শেষ মুহুর্তের চাপ সামলে বাংলাদেশের শিরোপা উদযাপন
ফুলটাইম
বাংলাদেশ ০-০ নেপাল
ম্যাড়মেড়ে প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা প্রাণ ফিরেছিল খেলায়। মাঠে ঢুকে পড়া অনাহুত এক সমর্থকও রঙ চড়িয়েছিলেন। তখন পর্যন্ত সেটিকেই মনে হচ্ছিল ম্যাচের 'সেরা ঘটনা'। কিন্তু যোগ করা সময়ে আরেকটু হলেই বাংলাদেশের বুকে ছুরি বসিয়ে দিতে পারত নেপাল। বদলি নাওয়াউং শ্রেষ্ঠার হেড গিয়ে লেগেছিল বাংলাদেশের বারপোস্টে। একটু এদিক-সেদিক হলেই সেটা গোলে পরিণত হতে পারত। এরপর শেষ বাঁশি বাজাতে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ম্যাচ শেষের আতশবাজি তাই বিষাদ মনে উপভোগ করতে হয়নি আর সমর্থকদের। প্রথম ম্যাচের জয় পুঁজি করে দ্বিতীয় ম্যাচে গোলশুন্য ড্রয়ের পর মুজিববর্ষ আন্তর্জাতিক ফুটবল সিরিজের শিরোপাটা পেয়েছে বাংলাদেশই। আমেজটাও থেকেছে অটুট। কিন্তু বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে পুরোনো সংশয়গুলো থেকেই গেছে।
নেপালের বিপক্ষে যোগ করা সময়ে চাপেই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। নাওয়াউং-ও হেড করেছিলেন এক সেটপিস থেকে। সেটপিস আর শেষদিকে স্নায়ুর কাছে হেরে মনোযোগের ঘাটতি- পুরোনো বদনামগুলো আরেকটু হলেই গ্রাস করতে পারত বাংলাদেশকে। কাতার ম্যাচের আগে বাংলাদেশও শেষ করল আনুষ্ঠানিক 'প্রস্তুতি'। ৪ ডিসেম্বর কাতারের বিপক্ষে খেলার আগে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই বাংলাদেশের। প্রস্তুতিটা কেমন হলো সেটা নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকেই গেল।
বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের কাঁটাছেড়া অবশ্য কোচ জেমি ডেকে করতে হয়েছে হোটেলে থেকেই। টিভিতে খেলা দেখেছেন তিনি। আর ডাগআউটে তার দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন স্টুয়ার্ট ওয়াটকিস। জেমির সহকারি খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে যাননি। আগের ম্যাচের ছকেই নেপালের বিপক্ষে খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ।
গোলবারের নিচে আশরাফুল ইসলাম রানা ফিরেছিলেন, ইয়াসিন খান রক্ষণে নেমেছিলেন রিয়াদুল হাসানের জায়গায়। বাংলাদেশের একাদশে পরিবর্তন ছিল এই দুইটিই। বড়সড় পরিবর্তন না এলেও বাংলাদেশের খেলায় এদিন পরিবর্তন দেখা গেল। সেটা অবশ্য ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিল না। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ খাপছাড়া ফুটবলই খেলল। এর ভেতর গোলের সুযোগ এলো দুইবার। দুইবার সেটা পেলেন সুমন রেজা। প্রথমবার বক্সের বাইরে থেকে বাম পায়ের গতিশীল শটে অল্পের জন্য লক্ষ্য মিস করে গেলেন। দ্বিতীয় দফায় নাবিব নেওয়াজ জীবনের ডান প্রান্ত থেকে করা ক্রস ভালো জায়গা থেকে পা ছোঁয়াতে পারলেন না। এছাড়া বলার মতো আক্রমণ বাংলাদেশ পেল কমই।
নেপালের একাদশে পরিবর্তন ছিল ৫টি। তারা যে খুব আহামরি ফুটবল খেলেছে তেমনও নয়। তবে করোনা থেকে ফেরা রণজিৎ ধিমাল বাঁঁ প্রান্ত ধরে শুরু থেকেই বিশ্বনাথকে ভালোই পরীক্ষায় ফেললেন। তিনি আক্রমণে বেশি সচেষ্ট ছিলেন। বাংলাদেশও তাই ওই প্রান্ত ধরেই আক্রমণ সাজানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু নেপালের রক্ষণ আগের ম্যাচের মতো ছন্নছাড়া ভাবটা কাটিয়ে উঠল ভালোমতোই। আঁটসাঁট রক্ষণ ভাঙতে বাংলাদেশকে তাই বেগ পেতে হলো পুরো ম্যাচ।
