স্নায়ু ধরে রাখার ম্যাচে চিপকের 'প্রথা' ভেঙে মুম্বাইকে টপকে গেল দিল্লি
গ্রুপ পর্ব, চেন্নাই (মুম্বাই/ ব্যাটিং)
মুম্বাই ইন্ডিয়ানস- ১৩৭/৯, ২০ ওভার ( রোহিত ৪৪, কিষান ২৬, যাদব ২৩, মিশ্র ৪/২৪, আভেশ ২/১৫, লালিথ ১/১৭)
দিল্লি ক্যাপিটালস ১৩৮/৪, ১৯.১ ওভার ( ধাওয়ান ৪৫, স্মিথ ৩৩, ললিত ২২*, হেটমায়ার ১৪*, জয়ন্ত ১/২৫, রাহুল ১/২৯, পোলার্ড ১/৯)
দিল্লি ৬ উইকেটে জয়ী
স্নায়ু ধরে রেখে শিখর ধাওয়ানের ৪৫ আর স্টিভেন স্মিথের ৩৩ রানের পর ললিত যাদব ও শিমরন হেটমায়ারের অপরাজিত দুই ইনিংসে লো-স্কোরিং দ্বৈরথে চেন্নাইয়ে প্রথমে ব্যাট করে জেতার প্রথা ভেঙে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে দিল্লি ক্যাপিয়ালস। রোহিত শর্মার ৪৪ রানের পর অমিত মিশ্রর স্পিন-বিষে দিশেহারা হয়ে মাত্র ১৩৭ রানে মুম্বাই আটকে গেলে ধাওয়ান আর স্মিথের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের পর ললিত যাদবের ঠাণ্ডা মাথার ২২ রানের ইনিংসে জয় নিয়েই ফিরেছে দিল্লি। চিপকে পরে ব্যাটিং করে মাত্র দ্বিতীয় জয় এই আসরে এটি।
রানতাড়ায় প্রথম ওভারেই বেঁচে গিয়েছিলেন শিখর ধাওয়ান, ট্রেন্ট বোল্টের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে তোলা ক্যাচ এক্সট্রা কাভারে হারদিক পান্ডিয়া সামনে ঝাঁপিয়ে দারুণভাবে নিলেও সেটি নাকচ হয়ে যায় টিভি আম্পায়ারের কাছে। তবে জয়ন্ত যাদবের পরের ওভারেই আরেক ওপেনার পৃথ্বী শ ফিরতি ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৭ রানেই ফিরে যান। স্পিনারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ের সঙ্গে মন্থর হয়ে আসা পিচে খোলসে ঢুকে যান দুই দিল্লি ব্যাটসম্যান। প্রান্ত বদল করার ওপর মনোযোগ দিয়ে ধাওয়ান- স্মিথ মিলে পাওয়ারপ্লেতে তোলেন ৩৯ রান।
উইকেটে থিতু হতেই অবশ্য এ উইকেটের আদর্শ ব্যাটিং করে ভালভাবেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্মিথ। ক্রুনালের করা নবম ওভারে গ্যাপ খুঁজে দারুণ দুই চার মেরে ওভারে নিয়েছিলেন ১২ রান। রোহিত শর্মার অনুপস্থিততে পরে অধিনায়কত্ব করা পোলার্ড তাই নিজেকে আক্রমণে আনার সিদ্ধান্ত নেন, আর কি দারুণভাবেই না নিজের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করলেন এরপর- দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে স্মিথ ফেরেন ২৯ বলে ৩৩ রান করে।
স্মিথের বিদায়ের পর মাঝের ওভারগুলোতে উইকেট না হারালেও রান করতে দিল্লির ব্যাটসম্যানদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছিলো। সেই গেরো খুলতেই রাহুল চাহারের শেষ ওভারে তার উপর চড়াও হয়ে দারুণ দুটি চার-ছয়ে মেরেছিলেন ধাওয়ান। তবে এক ওভারে বেশি শট খেলতে যাওয়াটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য, ভাই হারদিকের কাছে আগে বেঁচে গেলেও এবার ক্রুনালের কাছে ধরা পড়েছেন। ৪১ বলে ৪৫ রান করে ফেরার আগে অবশ্য এই আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের আসনে নিজের স্থান আরেকটু পোক্ত করে গেছেন ধাওয়ান।
তার বিদায়ে চাপ কিছুটা পেয়ে বসে ললিত আর অধিনায়ক পান্টকে। রান আউট হতে হতে বেঁচে যান ললিত, পরের ওভারেই বুমরাহর স্লোয়ারে স্কুপ করতে গিয়ে ক্রুনালের কাছে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৭ রানেই ফিরে যান পান্ট। সেই চাপকে কাজে লাগিয়েই ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে আনতে বুমরাহর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন পোলার্ড, তবে দুই নো বলে এলোমেলো এক ওভার করে তিনি দেন ১০ রান। শেষ ওভারে পোলার্ডের প্রথম বলেই চার মেরে হেটমায়ার বাকি আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ করেন, ললিতের ২৫ বলে ২২ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে ৯ বলে ১৪ রান করেছেন তিনি।
