• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    প্যারিসে আরও একবার রাশফোর্ডই নায়ক

    প্যারিসে আরও একবার রাশফোর্ডই নায়ক    

    ফুলটাইম
    পিএসজি ১-২ ম্যান ইউনাইটেড


    প্যারিসে ১৯ মাস আগের রাতটাই ফেরত আনল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আরও একবার মার্কাস রাশফোর্ডই প্যারিসের নায়ক। এবারও শেষ মুহুর্তের রাশফোর্ডের গোলেই পিএসজিকে খালি হাতে ফিরিয়েছে ইউনাইটেড। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ডান পায়ের কোণাকুণি শটে ৮৭ মিনিটে দারুণ এক গোল করে রাশফোর্ড ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন ম্যাচ। গতবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের রানার্স আপরা তাই ইউরোপে মৌসুম শুরু করল হার দিয়েই।

    দুই দলের মানের পার্থক্য, সাম্প্রতিক ফর্ম- সবকিছু মিলিয়ে পিএসজিই ঘরের মাঠে ছিল ফেভারিট। কিন্তু প্যারিসে মাঠের খেলায় সেটা বুঝতেই দেয়নি ইউনাইটেড। পুরো ম্যাচে পিএসজির সঙ্গে হাড্ডহাড্ডি লড়াই করেছে ইউনাইটেড। বরং পিএসজিই ছিল ঘরের মাঠে বিবর্ণ। প্যারিসে দুই দলের সবশেষ ম্যাচের যেখানে শেষ হয়েছিল এবারের শুরুটাও ছিল সেখান থেকেই। প্রথমার্ধে পেনাল্টি পেয়ে গিয়েছিল ইউনাইটেড। প্রায় দুই বছর আগে শেষ মুহুর্তে পাওয়া পেনাল্টিতে গোল করে পিএসজির বিদায়ঘন্টা বাজিয়েছিলেন রাশফোর্ড। এবার অবশ্য পেনাল্টি নিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। গোল করে দলকে এগিয়েও নিয়েছিলেন তিনি। এরপর অ্যান্থনি মার্শিয়ালের আত্মঘাতী গোলে পিএসজি ম্যাচে ফিরেছিল বটে, কিন্তু তার সুফল পিএসজিকে ভোগ করতে দেয়নি ইউনাইটেড।



    কৃতিত্বটা অবশ্য ওলে গানার সোলশারেরই প্রাপ্য। হ্যারি ম্যাগুয়েরের অনুপস্থিতিতে তিনজনের ব্যাকলাইন নামিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ওয়ান বিসাকা আর অ্যালেক্স তেলেস ছিলেন উইংব্যাকের ভূমিকায়। এই পাঁচ জন মিলে প্রথমার্ধে উইং ধরে পিএসজিকে আটকে দিয়ে কাজের কাজটা করে রেখেছিল ইউনাইটেড। দুই বছর আগে প্যারিস রুপকথার পর ইউনাইটেডের কোচ হিসেবে চাকরি পাকা করেছিলেন সোলশার। আরেকবার পিএসজিকে হারিয়ে নতুন আরেক বিবৃতি দিলেন যেন ইউনাইটেড কোচ। চড়াই-উতরাইয়ের সময়ে এই জয়টা দরকারই ছিল সোলশারের।

    যদিও এগিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পথটা মসৃণ ছিল না ইউনাইটেডের জন্য। ১২ আর ১৩ মিনিটে ডেভিড গিয়া দারুণ দুইটি সেভ করেছিলেন। আনহেল ডি মারিয়ার বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শট ফিস্ট করে সরিয়ে দিয়েছিলেন, এরপর লেভিন কুরাযাওয়াকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গোলবঞ্চিত করেছেন ডি গিয়া।

    ইউনাইটেড জেগে উঠেছিল ২৩ মিনিটে পেনাল্টিতে এগিয়ে যাওয়ার পর থেকে। মার্শিয়ালকে পেছন থেকে ফাউল করে মার্কিনিয়োসের অনুপস্থিতিতে পিএসজির একাদশে নামা দিয়ালো উপহার দিয়েছিলেন পেনাল্টি। ফার্নান্দেজই কিক নিয়েছিলেন, কেইলর নাভাস সেই শট ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু ফার্নান্দেজ কিক নেওয়ার সময় গোললাইনের বাইরে চলে এসেছিলেন নাভাস। তাই আরেকবার স্পট কিক নেওয়ার সুযোগ পেয়ে যান ফার্নান্দেজ। দ্বিতীয় চেষ্টায় ফার্নান্দেজ আর ভুল করেননি। একই দিকে বল মেরেছিলেন, এবার নাভাস ঝাঁপ দিয়েছিলেন উলটো দিকে। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামা ফার্নান্দেজই এগিয়ে দিয়েছিলেন ইউনাইটেডকে।


