দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সাকিবদের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিল মুম্বাই
গ্রুপপর্ব, চেন্নাই (টস-কলকাতা/ফিল্ডিং)
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস ১৫২ অল-আউট, ২০ ওভার (সূর্যকুমার ৫৬, রোহিত ৪৩, হারদিক ১৫, ক্রুনাল ১৫, রাসেল ৫/১৫, কামিন্স ২/২৪, সাকিব ১/২৩, বরুণ ১/২৭)
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৪২/৭, ২০ ওভার (রানা ৫৭, গিল ৩৩, চাহার ৪/২৭, বোল্ট ২/২৭, ক্রুনাল ১/১৩)
মুম্বাই ১০ রানে জয়ী
শেষ ৪৪ বলে কলকাতার প্রয়োজন ছিল ৪৯ রান, থিতু হওয়া নিতিশ রানার সঙ্গে ব্যাটিং করছিলেন অধিনায়ক অইন মরগান। ম্যাচটা, জয়টা হাতের মুঠোতেই ছিল কলকাতার। তবে এরপরের ১৬ বলের মাঝে ৪ উইকেটে বদলে গেল গল্পটা। রাহুল চাহার করলেন স্বপ্নের এক স্পেল, এরপর ডেথ বোলিংয়ে মুম্বাই দেখালো, কেন তারা চ্যাম্পিয়ন দল। শেষ ২৪ বলে ৩০, শেষ ১৮ বলে প্রয়োজন ছিল ২২ রান, তবে ক্রুনাল পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহ, ট্রেন্ট বোল্টরা চিপকে লিখলেন মুম্বাইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ এক গল্প। যে ম্যাচে তাদের সম্ভাবনা প্রায় নাকচ হয়ে যাচ্ছিল, সেখান থেকেই তারা সেটি জিতেছে ১০ রানে।
অথচ দ্বিতীয় ইনিংসের একটা লম্বা সময় ধরে মনে হয়েছে, এ উইকেটটা মুম্বাইয়ের চেয়ে অনেক ভালভাবে পড়েছে কলকাতা। শুবমান গিলকে সঙ্গে নিয়ে রানা গড়েছেন আরেকটি ফিফটি জুটি, পাওয়ারপ্লেতে তারা ৪৫ রান তোলার পর মুম্বাই প্রথম ব্রেকথ্রু পেয়েছিল ৯ম ওভার গিয়ে, ২৪ বলে ৩৩ রান করে রাহুল চাহারকে তুলে মারতে গিয়ে যখন ধরা পড়েছিলেন গিল। কলকাতার প্রথম চার উইকেটই নিয়েছেন চাহার-- গিলের পর রাহুল ত্রিপাঠি দারুণ লেগব্রেকের নাগাল না পেয়ে হয়েছেন এজড, মরগান তুলে মারতে গিয়ে দিয়েছেন মিডউইকেটে ক্যাচ। চাহারের স্পেলের শেষ ডেলিভারিতে ডাউন দ্যা গ্রাউন্ডে আসার মাশুল গুণেছেন রানা, এদিন যিনি ফিফটি করেছিলেন ৪০ বলে।
মাঝে বোলিংয়ে এসেছিলেন মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মা, প্রথম বল করার আগেই অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়েছিলেন তিনি। সেসব দেখে মনে হতেই পারে, হয়তো আশা ছেড়ে দিয়েছে মুম্বাই। আদতে ছিল ভিন্ন কিছু। এরপর পপিং ক্রিজের বেশ পেছনে থেকে ডেলিভারি করে লেংথ কমিয়ে আনা ক্রুনালের বলে সমানসংখ্যক বলে ৯ রান করা সাকিব স্কয়ার লেগে সরাসরি ক্যাচ দিলেন, হুট করেই আন্দ্রে রাসেলের সামনে সিলি পয়েন্ট নিয়ে হাজির হলেন ক্রুনাল। মুম্বাই চড়াও হলো কলকাতার ওপর স্পষ্টতই। এরপর রাসেল দুটি সুযোগ দিলেন-- প্রথমটি নিজের বলে ডানে ডাইভ দিয়েও রাখতে পারেননি ক্রুনাল, পরেরটি রাতের আকাশে হারিয়ে ফেলেছেন বুমরাহ। বুমরাহ একটা নো করে ফ্রি হিটে রাসেলের হাতে চার খেয়ে যেন একটু চাপ আলগা করলেন, তবে তাতেও মোমেন্টাম গেল না কলকাতার পক্ষে।
রাহুল চাহারের এ উদযাপনই বলে দেয় সব/আইপিএল
১৮ ও ১৯তম ওভারে ক্রুনাল ও বুমরাহ দিলেন যথাক্রমে ৩ ও ৪ রান। শেষ ওভারে ১৫ রান ছিল বোল্টের জন্য, রাসেল বা কার্তিককে সুযোগই দিলেন না তিনি। রাসেল ব্লকহোলের বলে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার পর প্যাট কামিন্স হলেন বোল্ড। আর তাতেই ম্লান হয়ে গেল কলকাতা বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্স, রাসেলের রেকর্ড ৫ উইকেট।
টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পর পাওয়ারপ্লের প্রথম ৫ ওভার স্পিনারদের দিয়ে করিয়েছিলেন মরগান এদিন, বরুণের বলে কুইন্টন ডি ককের উইকেটসহ ৪২ রান তুলেছিল মুম্বাই। পাওয়ারপ্লেতে এক ওভারসহ সাকিব এদিন করেছেন দারুণ আঁটসাঁট বোলিং, মাত্র একটি বাউন্ডারি দিয়েছেন, ২৩ রানে নিয়েছেন সূর্যকুমার যাদবের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
সূর্যকুমার নামার পর থেকেই ছিলেন দারুণ ছন্দে, যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন উইকেটে ব্যাটিং করছিলেন তিনি। যে উইকেটে রোহিত শর্মা ১৬তম ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করে ৩২ বলে ৪৩ রান করেছেন, সেখানে ৩৬ বলে ৫৬ রানের ইনিংস সূর্যকুমার খেলেছেন মাত্র ৩৬ বলে, দারুণ সব শটে ৭ চারের সঙ্গে ২ ছয়ে। সাকিবকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছিলেন তিনি।
মুম্বাইয়ের পাওয়ার-হাউস এদিনও জ্বলে উঠতে পারেনি এরপর, চিপকের উইকেটই ছিল এমন- নেমেই শট খেলা কঠিন যেখানে (সূর্যকুমারের জন্য যেটি প্রযোজ্য নয়)। ইশান কিষাণ কামিন্সকে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেওয়ার পর রোহিত বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে, আর হারদিক পান্ডিয়া প্রসিধ কৃষ্ণার স্লোয়ারে মিড-অফে দিলেন ক্যাচ। এরপর শুরু হলো রাসেল-শো। কাইরন পোলার্ড, মার্কো ইয়ানসেন বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন, ক্রুনালের পর বুমরাহকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাো জাগিয়েছিলেন তিনি। সেটি না হলেও শেষ বলে চাহারের উইকেট নিয়ে ইনিংসে ২ ওভার বোলিং করেই পাঁচ পূর্ণ করেছেন রাসেল- আইপিএলের ইতিহাসে যে ঘটনা প্রথমবার।
তবে এদিন গল্পটা তো রাসেল বা সাকিবের নয়। গল্পটা চাহারের, মুম্বাইয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর।