কিক অফের আগে : মরিনহো-গার্দিওলার পুরোনো ঝাঁঝ, সংকটে শক্তি দেখানোর ইচ্ছা লিভারপুলের
প্রিমিয়ার লিগে শীর্ষস্থানে অদল-বদলের অন্তত দুইটি ম্যাচ রয়েছে এ সপ্তাহে। পেপ গার্দিওলা ও মরিনহো মুখোমুখি হচ্ছেন আগে। এরপর শীর্ষে থাকা লেস্টার সিটি খেলবে লিভারপুলের বিপক্ষে।
আবার মরিনহো-গার্দিওলা, এবার অন্যভাবে
ফুটবল কীভাবে বদলে যায় সেটা পেপ গার্দিওলা আর হোসে মরিনহোর চেয়ে ভালো খুব অল্প লোকেই জানেন। মাত্র এক মাস আগেও গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। আর তারও কয়েক মাস আগে হোসে মরিনহোর বিখ্যাত 'দ্বিতীয় মৌসুমটাই' টটেনহাম পায় কি না সেই সংশয়ও দেখা দিয়েছিল। দুই কোচ এখন আবার এক বিন্দুতে, ডাগ আউটে আবার দেখা হচ্ছে দুইজনের। এখন পুরনো সমীকরণ বদলে গেছে। গার্দিওলা সিটিতেই থাকছেন। আর মরিনহোর টটেনহাম স্বপ্ন দেখছে।
গার্দিওলা ও মরিনহো একই লিগে একে অপরের মুখোমুখি হচ্ছেন ষষ্ঠ মৌসুমে। এই ৬ মৌসুমের ভেতর মাত্র একবার মরিনহোর দল গার্দিওলাকে টপকে মৌসুম শেষ করতে পেরেছে। সেটাও ২০১১-১২ মৌসুমে। কিন্ত এবার মরিনহোর টটেনহাম সিটির বিপক্ষে খেলবে এগিয়ে থেকেই। ৮ ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা লেস্টার সিটির চেয়ে এক পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে মরিনহোর দল আছে দুই নম্বরে। বিপরীত অবস্থা সিটিতে। লিগে স্বভাববিরুদ্ধ এক শুরু করেছে সিটি। ৭ ম্যাচ শেষে তারা আছে পয়েন্ট টেবিলের দশে। এই সাত ম্যাচে গার্দিওলার দল জিতেছে মাত্র ৩টিতে, আর সবমিলিয়ে এবার সিটি গোল করতে পেরেছে মাত্র ১০টি। যেখানে হায়রি কেইন, হিউগ মিনসনরা মুড়ি-মুড়কির মতো গোল করে যাচ্ছেন, সেখানে সার্জিও আগুয়েরো-গ্যাব্রিয়েল হেসুসরা চোটমুক্ত থেকে নিয়মিত মাঠে নামতেই হিমশিম খাচ্ছেন। গার্দিওলার দলের কোনো গুণাগুণের ছাপ মাঠের খেলাতেও নেই, পয়েন্ট টেবিলেও নেই। সিটি তাই ধুঁকতে ধুঁকতে যাচ্ছে টটেনহামের মাঠে।
তবে দুই কোচের পুরোনো ঝাঁঝ অবশ্য কমেনি। ইংল্যান্ডের শেষ ম্যাচে রাহিম স্টার্লিংকে বিশ্রামে রেখেছিলেন গ্যারেথ সাউথগেট। ইংলিশ কোচ নাকি পেপ গার্দিওলার পরামর্শে খেলোয়াড়কে বিশ্রাম দিয়েছেন- মরিনহো ম্যাচের আগে এমন অভিযোগ করেছেন। গার্দিওলা অবশ্য এই ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে চাননি, "আমার তো মনে হয় মরিনহো নিজেই ডাক্তার হয়ে গেছেন.... দেখুন মরিনহোর ব্যাপারে আমি কিছুই বলব না। আমি ডাক্তারের কথা বলেছি কারণ আমাদের অকারণে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এসব নিয়ে আপনারা ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলুন। আমার বয়স এখন প্রায় ৫০, এগুলো বোঝার মতো ক্ষমতা আমার হয়েছে।" - এক দশক ধরে চলা মরিনহো গার্দিওলার কথার লড়াই এই এবারও নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এসব একদিকে সরিয়ে রেখেই অবশ্য মাঠে দুইদল খেলতে নামবে। গেলবার সিটির বিপক্ষে দুইটি ম্যাচই জিতেছিল টটেনহাম। সিটিতে দিয়ে কঠিন পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে মরিনহোর দলের। প্রিমিয়ার লিগে পরের ৭ ম্যাচের ৫টিতে টটেনহামের প্রতিপক্ষ চেলসি, আর্সেনাল, লিভারপুল, লেস্টার সিটি, উলভস। মরিনহোর দ্বিতীয় মৌসুমের জাদু এবার কতোখানি কার্যকরি তা হয়ত বড়দিনের আগেই নিশ্চিত হয়ে যাবে। মরিনহোর জন্য পরীক্ষাটা শুরু হচ্ছে সিটি ম্যাচ দিয়ে।
দলের খবর
স্টার্লিংকে নিয়ে সংশয় নেই কোনো। ফিটনেস পুনুরুদ্ধার করেই স্কোয়াডে ফিরেছেন তিনি। সার্জিও আগুয়েরোও আছেন দলে। গ্যাব্রিয়েল হেসুসের বদলে তারই একাদশে থাকার সম্ভাবনা বেশি। ফেরান তোরেস ও স্টার্লিং-কে আগুয়েরো সিটির গোলখরা কাটাতে পারেন কি না তার ওপর নির্ভর করছে ম্যাচের অনেককিছুই। আর কেইন, সন, গ্যারেথ বেলরাও ফিট আছেন। তারা যে সিটির রক্ষণের বড় পরীক্ষা নেবেন সেটা একরকম নিশ্চিতই।
সঙ্কটে আরও শক্তিশালী লিভারপুল?
