মোস্তাফিজের অভিষেকের দিন সুপার স্যামসনের পরও তরী ডুবল রাজস্থানের
গ্রুপপর্ব, মুম্বাই (টস-রাজস্থান /ফিল্ডিং)
পাঞ্জাব কিংস- ২২১/৬, ২০ ওভার ( রাহুল ৯১, হুদা ৬৪, গেইল ৪০, সাকারিয়া ৩/৩১, মরিস ২/৪১)
রাজস্থান রয়্যালস- ২১৭/৭, ২০ ওভার (স্যামসন ১১৯, পরাগ ২৫, বাটলার ২৫, আরশদিপ ৩/৩৫, শামি ২/৩৩ )
পাঞ্জাব কিংস ৪ রানে জয়ী
ওয়াঙ্খেড়েতে শেষ বলে গড়ানো থ্রিলারে ৪ রানের জয় পেয়েছে পাঞ্জাব কিংস। দুই অধিনায়কের দুর্দান্ত টি- টোয়েন্টি ব্যাটিং প্রদর্শনীর দিন সাঞ্জু স্যামসনের ১১৯ রানের ইনিংস হেরে গেছে কেএল রাহুলের ৯১ রানের কাছে। আইপিএলে ফেরার ম্যাচে জয় পেলেন না মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজ যে সুসংবাদটা পেয়ে যাচ্ছেন, সেটা টসের আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল। আইপিএলের নতুন ক্লাব রাজস্থান রয়্যালসের প্রথম ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু অভিষেকটা মনে রাখার মতো হয়নি। মোস্তাফিজের বিস্মরণীয় দিনটা ভুলে যেতে চাইবে রাজস্থানও.
মোস্তাফিজের অবশ্য দুর্ভাগ্যই বলতে হবে কিছুটা। উইকেট পেতে পারতেন প্রথম ওভারেই। মোস্তাফিজের প্রথম ওভারেই ইনসুইংয়ে পরাস্ত হলেও রিভিউ না নেওয়াতে এলবিডব্লু বেঁচে যান মায়াংক আগারওয়াল। নিলে প্রথম ওভারে পেতে পারতেন উইকেট। বোলিং প্রান্ত পরিবর্তন করলেও তাই উইকেটের দেখা আর মেলেনি মোস্তাফিজের। পাওয়ারপ্লেতে প্রথম ওভারে ৭ রান দেওয়ার পরে দ্বিতীয় ওভারে দিয়েছেন ১২ রান।
এর মধ্যে গেইল-রাহুল হাত খুলে খেলতে শুরু করেন এরপরেই। সপ্তম ওভারেই বাউন্ডারি পার করতে গিয়ে বেন স্টোকসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে গেলে এরপর আর ফিরে তাকাননি। অপর প্রান্তে তেওয়াতিয়ার উপর চড়াও হতে গিয়ে তার বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। ঠিক পরের বলেই ছয় মেরে বড় কিছুরই আভাস দিচ্ছিলেন। তবে স্যামসনের রিয়ান পরাগকে আক্রমণে আনার ফাটকাটা কাজে লেগে যায় পরের ওভারেই, স্টোকসের দারুণ এক ক্যাচে ২৮ বলে ৪০ রানে গিয়ে শেষ হয় ‘ইউনিভার্স বস’ এর ইনিংস। তবে থেমে থাকেনি রানের চাকা, নিকোলাস পুর্রানের পরিবর্তে চারে নামা দীপক হুদা নেমেই চড়াও হন রাজস্থানের বোলারদের উপর। ১০.৫ অভারে শত রান পূর্ণ করা পাঞ্জাবের স্কোরকার্ড মুহূর্তের মধ্যেই হয়ে দাড়ায় ১৪ অভারে ১৫০-২!
মোস্তাফিজের দুর্ভাগ্য আবার ফিরে আসে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই। ১৬ বলে রানে থাকা হুদা আকাশে বল তুলে দিয়েছিলেন, পেছনে দৌড়ে সেটা লুফে নিতে ব্যার্থ হন জস বাটলার। ওদিকে হুদা মাত্র ২০ বলেই তুলে নেন তার ফিফটি। ৪ চার আর ৬ ছয়ে ২৮ বলে ৬৪ রান করে ফিরে গেছেন মরিসের বলে।
শেষ ওভারে এসে অবশ্য এলোমেলো ছিলেন মোস্তাফিজ। নো বল, ওয়াইড বলের সুযোগ নিয়ে রাহুল তার ওপর চড়াও হলে তার ম্যাচ ফিগার শেষমেশ গিয়ে হয়ে দাঁড়ায় ৪-০-৪৫-০। শেষ ওভারে ফেরার আগে ৫০ বলে ৯১ রানে অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলছেন রাহুল, আউট হয়েছেন তেওয়াতিয়ার দারুণ এক ক্যাচে। রাহুল-হুদার ঝড়ে শেষ ৯ ওভারে পাঞ্জাব তুলেছে ১১৯ রান!
২২২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেও মনঃপুত হয়নি রাজস্থানের। ওপেনিংয়ে নামা বেন স্টোকস শূন্য রানে ফিরেছেন ইনিংসের তৃতীয় বলেই মোহাম্মদ শামির বলে, রাহুলের কল শুনতে না পেয়ে দুজনের মদ্ধে সংঘর্ষ হলেও ক্যাচটা ঠিকই নিয়েছেন শামি। ঝাই রিচার্ডসনের বলে ১০ রানেই ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচে গেলেও আরেক ওপেনার মান্নান ভোহরা আরশদিপ সিংয়ের বলে ফিরতি কাচের শিকার হয়ে ফিরে গেছেন ১২ রানে। তবে অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন আর জস বাটলারের খেলার ধরণে তাতে কোন পরিবর্তন আসেনি। অভিষিক্ত অস্ট্রেলিয়ান রাইলি মেরেডিথের প্রথম ওভারে টানা চার বলে চার মেরে তাকে আইপিএলে স্বাগতম জানিয়েছেন বাটলার, ওভারে নিয়েছেন ১৮। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও তাই পাওয়ারপ্লেতে এই দুইজন অনায়াসে তুলে ফেলেন ৫৯ রান।
বাটলারের পাল্টা আক্রমণ অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি, আরেক অভিষিক্ত অস্ট্রেলিয়ান ঝাই রিচার্ডসনের দারুণ এক স্লো ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন ২৫ রানে। অধিনায়ক স্যামসনের আক্রমণ অবশ্য অব্যাহত ছিল অপর প্রান্তে। ১২ রানে উইকেটের পিছনে রাহুল তার রেগুলেশন ক্যাচ ফেলে দেন, মেরেডিথের দুর্বিষহ অভিষেক আরও তিক্ত করে তার বলে আকাশে তুলে দেওয়া ক্যাচ পড়ে শাহরুখ আর মায়াঙ্খের ভুল বোঝাবুঝিতে। জীবন পেয়ে সেটা কাজে লাগাতেও ভুল করেননি স্যামসন, ৩৩ বলে ফিফটি তুলে নিয়ে দলকে ভালভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
শিভাম দুবে ২৩ রান ও রিয়ান পারাগ ২৫ রানের ক্যামিও খেলে ফিরে গেলেও অন্য প্রান্ত দারুণভাবে আগলে রেখেছিলেন স্যামসন। ১৮ তম ওভারে রিচার্ডসনকে টানা তিন বলে চার ছয় চার মেরে তুলে নেন এই আসরের প্রথম সেঞ্চুরি, আইপিএলে অধিনায়ক হিসাবে অভিষেকে যেটা প্রথমও বটে। ওই ওভারে আসে ১৯ রান। ৩ ওভারে ৪১ রান দেওয়া মেরেডিথকে বিস্ময়করভাবে ১৯তম ওভার করার গুরুদায়িত্ব দেন রাহুল, তেওয়াতিয়ার উইকেট নিয়ে ওভারে তিনি দেন ৮ রান। শেষ ওভারে রাজস্থানের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ১৩ রান, পুরো ম্যাচজুড়ে ভাল বল করে আসা আরশদিপকেই দেওয়া হয় দায়িত্ব। প্রথম ৩ বলে ২ রান দিয়ে শুরুটাও করেছিলেন ভাল। পরের বলেই ছয় মেরে স্যামসন সমীকরণটা ২ বলে ৫ রানে নামিয়ে আনলেও ৫ম বলে সিঙ্গেল নাকচ করে দেন, যদিও অপর প্রান্তে ছিলেন এবারের আসরের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় মরিস। কিন্তু শেষ বলে আউট হয়ে গেছেন স্যামসন, ছয় বা চার নিতে পারেননি। আইপিএল অধিনায়কত্বের অভিষেক হলো ট্র্যাজেডির নায়ক হয়েই। বিফলে গেছে ১১৯ রানের ইনিংস।