মইন-জাদেজার ঘূর্ণিতে উড়ে গেলেন মোস্তাফিজরা
গ্রুপপর্ব, মুম্বাই (টস-রাজস্থান/ফিল্ডিং)
চেন্নাই সুপার কিংস ১৮৮/৯, ২০ ওভার (ডু প্লেসি ৩৩, রাইডু ২৭, মইন ২৬, ব্রাভো ২০*, সাকারিয়া ৩/৩৬, মরিস ২/৩৩, তেওয়াতিয়া ১/২১, মোস্তাফিজুর ১/৩৭)
রাজস্থান রয়্যালস ১৪৩/৯, ২০ ওভার (বাটলার ৪৯, উনাডকট ২৪, তেওয়াতিয়া ২০, মইন ৩/৭, জাদেজা ২/২৮, কারান ২/২৪, ঠাকুর ১/২০)
চেন্নাই ৪৫ রানে জয়ী
বলটা পড়েছিল প্রায় লেগস্টাম্পে, এরপর তীক্ষ্ণ টার্ন। জস বাটলার স্কয়ারড আপ হয়ে গেলেন, বল তার ডিফেন্স চিড়ে গিয়ে লাগল অফ-মিডলে। রবীন্দ্র জাদেজার স্বপ্নালু সেই ডেলিভারির পর রাজস্থানের ইনিংস এগুলো ফাস্ট ফরোয়ার্ড মুডে, ওয়াঙ্খেড়ের পিচে জাদেজার পর মইন আলি হয়ে উঠলেন হুট করেই ভয়ঙ্কর। আলোর দিকে এগিয়ে যাওয়া পতঙ্গের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়লো রাজস্থানের ইনিংস, যেন বাটলারেই প্রাণ বেঁধেছিল রাজস্তান, তার ফেরায় উড়ে গেল সেটি। ৮৭ রানে ২ উইকেট থেকে ৯৫ রানে ৭ উইকেটে পরিণত হওয়ার পর তারা থেমেছে ১৪৩ রানে, ওয়াঙ্খেড়েতে চেন্নাইয়ের বিপক্ষে হেরেছে ৪৫ রানের বড় ব্যবধানে।
চতুর্থ ও ষষ্ঠ ওভারে স্যাম কারানের বলে মনন ভোহরা ও সানজু স্যামসন ফিরেছিলেন- ফিল্ডারের পরিবর্তন দেখেও না দেখে ক্যাচ তুলেছিলেন মনন ভোহরা, স্যামসন স্লোয়ারটা বুঝেই উঠতে পারেননি, ইনফিল্ড ক্লিয়ার করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে তার। পাওয়ারপ্লেতে এ দুজনকে হারানোর পর রাজস্থান তুলেছিল ৪৫ রান। শিভাম দুবে ভুগছিলেন স্কোরিংয়ে, তবে বাটলারের ইনিংস সেটিকে তেমন তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে দেয়নি তখন। ১৮৯ রানতাড়ায় দুবেকে চারে পাঠানো নিয়ে অবশ্য প্রশ্নটা তোলা যেতো তখনও।
১১তম ওভারে দুবেকে নিয়ে খেললেন ডোয়াইন ব্রাভো, অফসাইডে ওয়াইডঘেঁষা বোলিং করতে গিয়ে চারটি ওয়াইড দিলেও গুণলেন মাত্র ৬ রান। পরের ওভারের প্রথম বলেই জাদেজার সেই ডেলিভারি। ৩৫ বলে ৪৯ রান করে ফিরলেন বাটলার। সে ওভারে এলবিডব্লিউ হলেন ২০ বলে ১৭ রান করা দুবেও, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি তিনি।
এরপর এলেন মইন, ডেভিড মিলার তাকে সুইপ করতে গিয়ে মিস করে ডেকে আনলেন দুবের পরিণতি। নিজের পরের ওভারে এসে মইন নিলেন আরও দুই উইকেট- রিয়ান পরাগ স্লগ করতে গিয়ে ধরা পড়লেন কাউ কর্নারে জাদেজার হাতে, প্রায় একই জায়গায় একই স্টাইলে ক্যাচ দিয়েছেন মরিসও। তেওয়াতিয়া ও উনাডকট শীঘ্রই তাদের গুটিয়ে যেতে দেননি, তবে ব্যাটিংয়ে মোস্তাফিজকে নামতে হলে নিশ্চিতভাবেই দলের অবস্থা সুবিধার থাকে না। রাজস্থানের দশাও হয়েছিল তেমনই।
এর আগে চেন্নাইয়ের ইনিংস ছিল যেন এবড়োথেবড়ো পথে চলার মতো। ৩৩-এর ওপরে কোনো স্কোর নেই তাদের, তবে ইনিংস বড় না হলেও ছোট ছোট ইনিংসই শেষ পর্যন্ত তাদের নিয়ে গিয়েছিল ১৮৮ পর্যন্ত। সুরেশ রায়না ও এমএস ধোনির যথাক্রমে ১৫ ও ১৭ বলে ১৮ রানের দুটি ইনিংস তাদেরকে বরং পেরুতে দেয়নি ২০০।
ইনিংসের প্রথম বলেই স্লিপে রাহুল তেওয়াতিয়ার হাতে জীবন পেয়েছিলেন রুতুরাজ গায়কোয়াড়, যিনি পরে ফিরেছেন মোস্তাফিজের বলে। মোস্তাফিজসহ রাজস্থান পেসারদের স্লোয়ার চাপে ফেলেছিল তাকে, মোস্তাফিজকে একটু জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিং ঠিকঠাক না করতে পেরে ক্যাচ দিয়েছিলেন গায়কোয়াড়। ২য় ওভারের শেষ বলে সাকারিয়াকে মারার ছয়ের পর অবশ্য ডু প্লেসি নিয়ছিলেন ভিন্ন রূপ, যেন হুট করেই এবি ডি ভিলিয়ার্স এসে ভর করেছিল তাকে, উনাডকটের এক ওভারেই উঠেছিল ১৯ রান।
১৭ বলে ৩৩ করা তাকে থামিয়েছিলেন মরিস, অফস্টাম্পের বেশ বাইরের বলে শট খেলতে প্রলুব্ধ করে। পাওয়ারপ্লেতে রাজস্থানের মতো চেন্নাইও তুলেছিল ২ উইকেটে ৪৫ রানই। পঞ্চম ওভারের কোটা তেওয়াতিয়া ও পরাগকে দিয়ে পূর্ণ করার রাজস্থানের ট্যাকটিকস আরেকটু হলেই ভেস্তে নিতে ধরেছিল, এ দুজন প্রথম ৩ ওভারে দিয়েছিলেন ৩৫ রান। ২০ বলে ২৬ রান করা মইনের উইকেটসহ শেষ ওভারে ২ দিয়ে সেটি হতে দেননি তেওয়াতিয়া।
১৪তম ওভারে সাকারিয়ার জোড়া আঘাতে ফিরেছিলেন রাইডু ও রায়না, রাজস্থানের দিকে মোমেন্টাম অনেকটাই নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর জাদেজা, ধোনিও ফিরে গেলে একসময় ২০০ নাগালের মধ্যে থাকলেও পা হড়কাতে ধরেছিল চেন্নাই। মোস্তাফিজ প্রথম ৩ ওভারে দিয়েছিলেন ২২ রান, তবে শেষ ওভারে ব্রাভোর সামনে পড়েছিলেন তিনি। একটা নো-বলসহ তিনি সে ওভারে দিয়েছিলেন ১৫, চেন্নাই গিয়েছিল ১৮৮ পর্যন্ত।