    নেইমার-এমবাপে-ডি মারিয়ারা প্রথমার্ধে ইউনাইটেডের রক্ষণ ভেঙে এরপর আর তেমন একটা আক্রমণে উঠতে পারেননি। চোটে পড়া মার্কো ভেরাত্তির দলে না থাকাও ভুগিয়েছে পিএসজিকে। ভুগিয়েছে একজন 'নাম্বার নাইনের' অভাবও। মাউরো ইকার্দিও দলে ছিলেন না চোটের কারণে। বিরতির পর আর সিদ্ধান্ত বদলাতে মোটেই সময় নেননি তুখল। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মিডফিল্ডার গায়াকে তুলে স্ট্রাইকার ময়েসে কিনকে নামিয়ে দেন পিএসজি কোচ। 

    বিরতির পর ইউনাইটেডের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ৫৫ মিনিটেই সমতায় ফিরেছিল পিএসজি। তবে ইউনাইটেড নিজেদের দুর্ভাগাই ভাবতে পারে। ৩৯ মিনিটে একবার স্কট ম্যাকটমিনের হেড অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে না গেলে ব্যবধান বাড়াতে পারত ইউনাইটেড। বিরতির ঠিক পরেই রাশফোর্ডও দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেন। গোলের সামনে গিয়ে সতীর্থকে পাস না বাড়িয়ে রাশফোর্ড নিজে শট নিলেই হয়ত তখনই দুই গোলে এগিয়ে যেতে পারত সোলশারের দল।

    ইউনাইটেডের হতাশা সেসময় আরেকটু বেড়েছে মার্শিয়ালের আত্মঘাতী গোলে। গোলের উৎস কর্নার। কর্নারটা হয়েছিল কুরযাওয়ার ক্রস বারপোস্টে লাগার পর। কাছের পোস্টে নেওয়া নেইমারের কর্নার হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই ঢুকিয়ে দেন মার্শিয়াল। পিএজসিও ভুগতে থাকা ম্যাচে সমতায় ফেরে তাতে।

    ম্যাচটা এরপর চলেছে একই ধারায়, পিএসজির আক্রমণ বনাম ইউনাইটেডের প্রতি আক্রমণ। ওয়ান বিসাকা প্রায় পুরো ম্যাচেই এমবাপেকে কড়া পাহারায় রেখেছিলেন। এমবাপে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাই পার পেয়ে যাচ্ছিল ইউনাইটেড। যে একবার পার পেয়েছিলেন, তখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ডি গিয়া। ডান প্রান্ত থেকে এমবাপের আড়াআড়ি শট ঠেকিয়ে দিয়ে পিএসজিকে এগিয়ে যেতে দেননি ইউনাইটেড গোলরক্ষক। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে ডি মারিয়া পুরো ম্যাচেই ছিলেন নিষ্প্রভ, নেইমারও একবার গোলে শট করে আটকে গেছেন ডি গিয়াতেই। 

    অন্যপ্রান্তে ইউনাইটেডও নিয়মিতই আক্রমণে ভীতি ছড়িয়ে যাচ্ছিল পিএসজির রক্ষণে। নাভাস রাশফোর্ডের বক্সের বাইরে থেকে করা শট একবার ঠেকিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষদিকে পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছিলেন সেই র‍্যাশফোর্ডই। তাতেও আছে সোলশারের অবদান। পল পগবাকে একাদশে না রেখে চমকই দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পগবাকে ইউনাইটেড কোচ মাঠে নামিয়েছেন সময়মতোই। গোলটাও এসেছে তার পাস থেকেই। পিএসজির বক্সের সামনে বল হোল্ড করে রেখে ডান পাশে পাস বাড়িয়েছিলেন পগবা। র‍্যাশফোর্ড এরপর খানিকটা জায়গা করে নিয়ে করেছেন নিচু শট। সেটাই নাভাসের বটম কর্নারে গিয়ে জড়িয়েছে।