শান্ত-তামিম-মুমিনুলে বাংলাদেশের দাপুটে দিন
১ম টেস্ট, পাল্লেকেলে (টস- বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
১ম দিন, স্টাম্পস
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৩০২/২*, ৯০ ওভার (শান্ত ১২৬, তামিম ৯০, মুমিনুল ৬৪, ভিশ্ব ফার্নান্ডো ২/৬১)
নাজমুল হোসেন শান্তর তৃষিত ও পরিশ্রমী সেঞ্চুরি, তামিম ইকবালের আগ্রাসী ৯০, মুমিনুল হকের ফিফটিতে পাল্লেকেলেতে দাপুটে প্রথম দিন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সাহসী সিদ্ধান্তটা ট্যাকটিক্যালি ঠিক প্রমাণিত হয়েছে দিনশেষে, যার শুরুটা হয়েছিল তামিমের আক্রমণে। ২৮৮ বল খেলে দিনশেষে অপরাজিত ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা শান্ত, তাকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া অধিনায়ক মুমিনুল অপরাজিত ৬৪ রানে। দিনের শুরুতে সাইফ হাসান ফিরলেও ২য় উইকেটে তামিম-শান্তর জুটিতে উঠেছিল ১৪৪ রান, শান্ত-মুমিনুলের জুটি অবিচ্ছিন্ন ১৫০ রানে। প্রথম দুটি সেশনে একটি করে উইকেট নিলেও শেষ সেশনে শূন্য হাতেই দিন শেষ করতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে, যারা পারেননি চাপ সেই অর্থে ধরে রাখতে বাংলাদেশের ওপর।
শান্ত ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ১২০ বলে, সেঞ্চুরি করেছেন ২৩৫ বলে। নব্বইয়ের ঘরেই তিনি কাটিয়েছেন ৩৮ বল, তবে দুই মাইলফলকেই গেছেন দারুণ দুই শটের বাউন্ডারিতে। শান্তর ইনিংসের হাইলাইটসই যেন এটি, ছোট ক্যারিয়ারে এমন একটা ইনিংসের অপেক্ষার ফলটা মধুর বানিয়েছেন নিজেই। ২৮ রানে একটা জীবন পেয়েছিলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভার বলে এজড হয়ে, উইকেটকিপার নিরোশান ডিকওয়ালে ঠিকঠাক গ্লাভস নামাতে পারেননি বলের দিকে। শান্ত নিশ্চিত করেছেন, শ্রীলঙ্কা যাতে সে ভুলের পুরো মাশুল গুণে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ভিশ্ব ফার্নান্ডোর বলে সাইফ হাসানের এলবিডব্লিউ হওয়ার পর নেমেছিলেন শান্ত। ফার্নান্ডোর বলটা লেগস্টাম্পের বাইরে পিচ করে সাইফের প্যাডে আঘাত হেনেছিল, প্রথমদফা এমন মনে হলেও শেষ মুহুর্তে নেওয়া রিভিউটা কাজে লেগেছিল শ্রীলঙ্কার। তবে সাইফের উইকেটের আগে থেকেই আক্রমণাত্মক মুডে চলে যাওয়া তামিম থামেননি এরপরও। শুরুতে একটু মুভমেন্ট ছিল, পিচে থাকা ঘাসের কারণে। তামিম সেসবকে সামলেছেন দারুণ আগ্রাসনে। যে শটে আউট হয়েছেন, সেটি বাদ দিলে তার ফুটওয়ার্ক ছিল দারুণ, বলতে গেলে সব শটই ছিল তার দারুণ নিয়ন্ত্রণে।
প্রথম ওভারে সুরাঙ্গা লাকমালকে প্যাডের ওপর থেকে ফ্লিক করে প্রথমে মিডউইকেট, পরে স্কয়ার লেগ- দুই বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন তামিম, বাংলাদেশের প্রথম ২৯ রানের সবই এসেছিল তার ব্যাট থেকে, তামিম ততক্ষণে মেরেছিলেন ৬টি চার, এর মাঝে ফার্নান্ডোর এক ওভারেই মেরেছিলেন তিনটি। এরপর লাহিরু কুমারাকে মেরেছেন এক ওভারে তিনটি। ১৩তম ওভারে বোলিং করতে এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ২০১৮ সালে ক্রাইস্টচার্চে শেষ টেস্টে বোলিং করেছিলেন যিনি। ম্যাথিউসের পেসের অভাবের কারণে ব্যাটিংয়ের ধরন আরেকটু বদলাতে হয়েছে তামিমের, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসেছেন, বিশাল এক স্ট্রাইডে এরপর কাভার দিয়ে মেরেছেন চার। ৫২ বলে ফিফটি হয়েছে তার, তামিম নিজের গতি নিয়ন্ত্রণও করেছেন দারুণভাবে।
