সব কন্ডিশনে টেস্ট ব্যাটিংয়ের উন্নতি- নতুন এইচপি কোচের মূলমন্ত্র
মাহমুদুল হাসান জয় যেন ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। রানতাড়ায় পরপর দুই ওভারে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলেছে তার দল, একদিকে ইমরুল কায়েস খেলছেন একের পর এক শট। তবে তিনি ধীর, স্থির, ধরে রেখেছেন উইকেট। শেষ পর্যন্ত বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে তার ইনিংস হয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ একাদশের জয়ের ভিত, ফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকলো তারা, জিতলো পরে শিরোপাও।
জয় এরপর যোগ দিয়েছেন এইচপি বা হাই-পারফম্যান্স ক্যাম্পে। এই দলের শুরুতে যাওয়ার কথা ছিল জাতীয় দলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সফরে, সেখানে টেস্ট সিরিজের জন্য জাতীয় দলকে সহায়তার পর আলাদা ক্যাম্প করার কথা ছিল তাদের। সে সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশেই শুরু হয়েছে প্রস্তুতি ক্যাম্প। এর আগে জয়সহ এইচপি স্কোয়াডের বেশ কয়েকজন খেলেছেন বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে।
সেই ওয়ানডে টুর্নামেন্টই ছিল তাদের জন্য অনেকদিন পর ক্রিকেটে ফিরে ম্যাচ খেলার সুযোগ। তবে সে টুর্নামেন্ট পেরিয়ে এখনকার ক্যাম্পে তাদের নজর লাল বলের দিকেই, জানিয়েছেন নতুন এইচপি হেড কোচ টবি র্যাডফোর্ড। তার উদ্দেশ্য লাল বলে পোক্ত হওয়ার সঙ্গে সাদা বলেও ভাল খেলতে পারবেন, এমন একটা গ্রুপ তৈরি করা। বিশ্বের যে কোনো কন্ডিশনে দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেটের জন্য যাতে উপযুক্ত হতে পারেন, এমনভাবেই তাদেরকে তৈরি করতে চান তিনি।
হাই-পারফরম্যান্স স্কোয়াডের ক্যাম্পে আফিফ হোসেন ধ্রুব, আকবর আলি ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন (বাঁ থেকে)/ছবি বিসিবি
বাংলাদেশের বাস্তবতাটা সরাসরিই অবশ্য দেখেছেন র্যাডফোর্ড। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুই টেস্টে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, ৪ ইনিংসে একবারও ২০০-ই পেরুতে পারেনি তারা। তবে সে দলই যখন সীমিত ওভারে শুরু করলো, পাত্তা দিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সে সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করা র্যাডফোর্ড বদলাতে চান সেই চিত্রটা।
“আমি বোর্ডকে বলেছি, এমন একটা গ্রুপ তৈরি করতে চাই, যারা টেস্ট ক্রিকেটে দাঁড়াতে পারবে”, ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন র্যাডফোর্ড। “টেকনিকের দিক দিয়ে দৃঢ় হবে, ঘন্টায় ৯০ মাইল গতির বল খেলতে পারবে, ৪-৫ ঘন্টা ব্যাটিং করতে পারবে। লম্বা স্পেলে বোলিং করতে পারবে। এই ক্যাম্পের পুরোটাই লাল বলের। বোলিং মেশিন সেভাবেই সেট করা হয়েছে।”
“এখানকার কোচদের মতে, তরুণরা সেভাবে লাল বলের ক্রিকেট খেলে না। মানসিকতাই এমন, যে সবসময় রান করতে হবে। তবে সমস্যাটা হলো, যখন তিনটা স্লিপ আর গালি থাকবে, বিপক্ষ দলের বোলার তেঁড়েফুঁড়ে আসবে, আপনি তখন বলের পেছনে থেকে সেটা ছেড়ে দিতে চাইবেন, বলের লাইনে যেতে চাইবেন না।”
“তরুণরা অনেক টি-টোয়েন্টি দেখে। টি-টোয়েন্টিতে অনেককেই অনেক টাকা কামাতে দেখে। তবে আমি শুধু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার তৈরি করতে চাই না, বরং এমন টেস্ট ক্রিকেটার চাই, যারা টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেট ভাল খেলতে পারে। আমার মতে, টেস্ট ক্রিকেটাররাই বিশ্বের সেরা। টুর্নামেন্টে এদের খেলা নিয়ে আমার কোনোই সমস্যা নেই, তবে আমি তাদেরকে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় লাল বলে ভাল খেলতে দেখতে চাই।”
কেন উইলিয়ামসন, বেন স্টোকস, বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথের উদাহরণ টেনে র্যাডফোর্ড বলেছেন, বিশ্বের সেরা ক্রিকেটাররা সব ফরম্যাটেই ভাল।
“এই পুরো সময়টাই তাদের জন্য টেকনিকের জন্য, তাদের পরীক্ষা করার জন্য, যাতে তারা টেস্ট দলে খেলতে পারে। তাদের (স্টোকস, কোহলিদের) সবারই বেসিক টেকনিক খুবই ভাল, আর একবার সেটা এলে আপনি টি-টোয়েন্টির ‘ফাঙ্কি’ ব্যাপারগুলি তৈরি করতেই পারবেন।”
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মিডলসেক্সের একাডেমিতে কাজ করা র্যাডফোর্ডের এখনকার স্কোয়াডের বেশ কয়েকজন আছেন বাংলাদেশের হয়ে অ-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের। আলাদা করে কারও কথা বলেননি তিনি, তবে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সবাই দিনের শেষে জেসন হোল্ডার বা অইন মরগান হবেন না। তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যত এই গ্রুপটার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে, সেটি মনে করেন তিনি।
এইচপি দলের সামনে সিরিজ হওয়ার কথা আয়ারল্যান্ড এ দলের সঙ্গে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এখনও নিশ্চিত হয়নি কিছুই, তবে র্যাডফোর্ডের ইচ্ছা, এই দলকে নিয়ে ইংল্যান্ড যাওয়া, সেখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
“আমার মনে হয়, এটাই অনেক বড় শিক্ষা হবে, বাংলাদেশ বা এশিয়ার বাইরের কন্ডিশনে গিয়ে খেলা। সফরে গেলে আসলে শেখা হয় বেশি। শুধু করার জন্য করে গেলাম, এভাবে উদ্দেশ্য ছাড়া আসলে অনুশীলন হয় না। এই প্রোগ্রামটা ঠিকঠাক করতে হয়, যেখানে শারীরিক, ট্যাকটিকাল ও মানসিক দিক দিয়ে একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার তৈরি করা যাবে।”