সুযোগ নষ্টের মাশুলে প্যারিসে মিরাকল হলো না মেসিদের
একটা মিরাকল দরকার ছিল বার্সেলোনার, দরকার ছিল অবিশ্বাস্য কিছু করার। সেই মিরাকল করার জন্য একটা মঞ্চও পেয়ে গিয়েছিল, পেয়েছিল মোক্ষম কিছু সুযোগ। কিন্তু সবচেয়ে বড় সুযোগটা পেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। কিন্তু সেটা পারেননি কাজে লাগাতে। কে জানে, সেই পেনাল্টি মিস না হলে গল্পটা অন্যরকমও হতে পারত। কিন্তু তা আর হয়নি। পিএসজির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে দুই লেগ মিলে ৫-২ ব্যবধানে হেরে শেষ ১৬ থেকেই বিদায় নিল বার্সা। রোনালদোর পরের রাতে বিদায় নিলেন মেসিও, ২০০৫ সালের পর এই প্রথম শেষ আটে খেলা হচ্ছে না দুজনের একজনেরও। আর ২০০৬-০৭ এর পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টারে যেতে ব্যর্থ হলো বার্সা।
কাল মেসিদের যেটা করতে হতো, চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসেরই কোনো দলের সেটা নেই। ঘরের মাঠে ৪-১ গোলে হারের পর প্রতিপক্ষের মাঠে জিততে হতো অন্তত চার গোল ব্যবধানে, যে কীর্তি নেই আর কারও। তবে বার্সা ম্যাচের শুরু থেকেই জানান দিয়েছে, তারা সেটা করতেই নেমেছে। দুর্দান্ত পাসিং ফুটবল দিয়ে মনে করিয়ে দিয়েছে গার্দিওলা-এনরিকের সেই সোনালী বার্সাকে। কিন্তু আসল কাজটা করতে গিয়েই হয়ে গেছে গড়বড়। শুরু থেকেই গোলের সামনে একের পর এক সুযোগ হারিয়েছে বার্সা। উসমান দেম্বেলে একাই অন্তত গোটাতিনেক সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন। কখনো প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের হাতে বল তুলে দিয়েছেন, আবার কখন কাছ থেকে শট মেরেছেন বাইরে দিয়ে।
নাভাসের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। ম্যাচের শুরুতেইই সার্জিও দেসের একটা গোলার মতো শট হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন। তবে আসল কাজটা করেছেন আরও পরে। লিওনেল মেসি এই মৌসুমে পেনাল্টি থেকে অপ্রতিরোধ্য, টানা ১৫টি গোল দিয়ে এসেছিলেন। বক্সের ভেতর যখন গ্রিজমানকে ফাউল করা হয়, তখনই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সেটা নিয়ে ভিএআরের কাছে যাওয়ারও দরকার ছিল না। কিন্তু মেসির শটটা নাভাস ঠেকিয়ে দেওয়ার পর ফিরে আসে পোস্টে লেগে। সুবর্ণ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না মেসি।
তার আগেই অবশ্য আরেকটা জাদুকরী মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন মেসি। বার্সা তখন গোলের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে। মেসি একটুর জন্য দেম্বেলের শটে পা লাগাতে পারেননি, এমন একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় বক্সের বাইরে থেকে বল পেয়ে বাঁ পায়ে শট করলেন মেসি। সেটা ট্র্যাজেক্টরি বদলে নাভাসক বিভ্রান্ত করে জড়িয়ে গেল জালে। মনে হচ্ছিল, মেসির জন্য মিরাকলের মঞ্চ সাজানো। কিন্তু সেই সাজানো বাগান ভেঙে দিলেন মেসিই। এর মধ্যে খেলার ধারার বিপরীতে আবার পেনাল্টি পেয়ে গেছে পিএসজি। সেটা থেকে গোল করে বার্সার কাজটা আরও কঠিন করেছেন কিলিয়ান এমবাপে।
তবে ১-১ গোলে শেষ হওয়া প্রথমার্ধের পর বার্সা দ্বিতীয়ার্ধে সেই প্রতাপে খেলতে পারেনি। পিএসজি রক্ষণের দিকেই মনযোগ দিয়েছে, নাভাস এই অর্ধেও বিশ্বস্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে মেসিদের।