আলগা শটে আউট হওয়ার আগে তামিম খেলেছেন আগ্রাসী ইনিংস/শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট
১৯তম ওভারে প্রথমবারের মতো স্পিনার এসেছেন, সেই ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলতে এসে ইনসাইড-এজড হয়েছিলেন তামিম। অবশ্য এরপরের বলে লেংথ ঠিক করতে গিয়ে আরেকটু শর্ট করে ফেলেছিলেন ডি সিলভা, শান্ত সেই লং-হপে পেয়েছেন বাউন্ডারি। সে ওভারে শান্ত কাভার ড্রাইভে আরেকটি বাউন্ডারি পেয়েছেন। লাঞ্চের আগে তামিম শেষ আক্রমণ করেছিলেন ২২তম ওভারে, ফার্নান্ডোকে দুই চারে। অফস্টাম্পে ফিল্ডার ছেঁকে দাঁড়ালেও প্রথমে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে গ্যাপ বের করেছেন, এরপর খেলেছেন স্ট্রেইট ড্রাইভ। ফ্লিক, ড্রাইভ, পুশ, কাট-- তামিম প্রথম সকালটা করে নিয়েছিলেন নিজের।
লাঞ্চের পর একটু সতর্ক শুরু করেছিলেন তিনি, প্রথম ৬৫ রানে ১২টি চার মারলেও পরের ৩৫ রানে মেরেছিলেন মাত্র ৩টি। তবে আলতো করে খেলতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন তিনি। ফার্নান্ডোর অফস্টাম্পের বাইরের ব্যাক অফ আ লেংথ বলটায় হালকা ড্যাব করতে গিয়েছিলেন, একমাত্র স্লিপটি ছিল একটু দূরে। সেখানে দাঁড়ানো লাহিরু থিরিমান্নে ডানদিকে ঝুঁকে ভাল ক্যাচ নিয়েছেন, তামিম থেমেছেন ৯০ রানেই, ভেঙেছে শান্তর সঙ্গে তার ১৪৪ রানের জুটি। টেস্টে দ্বিতীয়বার, সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৫ম বার নড়বড়ে নব্বইয়ে কাটা পড়লেন তামিম, এর আগে ৪ বারই তিনি আউট হয়েছিলেন ৯৫ রানে।
শান্ত অবশ্য ব্যাটিং করেছেন আগের পেসেই, সুযোগ পেলেই খেলেছেন বড় শট, দিয়েছেন ধৈর্য্যের পরিচয়। ১২০ বলে পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের ২য় ফিফটি। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে একটা ছয়ও মেরেছেন। চা-বিরতিতে বাংলাদেশ গিয়েছিল ২০০ রান নিয়ে, সেঞ্চুরি থেকে ৭৮ রান দূরে ছিলেন শান্ত তখন। শেষ সেশনেও তিনি ও মুমিনুল করেছেন আগের ধাঁচেই ব্যাটিং, সতর্ক থেকে অপেক্ষা করেছেন আলগা ডেলিভারির, সেটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়েও। দিনশেষে একটি ছয়ের সঙ্গে তার চার ১৪টি।
মুমিনুল শুরু করেছিলেন ফার্নান্ডোকে ব্যাকফুট পাঞ্চে চার মেরে, এরপর এখন পর্যন্ত চার মেরেছেন ৬টি। ১১৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দ্বিতীয় নতুন বল সঙ্গে সঙ্গেই নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা, তবে ততক্ষণে পেসারদের মনে হয়েছে ক্লান্ত। অফিসে বেশ লম্বা এক দিনই কেটেছে তাদের। শেষদিকে একটু ক্র্যাম্প মনে হচ্ছিল শান্তরও, তবে এমন দিনের পর নিশ্চয়ই তাতে কিছু যায় আসবে না তার।