ফিরেই দিল্লির নায়ক অমিত মিশ্র/আইপিএল
এর আগে চিপকের ধীর গতির উইকেটে মার্কাস স্টোইনিস রবিচন্দ্রন আশ্বিনকে দিয়ে বোলিং ওপেন করিয়েছিলেন ঋষভ পান্ট। স্টোইনিস-ফাটকাটা কাজে লেগে যায় দ্বিতীয় ওভারেই, অফস্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে এজড হন কুইন্টন ডি কক। তবে এরপরেই যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন রোহিত শর্মা, আশ্বিনের পরের ওভারে এক হাতের চার-ছয়ে তোলেন ১৫ রান। এদিন বেশ কয়েকটি শট খেলেছেন এক হাতে, তবে তার দারুণ টাইমিংয়ে বাউন্ডারি হয়েছে সবগুলোই। তবে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন শটটি খেলেছেন ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ মেনেই, রাবাদার সিম-আপ বলে জায়গা বানিয়ে লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মেরেছেন ৯৫ মিটার লম্বা ছয়। অন্য প্রান্তে সূর্যকুমার যাদবও তার স্বভাবজাত স্ট্রোকপ্লেতে ব্যাতিব্যাস্ত করে রেখেছিলেন দিল্লির বোলারদের। পাওয়ারপ্লেতে দুজন মিলে তোলেন ৫৫ রান।
তবে মুম্বাইয়ের বিপদ শুরু হয় যাদবের বিদায়ে, আভেশ খানের বল থার্ডম্যানে ঠেলতে গিয়ে পান্টের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। নিজের প্রথম ওভারে একটু রান দিলেও দ্বিতীয় ওভার থেকেই স্পিন বিষে মুম্বাইয়ের ব্যাটসম্যানদের নীল করে দেন অভিজ্ঞ লেগস্পিনার অমিত মিশ্র। ধীরগতির উইকেটকে কাজে লাগাতেই এর আগে দারুণ খেলতে থাকা ক্রিস ওকসকে বসিয়ে মিশ্রকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দিল্লি। সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতেই যেন ছিলেন বদ্ধপরিকর, স্লাইডার ও গুগলির মিশ্রণে ব্যাটসম্যানদের ভাবিয়েছেন, উইকেট নিতেও দেরি করেননি।
আগের ওভারে ললিত যাদবের ওভারে মাত্র ৩ রান আসলে সেই চাপকে দারুণ ভাবে কাজে লাগান মিশ্র, ক্রিস ছেড়ে বেরিয়ে আসা রোহিতকে পড়ে ফেলেছিলেন দ্রুতই। তাতেই বিভ্রান্ত হয়ে লং অনে স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় রোহিতের ৩০ বলে ৪৪ রানের দারুণ ইনিংস। পরের বলেই মিশ্রর ফেলা টোপ গিলে লং অনে সেই স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়েই ফেরেন হারদিক পান্ডিয়া। এরপর থেকেই মিশ্র-ললিত একদম চেপে বসেন মুম্বাইয়ের উপর, ফলস্বরূপ পরের দুই ওভারেই আসে উইকেট। ললিতের বলে লেট কাট করতে গিয়ে বল উইকেটে টেনে এনে বোল্ড হন ক্রুনাল পান্ডিয়া, মিশ্রর দারুণ গুগলি পড়তে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা কাইরন পোলার্ড। কয়েক রানের ব্যাবধানে তারকা ব্যাটসম্যানদের বিদায়ে মুম্বাইকে মাঝের ওভারগুলোতে আর হাত খোলার সুযোগই দেননি দিল্লির স্পিনাররা। পার্ট-টাইমার ললিতকে দিয়ে তার চার ওভারের কোটা পূর্ণ করার সিদ্ধান্তও কাজে লেগেছে দারুণভাবে, রান দিয়েছেন মাত্র ১৭।
পরের ওভারগুলোতে খুব একটা বাউন্ডারির দেখা না মিললেও অদ্ভুত দু’টি আউটের দেখা মিলেছে। বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে থাকা ইশান কিষান মিশ্রর একটা ফুললেংথের লেগ স্পিন খুঁড়তে গিয়ে স্টাম্পে ডেকে এনে বোল্ড হয়েছেন, ২৮ বলে ২৬ রানে তার ইনিংস যে শেষ হয়ে গিয়েছিল সেটা বুঝতে কিছুটা সময় লেগেছিল তার, এমনকি আম্পায়ারদেরও। ২২ বলে ২৩ রান করে রাবাদার বলে স্কুপ করতে গিয়ে অদ্ভুতভাবে তার হাতেই ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন এই আসরে নিজের প্রথম ম্যাচে খেলতে নামা জয়ন্ত যাদব। শেষ ওভারে আভেশের সাত রান দিয়ে এক উইকেটে মুম্বাই থেমেছিল মাত্র ১৩৭ রানেই। দিনশেষে মিশ্রর ঘূর্ণিজালে আবদ্ধ হয়েই ভাল শুরু করেও মামুলি সংগ্রহ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসদের, তার ২৪ রান দিয়ে নেওয়া চার উইকেটের ফিগার মুম্বাইয়ের বিপক্ষে যেকোনো দিল্লি বোলারদের মধ্যে সেরাও।