নিজেদের রক্ষণ ঠিক রেখে নেপাল বাংলাদেশের রক্ষণে কয়েকবার হুমকি দিয়ে গিয়েছিল প্রথমার্ধে। প্রায় সবগুলো আক্রমণের কেন্দ্র ছিলেন নাওয়াউং। মাঠে তার নামটাই ছিল অবশ্য চমক। ম্যাচের ১৮ মিনিট না যেতেই তাকে বদলি হিসেবে নামিয়েছিলেন নেপাল কোচ বাল গোপাল মহারাজন। তবে প্রথমার্ধে পরিস্কার সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন নেপাল ডিফেন্ডার অনন্ত তামাং। কর্নার থেকে প্রায় ফাঁকায় থেকেও তিনি হেড মেরেছিলেন বাইরে দিয়ে।
বিরতির পর আরও একবার মাহবুবুর রহমান সুফিল সুমনের বদলি হয়েই মাঠে নামলেন। সুফিল নেমে গতির ঝঙ্কার তুললেন ঠিকই, কিন্তু তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারলেন না কেউ। নেপাল সেন্টারব্যাক বিকাশ খাওয়াস দুইবার ভুল করে বাংলাদেশের পাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। সেই ভুলের সুযোগ বাংলাদেশ আর নিতে পারেনি। একবার সাদ উদ্দিন বাজে ফার্স্ট টাচে বল হারিয়েছেন, আরেকবার জীবন বাইলাইনের কাছে গিয়ে কাটব্যাকটা করতে দেরী করে ফেলেছিলেন। গোলে শট নেওয়া পর্যন্তও তাই আর যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। মোটা দাগে মিডফিল্ডের সঙ্গে আক্রমণভাগের সংযোগ ঘটাতেই বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।
ম্যাচের সময় ঘন্টাখানেক পার হওয়ার পর আগের ম্যাচে মতোই ডাবল চেঞ্জ বাংলাদেশের। মানিক হোসেন মোল্লা অবশ্য এদিন মাঠ ছাড়লেন মোহাম্মর ইব্রাহিমকে সঙ্গে নিয়ে। জামাল ভূঁইয়া খেললেন পুরো ম্যাচ। আর মাঠে নামলেন সোহেল রানা ও বিপলু আহমেদ। কিন্তু ওই দুই বদলি ম্যাচে প্রভাব ফেলল সামান্যই।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে এদিনও মাঠ ভর্তি করে দর্শক ঢুকল করোনাভাইরাসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। অবশ্য এক সমর্থক গেলেন আরও কয়েক কাঠি দূরে। গ্যালারি ফেন্স টপকে ঢুকলেন মাঠে। অ্যাথলেটিক ট্র্যাক পেরিয়ে এরপর সোজা বাংলাদেশ অধিনায়ক জামালের কাছে চলে গেলেন তিনি। সামাজিক দূরত্ব, বায়োবাবল এসব শব্দ ততোক্ষণে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন সেই সমর্থক। জামাল আবদার রাখতে চাইলেন না, কিন্তু সেলফিটা তোলা হয়ে গেল ঠিকই। এরপর পুলিশ এসে সেই সমর্থককে টেনে বের করে নিয়ে গেলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক বঙ্গবন্ধুতে।
ম্যাচের শেষদিকে বাংলাদেশ একরকম হাল ছেড়ে দিয়েছিল। খেলোয়াড়দের ফিটনেস ঘাটতি তখন নজর কেড়েছে ভালোমতোই। নেপাল অবশ্য হাল ছাড়তে চায়নি এবার। শেষ পর্যন্ত ম্যাচে একটা ফল বের করে আনার চেষ্টা করে গেছে তারা। কপালটা এদিন বাংলাদেশের জন্য 'মন্দ' যায়নি। তবে ভালো কিছুর ইঙ্গিতও দিয়ে যায়নি এই ম্যাচ। কাতারের বিপক্ষে ভালো একটা লড়াই করতে আগের সবগুলো ম্যাচে হারতেও রাজি ছিলেন জেমি ডে। হোটেল রুম থেকে দলের এই পারফরম্যান্সে খুব বেশি সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয় তার। কে জানে কাতারে কোন ভাগ্য অপেক্ষা করছে তার জন্য!
বাংলাদেশ একাদশ
আশরাফুল ইসলাম, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইয়াসিন খান, তপু বর্মণ, রহমত মিয়া, জামাল ভূঁইয়া, মানিক হোসেন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নাবিব নেওয়াজ, সাদ উদ্দিন, সুমন রেজা
নেপাল একাদশ
কিরণ কুমার, অনন্ত তামাং, রানজিত ধিমাল, গুরুং, অরিক বিস্তা, তেজ তামাং, অঞ্জন বিস্তা, সুজল শ্রেষ্ঠ, ভারাত খাওয়াস, দর্শন, বিকাশ খাওয়াস