কিক অফের আগে : রোনালদোর অনুপস্থিতিতে রঙ হারানো ম্যাচে কোমান-পিরলোর প্রমাণের পরীক্ষা
কবে, কখন
জুভেন্টাস-বার্সেলোনা
চ্যাম্পিয়নস লিগ, গ্রুপ পর্ব
অ্যালিয়াঞ্জ স্টেডিয়াম, তুরিন
২৯ অক্টোবর, রাত ২.০০
এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপপর্বের ড্রয়ের পর সব আকর্ষণ কেড়ে নিয়েছিল গ্রুপ। বার্সেলোনা আর জুভেন্টাস ম্যাচ ছাপিয়ে আড়াই বছর পর লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মুখোমুখি লড়াই দেখতেও উন্মুখ হয়ে ছিলেন সবাই। কিন্তু আপাতত এ দফায় তুরিনে আর দুই মহারথীকে এক মাঠে দেখা যাচ্ছে না, অপেক্ষা বাড়ছে অন্তত ডিসেম্বরের ফিরতি লেগ পর্যন্ত। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোনালদো সেরে ওঠেননি, তাকে ছাড়াই বার্সার বিপক্ষে খেলবে জুভেন্টাস।
অক্টোবরের ১৩ তারিখ রোনালদো পর্তুগালের হয়ে খেলার সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখনই রোনালদোর না থাকাটা একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এলে অবশ্য এই ম্যাচে থাকার সম্ভাবনা ছিল রোনালদোর। তবে কপালটা তার মন্দই, সবশেষ পরীক্ষাতেও পজিটিভই এসেছে রোনালদোর ফল।
রোনালদোর অনুপস্থিতিতে জুভেন্টাস-বার্সা ম্যাচও তাই স্বাভাবিকভাবেই রঙ হারিয়েছে অনেকখানি। তবে এরপরও ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণই। দুই দলের নতুন দুই কোচ এখনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়েই রয়েছেন। দুই দলই চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে। তবে লিগের শেষ ম্যাচে তিন ম্যাচে জিততে পারেনি কেউই। আন্দ্রেয়া পিরলোর জুভেন্টাস লিগে টানা তিন ম্যাচ পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। এর ভেতর দুই ম্যাচে রোনালদোকে পাননি পিরলো। রোনাল্ড কোমান পিরলোর চেয়ে অভিজ্ঞ, মেসিকেও প্রতি ম্যাচে পেয়েছেন তিনি। কিন্তু তার অবস্থা আরও বেগতিক, মেসিও নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। লিগের শেষ তিন ম্যাচে সম্ভাব্য ৯ পয়েন্টের ভেতর বার্সা পেয়েছে মাত্র ১ পয়েন্ট।
কোমানের দলের সবচেয়ে বড় ক্ষতটা মাত্র তিনদিন আগের। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ৬০ পর্যন্ত দারুণ খেলেও পরে ৩-১ গোলে হেরেছে বার্সা। কোমানও তাই চাপে পড়ে গেছেন নতুন করে। রিয়ালের পর এখন আবার জুভেন্টাসের বিপক্ষে কঠিন আরেকটি পরীক্ষা দিতে হবে কোমানকে।
রোনালদো নেই বলে কোমানের দুশ্চিন্তা কমারই কথা ছিল। কিন্তু নিজের দল নিয়েই তো ঝামেলার অন্ত নেই কোমানের। ফিলিপ কৌতিনহো চোটের কারণে বাদ পড়ে গেছেন। কোমানও তাই পূর্ণশক্তির দল পাচ্ছেন না। আর তার কৌশল নিয়ে পুরোনো প্রশ্নটা তো থেকেই যাচ্ছে।
কোমানের বার্সা খেলছে ৪-২-৩-১ ফরমেশনে। তাতে ডাবল পিভোটের ভূমিকায় আছেন সার্জিও বুসকেটস আর ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং। কিন্তু এই দুইজনের সমন্বয় এখনও ছন্দ তুলতে পারেনি বার্সায়। বুসকেটস বয়সের সঙ্গে গতি হারিয়েছেন, সেটা এল ক্লাসিকোতেও স্পষ্টভাবে বার্সার দুর্বলতা ফুটিয়ে তুলেছে। আক্রমণভাগের ৪ জন খেলোয়াড়ের ভেতরও রোটেশন আর বলের আদান-প্রাদান এখনও পরিপক্কতা পায়নি। আনসু ফাতি, পেদ্রির মতো তরুণরা ভাল কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বটে, কিন্তু সিনিয়ররা তাদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন কই? মেসি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে শুরুটাই করেছেন এই মৌসুমে। এখনও ওপেন প্লে থেকে গোলের খাতা শূন্য তার। আন্টোয়ান গ্রিযমান প্রায় দেড় বছর পরও একাদশের অবিচ্ছ্যেদ্য অংশ হতে পারেননি। এরওপর কৌতিনহোর না থাকা কোমানকে ফেলে দিয়েছে বিপদে।
