জাকির-শাহনুরের ব্যাটিংয়ের পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে শিরোপা ওয়ারিয়র্সের
পরিবারের তিনভাই আছেন এ টুর্নামেন্টে। তার মাঝে একজনই আছেন প্রত্যক্ষভাবে ২২ গজের লড়াইয়ে। বাকি দুজনের ভুমিকাটা পরোক্ষ। তারা ব্যস্ত মুল লড়াইয়ের ছক তৈরিতে। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার রাজিন সালেহ একদলের কোচ, অন্য আরেকদলের কোচ তারঁ ভাই রেজাউল হক নাঈম। রাজিন সালেহর দল বিদায় নিয়েছে সেমিফাইনালেই, রেজাউল হক নাঈম সিলেট টি-২০ ব্লাস্টের চ্যাম্পিয়ন কোচ। চ্যাম্পিয়ন দলে তাদের আরেক ভাই সায়েম আলম রিজভী, তিনি ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট।
রিজভীর ক্যাচটা উঠল লং অফে, গেল সেমিফাইনালেও ঠিক এ জায়গায়ই উঠেছিল ক্যাচ। সেদিন ক্যাচ মিস হয়েছিল, হল এদিনও। তবে সেদিনের মতো রিজভীর রোষানলে এদিন পুড়তে হয়নি কুশিয়ারা রয়্যালসকে। তবে গেল ম্যাচে ৭৭ করা রিজভী এ ম্যাচে ২৪ করে আউট হলেও অধিনায়ক জাকির হাসানের সজাগ ও সাবধানী ব্যাটে শিরোপা উঠেছে ওয়ারিয়র্সের হাতেই।
রিজভীর সাথে জীবন পেয়েছিলেন তারঁ উদ্ভোধনী সঙ্গী এজাজও, তবে দুজনেই বেশি কিছু করার আগেই ফিরেছেন। রিজভী ১৮ তে জীবন পেয়ে আর মাত্র ৬ রানই করতে পেরেছেন। একসময়ে হওয়া রবি স্পিনার হান্টের দেশের সেরা স্পিনার নাঈমের ক্যাচ মিসে আল আমীন জুনিয়র প্রথমে রিজভীকে ফেরাতে না পারলেও তারঁ পরের ওভারেই দারুণ এক ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে শর্ট কাভারে ক্যাচ তুলিয়ে তিনি ঠিকই ফিরিয়েছেন রিজভীকে। রুয়েলের বলে তার আগে সহজ ক্যাচে এজাজ ৯ রানে জীবন পেয়ে আবার রুয়েলের বলেই মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১৫ করে। দুই ওপেনারকেই ফেরাতে ক্যাচ নিয়ে সাহায্যকর্তা মুক্তার আলী।
দলীয় ৩৯ রানে যখন এজাজ ফিরছেন, তখন ম্যাচের বয়স ৫.১ ওভার। সেসময়ে জাকির হাসান অধিনায়কের মতোই ইনিংস আগলে রেখেছেন একপাশে থেকে। ৪৮ রানে রিজভী ফেরার পর শাহনুরকে স্ট্রাইক রোটেটে মনোযোগী হয়ে বেশ ভালো সঙ্গ দিয়েছেন জাকির, শাহনুর চড়াও হওয়ার কাজটা সামলেছেন। অবশ্য সেসময়ে তাদের কিছুটা চেপেও ধরেছিলেন কুশিয়ারা রয়্যালসের বোলাররা। আল আমীন-আবিদ-নাঈমদের বলে বলপ্রতি রানও আসছিলো না জাকির-শাহনুর জুটি থেকে। সপ্তম ওভারে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পরের ৩২ বলে তারা আনতে পেরেছিলেন ২৯ রান। এর পরের দুই ওভারে দশোর্ধ্ব রান এনে যখন তারা চড়াও হচ্ছিলেন, তখন পর্যন্ত ইনিংস শুরু করা বাহাতি স্পিনার মাহবুব এক ওভারই বল করেছেন। ১৫ তম ওভারে এসে এরপর ২৭ বলে ২৯ করা শাহনুরকে ফিরিয়ে মাহবুব ভাঙ্গেন তাদের ৫১ রানের জুটি। প্রথম ওভারে ১০ রান দেয়া মাহবুবের দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে ম্যাচে তারঁ দেয়া রান উনিশের বেশি যায়নি। ১৯ রান দিয়ে তারঁ শিকার ৩ উইকেট।
সাবধানী জাকির হাসান একপাশ আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের আগের মাহবুবের ওভারে ২৯ রানে আউট হয়েছেন। ফরহাদ রেজা, আজাদ-সানজামুলদের ছোটখাটো ইনিংস বিধ্বংসী না হওয়াতে ইনিংসের প্রথমার্ধে ৬৫ আনা সিলেট সিটি কর্পোরেশন ওয়ারিয়র্স পরের অর্ধে আনতে পেরেছে ৭০ রানই৷
