সাইত্রিশেও উড়ছেন ডি ভিলিয়ার্স
এবি ডি ভিলিয়ার্স একজন জিনিয়াস। আপনার দ্বিমতের প্রশ্নই আসে না, উল্টো আপনার বিরক্তি আসতে পারে এই ভেবে যে এটা কে না জানে! তবে ৩৭ বছরে এসেও প্রমাণ করছেন, ক্রিকেটকে দেওয়ার এখনো অনেক কিছুই আছে তার।
শেষেই তার মরণকামড়
চেন্নাইয়ের পিচে যতই সময় গড়ায় ততই খেলা কষ্টকর হয়। শিশিরের খুব বেশি প্রভাব না থাকলে স্পিনাররা বাড়তি টার্ন ও বাউন্স পেয়ে থাকেন। ৫৩.৯৩% উইকেটই পড়েছে শেষের পাচঁ ওভারে। সেসময়ে পোলার্ড ও পান্ডিয়া ব্রাদার্সের সৌজন্যে মুম্বাইয়ের রান রেট গেলবার ছিল সবচেয়ে বেশি। এবার তাদের রান রেট সেখানে মাত্র ৭.৮৭। বেঙ্গালুরু বাদে চেন্নাইয়ে খেলা বাকি তিন দলের মধ্যে সর্বোচ্চ হায়দরবাদের ৮.৫৯ রান রেট। ২.৭৪ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বেঙ্গালুরুর রান রেট ১১.৩৩। বেঙ্গালুরুর যে একজন এবি ডি ভিলিয়ার্স আছেন!
তুলকালাম ঘটানোর শেষের ওই পাচঁ ওভারের সময়ে কলকাতা দলের স্ট্রাইক রেট ১০৭.৬৯। মুম্বাইয়ও আছে কাছাকাছি, তাদের স্ট্রাইক রেট ১১৮.৬৮। বেঙ্গালুরু বাদে বাকি তিন দলের মধ্যে হায়দরাবাদের ১৩৬.৩৬ সর্বোচ্চ। বেঙ্গালুরু কেন আলাদা? কারণ একজন ডি ভিলিয়ার্স আছেন। তাই তারা ধরাছোয়ার বাইরে। সেসময়ে বেঙ্গালুরুর স্ট্রাইক রেট ১৮১.১১। পরিসংখ্যান তো দেখছি বলছে, ব্যাক্তি ডি ভিলিয়ার্স সব দলেরও উর্ধ্বে। ওই সময়ে একমাত্র মিস্টার ৩৬০ ডিগ্রির স্ট্রাইক রেটই দুইশোর উপরে, ২৪৭.৫! তাই বলা যায় শেষের ওই ওভারগুলি তাদের জন্যই শুধু মরণ ওভার যারা পড়বেন ডি ভিলিয়ার্সের সামনেই।
বাকিরা যা পারে না, তিনি সেটা পারেন সহজেই
দিন দিন খেলা যেভাবে রুপ নিচ্ছে, তাতে ব্যাটসম্যানদের বাউন্ডারি মারতে খুব বেশি কষ্ট করতে দেখা যায় না। কিন্ত চেন্নাইয়ের এমএ চিদামবারাম স্টেডিয়ামে ঘটনা হয়ে গেছে উল্টোটা। এখানে সীমানা পার করা বড় কঠিন হয়ে গেছে। তা বাকিদের জন্য, ডি ভিলিয়ার্সের জন্য না!
প্রতি ৩.৬৭ বলে ডি ভিলিয়ার্স মেরেছেন একেকটা বাউন্ডারি। ৬৪ বলে ১২৫ রান করা ভিলিয়ার্সের ৬৫.৬% রানই এসেছে ছক্কা-চার থেকে। ১৬ থেকে ২০ ওভারের সময়ে প্রতি ২.৫ বলে তিনি মেরেছেন একেকটা বাউন্ডারি। চোখ কপালে উঠার মতো আরো অনেক কিছু বাকি।
শেষ পাচঁ ওভারে হায়দরবাদ ও কলকাতার বাউন্ডারি সংখ্যা ১১টি, মুম্বাইয়ের আরও তিনটি বেশি৷ ডি ভিলিয়ার্সের মুম্বাইয়ের থেকেও আরও দুটি বেশি। বেঙ্গালুরুর ২৪ বাউন্ডারির ১৬টিই এসেছে তাদের ত্রাতা আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্সের ব্যাট থেকে। মানুষটা তো দেখছি আবারও দলের চেয়েও বড় হয়ে উঠছে, পরিসংখ্যান যে তাই বলছে। শুধু ছক্কার হিসেবে তিনি হায়দরবাদের চেয়ে একটু পিছিয়ে। ডেথ ওভারে ডি ভিলিয়ার্সের ৫ ছয়, হায়দরাবাদের ৭টি। তবে যথাক্রমে ৪টি ও ৩টি ছয় নিয়ে কলকাতা ও মুম্বাই রয়েছে তাঁর পিছনেই!
