা। ৬৩ মিনিটে ফাতি এবং ত্রিনকাওয়ের বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন দেম্বেলে এবং পেদ্রি। দেম্বেলের কাটব্যাক থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিষেকে বার্সেলোনার হয়ে নিজের প্রথম গোল পান ১৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। ৮৯ মিনিটে মেসির অ্যাসিস্টে দেম্বেলেও অনেকদিনের খরা কাটিয়েছেন। এক বছর ১৫ দিন পর বার্সার জার্সিতে গোল পেয়েছেন তিনি।
শুরুতে কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পারলেও পুরো ম্যাচজুড়ে বার্সেলোনার চেয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে ছিল ফেরেঙ্কভারোস। কাতালানরা ২২ মিনিট দশজন নিয়ে খেললেও এর কোনো ফায়দা লুটতে পারেনি তারা। আর এই জয়ে লা লিগায় এল ক্লাসিকোর আগে নিজেদের প্রস্তুতিটাও সারা হয়ে গেছে বার্সেলোনার।
বার্সেলোনা একাদশ
নেতো, রবার্তো, পিকে, লংলে, ডেস্ট, কুতিনহো, পিয়ানিচ, ডি ইয়ং, ত্রিনকাও, মেসি, ফাতি
ফেরেঙ্কভারোস একাদশ
দিবুস, সিভিচ, কোভাসেভিচ, ব্লাজিচ, বোতকা, খারাতিন, লাইদুনি, জুবকোভ, সিগের, ইসায়েল, এনগুয়েন