আন্তর্জাতিক বিরতি লিভারপুলের হাহাকার ডেকে এনেছে। এমনিতেই ভার্জিল ভ্যান ডাইক লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে গিয়েছিলেন, ট্রেন্ট অ্যালেক্সান্ডার আর্নল্ড খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে শেষ ম্যাচে মাঠ ছেড়েছিলেন, ফাবিনহো আর থিয়া আলকান্তারাও ছিলেন না- দুই সপ্তাহ পর লিভারপুলের চোটে পড়া খেলোয়াড়দের তালিকা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে কেবল। করোনাভাইরাস ছিটকে দিয়েছে মোহামেদ সালাহকে, জর্ডান হেন্ডেরসন ও অ্যান্ড্রু রবার্টসনও যোগ হয়েছিলেন চোটে পড়াদের তালিকায়।
তবে এর মাঝে কিছু আশার আলো আছে। হেন্ডেসন, রবার্টসনদের চোট ভয়াবহ নয়। ফাবিনহো আর থিয়ায়গোও অনুশীলনে ফিরেছেন। এই চারজন লেস্টার সিটির বিপক্ষে খেলতে পারবেন কি না সেটা অবশ্য নিশ্চিত নয় এখনও। তবে এর ভেতরও ইউর্গেন ক্লপ ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে আসলে বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন তারাই প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন।
অজুহাত নয়, ক্লপ লেস্টার সিটির বিপক্ষে চান নিজেদের সেরা খেলাটা দিতে। প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটি এখন সবার ওপরে। লিভারপুলের সাবেক ম্যানেজার ব্রেন্ডন রজার্সের দল ৮ ম্যাচের ৬টিতেই জিতেছেন। ৮ ম্যাচের হিসেবে এটি লেস্টার সিটির ইতিহাসের সেরা শুরু। তবে ম্যাচটা অ্যানফিল্ডে। লিভারপুলের যতই বিপদ থাকুক, লেস্টার যতই প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকুক- এখানে লেস্টারের এগিয়ে থাকার সুযোগ নেই।
রজার্সের লেস্টারকে হারাতে পারলে লিভারপুল শীর্ষস্থানটাও ফেরত পেতে পারে চলতি সপ্তাহে। এই দল নিয়ে লিভারপুল শীর্ষে উঠলে সেটা বাকিদের জন্য একরকম হুঙ্কারের মতো শোনাবে।
দলের খবর
নিয়মিত ডিফেন্ডারদের অনুপস্থিতিতে ফাবিনহো একাদশে ফিরলে ডিফেন্সেই খেলার কথা তার। রাইটব্যাক আর্নল্ডের জায়গায় খেলতে পারেন নিকো উইলিয়ামস। মিডফিল্ডে কার্তিস জোনস ফিরতে পারেন লিভারপুলের একাদশে। আর সালাহ না থাকা আপাতত ক্লপের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না ডিয়েগো জোতার জন্য।
চোটে পড়া দল কিভাবে সামলাতে হয় তা অবশ রজার্সের ভালো জানা আছে। লিভারপুলের বিপক্ষে তাকে বড় পরীক্ষা দিতে হবে যদিও। তিনি টিমুথি কাস্তানিয়াকে এবার দলে ফিরে পাচ্ছেন।