করোনা-পজিটিভ জেমি ডে, মাঠে দর্শকের জোয়ার ও কিছু প্রশ্ন
পিলপিল করে মাঠে ঢুকছে দর্শক। গ্যালারির এক অংশে প্রায় ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। খেলা ফিরেছে মাঠে, গ্যালারিভরা দর্শককে ফুটবলের জাগরণের জোয়ার হিসেবে দেখাই যায়। কিন্তু জোয়ারটা সেই সঙ্গে বোধ হয় করোনা ভাইরাসেরও, যে সত্যিটা এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর।
শুক্রবার বাংলাদেশ-নেপালের ম্যাচের আগেই সিদ্ধান্ত হয়, গ্যালারিতে ‘সীমিত আকারে’ দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সেখানে বাফুফের যুক্তি ছিল, স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা দর্শকদের মাঠে প্রবেশের অনুমতি দিতে চায়। তবে পরের দিন সেই ‘সীমিত’ দর্শক হয়ে গেল প্রায় দ্বিগুণ। আট হাজার টিকিট বিক্রির অনুমতি দেওয়া হলেও মাঠে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার দর্শক ঢুকেছে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মানার সব উদ্যোগ একরকম ভেস্তে গেছে। ঢোকার সময় দর্শকেরা মাস্ক পরে ঢুকেছেন, জীবাণুনাশক দিয়ে হাতও পরিষ্কার করতে হয়েছে। কিন্তু মাঠে ঢোকার পর অনেকের মুখ থেকে মাস্ক উধাও। আর এতজন লোককে মাস্ক পরিয়ে রাখার কড়াকড়িও বাস্তবে অসম্ভব। বাংলাদেশের গোলের পর তাই মাস্ক ছাড়াই চলেছে উল্লাস। করোনা-ভাইরাস বলে যে কিছু আছে, সেদিন মাঠ বা গ্যালারি কোথাও সেটা টের পাওয়ার উপায় ছিল না। বাফুফের ‘সীমিত’ দর্শক তাই দিন শেষে হয়ে গেছে প্রহসন। টিকিট-চেকারদের অসাধুতায় হয়তো এই দ্বিগুণ দর্শক ঢুকে পড়েছে, কিন্তু সেই দায় কি দিন শেষে বাফুফে এড়াতে পারে?
তবে আরও ভয়ানক ব্যাপার চোখে পড়েছে মাঠে। বাফুফের বড় কর্তাদের দেখা গেছে মাঠের নিচে নেমে যেতে। সেখানে তাদের সঙ্গে ঢুকে পড়েছেন আরও অজানা কত লোক। খেলোয়াড়দের যে বাবলের মধ্যে থাকার কথা, সেটা ও কতটা মানা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাঠে যারা খেলেছেন, তাদের মুখে মাস্ক ছিল না স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু বাবলের বাইরে থাকা অনেককেই যে কাছাকাছি চলে যেতে দেখা গেছে তাদের!
জেমি ডের করোনা-ভাইরাস পজিটিভ হওয়ার ব্যাপারটাও অনুমান করা যায়। বাংলাদেশে আসার পরেই নেপালের একজনের কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার খবর আসে। সৌভাগ্যবশত, নেপাল দলের বাকিদের নেগেটিভ আসে, তাই খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ম্যাচের আগের দিন নেপাল দলের কোচ যেখানে সংবাদ সম্মেলন করেন, জেমি ডে সেখানে করতে চাননি। এমনিতে বায়ো-বাবলের মধ্যে থাকা অবস্থায় এই সংবাদ সম্মেলন ভার্চুয়ালিই করার নিয়ম। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে জেমি ডের সেই সম্মেলন হলো জনাকীর্ণ কক্ষে। বাফুফে মিডিয়া ম্যানেজার বার বার জেমি ডের কাছে কাউকে আসতে বারণ করলেও সর্বনাশটা হয়তো সেখানেই হয়ে গেছে। যদিও জেমি ডে বলছেন, তার সামান্য ঠাণ্ডা লেগেছে। তবে উপসর্গহীন করোনা যেভাবে হচ্ছে, তাতে এই সামান্য ঠাণ্ডাই এখন করোনা-সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট বড় উপসর্গ।
শুধু বাফুফের দোষ দিয়েই বা লাভ কী, খেলোয়াড়েরাই বা কতটা সচেতন? ম্যাচের পর জামাল ভুঁইয়াকে দেখা গেছে গ্যালারির কাছে গিয়ে একজনের কাছ থেকে পতাকা নিয়ে ছবি তুলতে। অথচ তাদের জন্য কঠোরভাবে বাবলের বাইরে থাকা কারও কাছাকাছি না যাওয়ার কথা।
তবে সবকিছুর পর দর্শকদের এই ঢালাওভাবে ঢুকতে দেওয়ার ব্যাপারটাই বার বার আসছে সামনে। বিশেষ করে সরকারীভাবে এখনও গণসমাগম নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও স্টেডিয়ামে কীভাবে সেই অনুমতি দেওয়া হলো, সেটাও বড় প্রশ্ন। জেমি ডের কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পর বাফুফের সামনে এখন এমন অনেক প্রশ্নই ঝুলছে। কিন্তু উত্তরগুলো কি পাওয়া যাবে?