• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    মাদ্রিদে এসে রিয়ালকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়ে গেল করোনাজর্জর শাখতার

    মাদ্রিদে এসে রিয়ালকে দুঃস্বপ্ন উপহার দিয়ে গেল করোনাজর্জর শাখতার    

    ফুল টাইম

    রিয়াল মাদ্রিদ ২: ৩ শাখতার দোনেৎস্ক


     শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে জিনেদিন জিদান হাঁটা দিয়েছেন ডাগআউটের দিকে। যে প্রতিযোগিতায় হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন করেছেন দলকে, সেখানে শাখতার দোনেৎসকের কাছে নিজেদের মাঠে হেরে যাওয়াটা বোধ হয় বিশ্বাস করতে পারছিলেন না রিয়াল কোচ। বিশ্বাস করতে কষ্ট হওয়ার কথা টিভি পর্দার সামনে দর্শকদের। রিয়াল নিজেদের মাঠে হেরে গেছে, সেটাও আবার শাখতারের প্রায় দ্বিতীয় দলের কাছে।  দ্বিতীয়ার্ধে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল অবশ্য রিয়াল। শেষ মুহূর্তের গোলে সমতা প্রায় ফিরিয়েই ফেলেছিল। কিন্তু এবার রেফারির সিদ্ধান্ত পক্ষে আসেনি তাদের। অফসাইডে গোল বাতিল হয়ে যাওয়ায় জিনেদিন জিদানকে হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে। ১৯৮১ সালের পর ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় প্রথম টানা তিন ম্যাচ হারল রিয়াল।

    কালই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে শাখতারের কোচ বলছিলেন, সময়টা তার কাছে দুঃস্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছে। করোনার জন্য ইউক্রেনের এই দল এই ম্যাচের আগে নয়জন খেলোয়াড়কে হারিয়ে ফেলেছিল, যার মধ্যে ছিলেন প্রথম একাদশের অনেকে। আর ছিলেন না দশজন সাপোর্ট স্টাফও। জিনেদিন বোধ হয় একটু বেশিই হালকাভাবে নিয়ে ফেলেছিলেন প্রতিপক্ষকে। সার্জিও রামোস চোটের জন্য নেই। রামোস ছাড়া রিয়ালের চ্যাম্পিয়নস লিগে যে গত সাত ম্যাচের একটিতে মাত্র জয় পেয়েছে, সেটাও অজানা থাকার কথা নয়। তবে খর্বশক্তির শাখতার বলেই হয়তো জিদান বিশ্রাম দিয়েছিলেন ক্রুস, বেনজেমাদের। কিন্তু রামোসের অভাবটাই বোধ হয় বেশি করে টের পেয়েছেন।

    রিয়ালের দুই সেন্টারব্যাক রাফায়েল ভারান আর এদার মিলিতাওকে শুরু থেকেই মনে হয়েছে দিশাহীন। প্রথম ১৫ মিনিটের পরেই গুছিয়ে শাখতার আক্রমণ শুরু করে। থিবো কোর্তোয়া ওয়ান টু ওয়ানে সেভ না করলে প্রথম ২০ মিনিটের ভেতরেই এগিয়ে যেতে পারত শাখতার। অবশ্য সেটার জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। ২৯ মিনিটে মিলিতাওয়ের ভুলেই বক্সের ভেতর বল অরক্ষিত পেয়ে গিয়েছিলেন লেমস মার্টিনস। গোল করতে ভুল করেননি।

    দ্বিতীয় গোলের জন্য শাখতারকে বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়নি। এবার বিপদ ডেকে এনেছেন ভারান, ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল উলটো জড়িয়ে দিয়েছেন জালে। চ্যাম্পিয়নস লিগে সিটির সঙ্গে আগের ম্যাচেই ভুল করেছিলেন, আজও সেটার পুনরাবৃত্তি হলো। তবে শাখতার নিজেদের সেরা গোলটা দিয়েছে প্রথমার্ধ শেষের আগে। এবার পুরো ম্যাচে শাখতারের দুই সেরা খেলোয়াড় তেতের ব্যাকহিল থেকে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি ম্যানর সলোমন। জিদান অবিশ্বাসভরে আবিষ্কার করেছেন, প্রথমার্ধেই নিজেদের মাঠে তিন গোল হজম করেছে তার দল।২০০৫ সালের পর চ্যাম্পিয়নস লিগে যে অভিজ্ঞতা আর হয়নি রিয়ালের।

    দ্বিতীয়ার্ধে শুরুতেই নেমেছেন বেনজেমা। তবে রিয়ালের ফেরার জন্য দরকার ছিল দুর্দান্ত কিছুর। সেটার শুরুটা করেছিলেন ৫৪ মিনিটে লুকা মদ্রিচ, বক্সের অনেক বাইরে থেকে ডান পায়ের গোলার মতো শট জড়িয়ে যায় জালে। খানিক পরেই ভিনিসিয়াস নামলেন, এবং সঙ্গে সঙ্গেই পেলেন গোল। এবার শাখতারের রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে এই ব্রাজিলিয়ান গোল করলেন নামার ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে। ২০০৬-৭ সালের পর বদলি হিসেবে নেমে কেউ এত দ্রুত আর গোল পায়নি চ্যাম্পিয়নস লিগে। রিয়ালের জন্য তখন জয় বা ড্রটা খুব সম্ভব বলেই মনে হচ্ছিল। তখনও যে মাত্র ৫৯ মিনিট।

    শাখতার এরপর এগিয়ে যেতে পারত, তবে কোর্তোয়ার আরেকটি ওয়ান টু ওয়ান সেভে টিকিয়ে ছিল রিয়াল। শাখতার অবশ্য এরপর রক্ষণটা ঠিক করেছে, রিয়াল সেভাবে সুযোগ পাচ্ছিল না গোল করার। ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে সেই সুযোগটা পেয়ে যান ফেদেরিক ভালভের্দে। বক্সের বাইরে থেকে তার শট শাখতার ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিকবদল করে ঢুকে যায় জালে। কিন্তু ভিএআর সিদ্ধান্ত দেয়, সেই সময় ভিনিসিয়াস শাখতার গোলরক্ষকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বল না ধরলেও তাই ভিশন ব্লক করার জন্য বাতিল হয়ে যায় রিয়ালের গোল। নিজেদের মাঠে গত সাতটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচের মাত্র একটিতেই জয় পেল রিয়াল, হেরেছে সর্বশেষ দুইটিতেই। তার চেয়েও বড় কথা, চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বকালের সফলতম দলের শুরুটা হলো দুঃস্বপ্নের মতো।