তেজে রূপান্তরিত চাপ
এক বছর আগে থেকে একটা নির্দিষ্ট দিন তথা একটা নির্দিষ্ট ম্যাচের কথা যদি বারংবার মনে করিয়ে দেয়া হয় আপনাকে, আর সেই ম্যাচটা যদি হয় ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত লড়াই, কি পরিমাণ চাপে থাকবেন আপনি ঐ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নামার সময়? জবাবটা একেকজনের কাছে হয়তো একেকরকম। তবে যদি আপনি বলেন কোনরকম চাপই আপনার উপর থাকবে না, নিশ্চিতভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না সে উত্তর। কারণটা এক কথায়ই বলে দেয়া যায়। শচিন রমেশ টেন্ডুলকার চাপে ছিলেন সেদিন, ভয়াবহ রকমের চাপ অনুভব করার কথা নিজের মুখে স্বীকার করেছেন তিনি।
কথা হচ্ছে ২০০৩ বিশ্বকাপের ‘পুল-এ’-এর একটা ম্যাচ নিয়ে। পহেলা মার্চের সেই লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। আর সেই দিনটার কথা এক বছর আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন সাংবাদিকরা সহ আরও অনেকে। ম্যাচ শুরুর আগে স্বীকার না করলেও পরে মুখ খুলেছেন এ বিষয়ে। পহেলা মার্চের আগের ১২টা রাত ঠিকমত ঘুমাতে পর্যন্ত পারেননি তিনি।
চাপটা আরও বেড়েছে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান ২৭৩ রান স্কোরবোর্ডে তুলে ফেলার পর। রান তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে পরপর তিনটি শট- ম্যাজিকের মত উধাও হয়ে গেল সম্পূর্ণ চাপ, সমূলে।
ভারতের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার, শোয়েব আকতারের প্রথম। তিন শটের প্রথমটি আসে এ ওভারের চতুর্থ বলে। অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে খাটো লেংথের সেই বলটিতে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কখনোই হয়তো ব্যাট-স্পর্শ করতেন না শচিন। ব্যাটে না লাগালে নির্ঘাত ওয়াইড হত সেটি। চাপের কারণেই হয়তোবা, ব্যাট অনেকটা বাড়িয়ে প্রচণ্ড আগ্রাসন নিয়ে কাট করলেন তিনি। ফলাফল? স্কয়ার থার্ড ম্যান অঞ্চলের অনেক উপর দিয়ে বিশাল ছয়।
পরবর্তী শটটি ছিল শচিনের ‘ট্রেডমার্ক’ শট- পেছনের পায়ে ভর করে চমৎকার লাইনের রীতিমত ভালো একটা বলকে কব্জির মোচড়ে স্কয়ার লেগের দিকের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া। তবে একেবারেই অত্যাশ্চর্যজনক ছিল তৃতীয় শটটি। দুলকি চালে অফ-স্ট্যাম্পের দিকে একটু সরে এসে মনে হল যেন ‘ব্লক’ করলেন বলটাকে। না ছিল কোন ‘ব্যাক-লিফট’, না ‘ফলো-থ্রু’। অথচ ফলাফলটা ছিল বিস্ময়কর। অন সাইড দিয়ে বিদ্যুৎগতিতে সীমানা পার হয় বলটা।
২৮তম ওভারে শোয়েবের বলেই ইউনুস খানের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে টেন্ডুলকারের রান ছিল ৭৫ বলে ৯৮। আর দলীয় রান তখন ৪ উইকেটে ১৭৭। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১৩৪ বলে ৯৭ রান তুলে নিতে এরপর আর কোন কষ্টই হয়নি ভারতীয়দের। আর ম্যাচসেরা কে হয়েছেন, এটা বুঝে নিতে কারোরই খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা নয়। ছবি-সূত্রঃগেটিইমেজেস