সিয়াম-রুয়েলের ওপেনিং জুটির এ টুর্নামেন্টে যাত্রা শুরু সেমিফাইনালে এসেই, সেদিন সিয়াম ০ রানে ফিরলেও রুয়েল ২০ বলে ২৪ রান করতে পেরেছিলেন। নিয়মিত ওপেনার ইমতিয়াজ হোসেন তান্নাসহ দলের মুল ব্যাটসম্যানদের রেখে তাদের ওপেনিংয়ে নামিয়ে সেমিফাইনাল জয় করা গেলেও ফাইনালে সেটা করা কষ্টকর করে দিয়েছিলেন তারাই। এদিন তাদের রোলটা কি তা যেন বুঝতে পারছিলেন না তারাই। ১৩৫ রানের লক্ষ্যে তাদের একজনের চড়াও হওয়ার সুযোগ নেওয়াটা মন্দ হতো না নিশ্চয়ই! দুজনেই তারা ঝুকিহীন খেলতে গিয়ে পরে চাপ বাড়িয়েছেন। আজাদের বলে স্লগ করে মিডউইকেটে সানজামুলের দারুণ ডাইভিং ক্যাচে যে ওভারে ৩ রানে রুয়েল ফেরেন, মেডেন সে ওভার শেষে কুশিয়ারা রয়্যালসের রান ছিল ৫ ওভারে ১৫। তখন ফাইনালের ওই রঙ্গমঞ্চে নেমে এলেন অধিনায়ক ইমতিয়াজ হোসেন তান্না।
অস্টম ওভারের তৃতীয় বলে তান্না স্কুপ খেললেন, সে শটে যাওয়া বল শর্ট থার্ড ম্যানে থাকা ফিল্ডার ক্যাচ করলেন। বোলার জয়নুলের আম্পায়ারের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ হলো না। ক্ষণিক বাদেই তিনি দেখতে পেলেন আম্পায়ার ইশারা করছেন আউট হওয়া সে বলটি ছিল নো বল। তান্না জীবন পেয়ে তারঁ দলের ইনিংস জীবন্ত করার সুযোগ পেলেন। সিয়াম তার অধিনায়কের সাহায্যে এগিয়ে এলেন। নবম ওভারে সানজামুলকে মারলেন ছয়, পরের বলে সিয়ামের সিঙ্গেল নেয়ার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে পরে ওই ওভারেই এলবিডব্লিউ হয়ে তাকে ফিরতে হলো ৩০ বলে ২৮ রান করে৷
শেষ ৫ ওভারে দরকার ৫৩। আগের ওভারেই ৩০ বলে, ৩৪ রানে ফিরে ক্রিজে এখন নেই তান্না, আছেন জাকের আলী অনিক ও আল আমীন জুনিয়র। তাদের ব্যাটে ৮ বলে ৩ রান আসার পর জাকের আলী অনিক স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে ফিরলেন। ১৮ বলে ১৭ করে অনিক ফেরার পর মুক্তার আলী-আল আমীনে কুশিয়ারা রয়্যালসের জয়ের আশা কিছুটা হলেও জীবিত ছিল। ইরফানের ১৮তম ওভারে আল আমীন জুনিয়রের টানা চার বল ডটে সে আশা হয়ে যায় মুমুর্ষ। শেষমেশ কুশিয়ারা রয়্যালস যেতে পারে ১১১ পর্যন্তই।
রাজিন সালেহর দল ফাইনালে নেই, তিনিও নেই মাঠে। লেজেন্ডস দলের হয়ে খেলতে না গেলে হয়তো থাকতেন। তবে তারঁ দলের দুই ওপেনারই পেয়েছেন দুটি পুরস্কার। ৫ ম্যাচে ১৯০ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান তৌফিক খান তুষার আর সমান ম্যাচে ১০৬ রান করে উদীয়মান ক্রিকেটার তোফায়েল আহমেদ। ১২ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের পেসার জয়নুল ইসলাম। ৩১.৮৪ গড়ে ৬ ম্যাচে ১৯১ রান করে ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্টের পুরস্কার হিসেবে রিজভী পেলেন একটি মোটরসাইকেল। সে মোটরসাইকেলে চড়লেন বাবা, চালক ছেলে রিজভী। ছেলের এ অর্জনে রিজভীর বাবার খুশির অন্ত্য ছিল না। তারঁ পুরস্কার নেয়ার সে সময়ের মুখই বলে দেয় সব! আপাদমস্তক এক ক্রীড়া পরিবারের বাবা যে ভালো করেই জানেন পুরস্কারের মর্ম!