বার্সায় যখন উদ্বেগ বাড়ছে কোমানকে নিয়ে। পিরলোকে নিয়ে অবশ্য এখনও তেমন শোরগোল ওঠেনি। বরং তার দলের আক্রমণাত্মক ফুটবল প্রশংসিতই হয়েছে। তবে দল নিয়ে পিরলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষাটা 'অতরিক্ত' হয়ে যাচ্ছে কি না সে প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠে গেছে।
পিরলো নিয়মমাফিকই জুভেন্টাসকে খেলাচ্ছেন তিন জনের ব্যাক লাইনে। এই ম্যাচেও অন্তত এই ছকে তার দলের পরিবর্তন আসার কথা নয়। কোমানকে অবশ্য পরিবর্তন করতেই হবে। কৌতিনহোর জায়গায় খেলার মতো কেউ আপাতত নেই কোমানের হাতে। মেসি যদি ওই পজিশনে খেলেন, তখন আবার মিডফিল্ডে আরেকটু রক্ষণাত্মক হতে হবে তাকে। সঠিক সামাঞ্জস্যটা খুঁজে বের করাই আপাতত কোমানের জন্য পরীক্ষা।
এই ম্যাচে কোমান-আর পিরলোই এখন আতশ কাঁচের নিচে। অথচ হওয়ার কথা উলটো। রোনালদো থাকলে ম্যাচের গল্পটা বদলে যেত অন্যভাবে। সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতেন দুইজনই, ম্যাচের পরও চলত সেই আলোচনা। রোনালদো-মেসির ম্যাচ বাদ দিয়ে এখন তাই এই লড়াই কোমান আর পিরলোরই।
দলের খবর
রোনালদোর সঙ্গে পিরলো এই ম্যাচে পাচ্ছেন না অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জর্জিও কিয়েলিনিকে, নেই আরেক ডিফেন্ডার ম্যাথিয়াস ডি লিটও। অ্যালেক্স সান্দ্রো তো আগেই বাদ পড়েছেন চোটের কারণে। লিওনার্দো বনুচ্চির সঙ্গে মারেহ ডেমিরাল আর দানিলোর থাকার কথা জুভেন্টাসের রক্ষণে। আর উইংব্যাকের ভূমিকায় খেলবেন কিয়েসা ও হুয়ান কুয়াদ্রাদো।
আক্রমণভাগে পাউলো দিবালা এখনও নিয়মিত হতে পারেননি পিরলোর অধীনে। লিগের শেষ ম্যাচে অবশ্য প্রথমবারের মতো একাদশে ছিলেন তিনি। রোনালদো অনুপস্থিতিতে বার্সার বিপক্ষেও আলভারো মোরাতার সঙ্গে জুভেন্টাসের আক্রমণভাগে থাকার কথা তার। কিন্তু দিবালা একাদশে থাকলে জায়গা হারাতে পারেন ফর্মে থাকা তরুণ উইঙ্গার দেয়ান কুলুসেভস্কি জায়গা হারাতে পারেন। এই দুইজনকে একসঙ্গে খেলানোর কোনো উপায় পিরলো বের করতে না পারলে একাদশে দুইজনেরই থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ফেরেঙ্কভারোসের বিপক্ষে বার্সার ৫-০ গোলে জয়ের ম্যাচে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল জেরার্ড পিকেকে। এই ম্যাচে তাই তিনি নেই। উরুগুইয়ান তরুণ ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউহোর খেলার কথা ক্লেমেন্ত ল্যাংলেটের সঙ্গে।
কৌতিনহোর অনুপস্থিতিতে নাম্বার টেনের ভূমিকায় ফেরার কথার মেসিরই। সেক্ষেত্রে ফাতিকে মূল স্ট্রাইকারের পজিশনে খেলিয়ে তার সঙ্গে গ্রিযমান আর উসমান দেম্বেলেকে শুরু থেকেই দেখা যেতে পারে বার্সার স্কোয়াডে। আর বুসকেটসের জায়গায় মিডফিল্ডে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে শুরু থেকেই থাকার কথা মিরালেম পিয়ানিচের। বসনিয়ান মিডফিল্ডার ফেরেঙ্কভারোসের বিপক্ষেও ছিলেন বার্সার একাদশে।
সম্ভাব্য একাদশ
জুভেন্টাস
সেজনি, ডেমিরাল, বনুচ্চি, দানিলো, কিয়েসা, বেন্টাঙ্কুর, রাবিও, কুয়াদ্রাদো, রামসে, দিবালা, মোরাতা
বার্সেলোনা
নেতো, ডেস্ট, আরাউহো, ল্যাংলেট, আলবা, পিয়ানিচ, ডি ইয়ং, মেসি, দেম্বেলে, গ্রিযমান, ফাতি
হেড টু হেড
২০১৫ সালে পিরলো চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে বার্সার মুখোমুখি হয়েছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে। যদিও ওই স্মৃতিটা তার জন্য সুখকর নয়। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার শেষ সুখস্মৃতি হয়ে আছে ওই মৌসুম। এরপর ২০১৬-১৭ মৌসুমে কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্টাসের কাছে হেরে বাদ পড়েছিল বার্সা। পরের বার গ্রুপপর্বে আবার দুইদল ছিল একই গ্রুপে। সেবার ন্যু ক্যাম্পে ৩-০ গোলে জুয়ের পর তুরিনে গোলশূন্য ড্র করেছিল বার্সা। এরপর প্রথমবারের মতো একে অপরের বিপক্ষে খেলবে দুই দল।
প্রেডিকশন
জুভেন্টাস ১-২ বার্সেলোনা