যেখানে এগিয়ে বাকিদের চেয়ে
বাকিরা যেখানে হাঁসফাঁস করছে ছক্কা-চার মারার জন্য, তিনি মারছেন অনায়াসেই। চেন্নাইয়ে ইনিংসের দ্বিতীয় অর্ধ্বে প্রথমার্ধ্বের তুলনায় উইকেট সব দলেরই পড়ছে প্রায় তিনগুণ করে। বেঙ্গালুরু বাদে বাকি তিন দলের প্রথমার্ধ্বের রান রেটের সাথে দ্বিতীয়ার্ধের রান রেটের পার্থক্য অতি সুক্ষ্ম এবং শেষের দশ ওভারে প্রায় ৭১ শতাংশ উইকেট পড়া বলে দেয়- ব্যাটিংটা খুব কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে শেষের দিকে। ডি ভিলিয়ার্সের জন্যেও?
শেষ পাচঁ ওভারে ১০ বা তার চেয়ে বেশি বল খেলুড়েদের মধ্যে মাত্র তিনজনেরই স্ট্রাইক রেট ১৫০ পার করেছে। ১০ বলে ১৭ রান করে দ্বিতীয় স্থানে থাকা রশিদ খানের স্ট্রাইক রেটের চেয়ে ডি ভিলিয়ার্সের ৭৭.৫ বেশি। এসময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ রান কায়রন পোলার্ডের ১২৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে। আন্দ্রে রাসেল করেছেন ৪০ বলে ৪৪ রান। রাসেল ও পোলার্ড দুজনেরই রান ও স্ট্রাইক রেটের চেয়ে ভিলিয়ার্সেরটা প্রায় দ্বিগুণ। এ তালিকায় সবচেয়ে কম স্ট্রাইক রেট সাকিব আল হাসানের, ৫৩.৮৫! একশের নিচে স্ট্রাইক রেটওয়ালা তাঁর একমাত্র সঙ্গী মুম্বাইয়ের ইশান কিশানের স্ট্রাইক রেট ৮৪.৬১। ডি ভিলিয়ার্সের চেয়ে ১৬২.৮৯ কম, ভিলিয়ার্স কি অন্য জগতেরই বাসিন্দা?
ভিলিয়ার্স উড়ছেন, তাই বেঙ্গালুরু উড়ছে
ব্যাক্তি ভিলিয়ার্সকে দলের চাইতে বড় তো বানিয়েই ছাড়ল পরিসংখ্যান। কিন্ত কিছু হিসাব যে সংখ্যাও বুঝাতে অক্ষম! ইতিহাসে এই প্রথম টানা তিন ম্যাচ জিতে লীগে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজেয় দল বেঙ্গালুরু। সৌজন্যে ভিলিয়ার্স ও ম্যাক্সওয়েল। তা প্রথম ম্যাচ তো বলা যায় ভিলিয়ার্স একাই জিতিয়েছিলেন।
৫ ওভারে ৫৪ যখন লাগে, তার সাথে থাকা ক্রিশ্চিয়ানও ১ রানে চলে গেলে একাই তার জেতাতে হতো। ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট বুমরাহ ও ট্রেন্ট বোল্ট, মার্কো ইয়ানসেনদের খেলে তিনি ২৮ বলে ৪৯ রান করে রান আউট হয়ে ম্যাচ জিতিয়ে না ফেরতে পারলেও পরে ঠিক জিতেছে দল। পরের ম্যাচে পারেননি, এর পরেরটায় সব তাই পুষিয়ে দিয়েছেন। ম্যাক্সওয়েলের ৪৯ বলে ৭৮ এর পরে ভিলিয়ার্সের ৩৪ বলে ৭৬ না হলে জেতে না ব্যাঙ্গালোর।
ভিলিয়ার্সের ৬৪ বলে ১২৫ রানের সবকটিই শেষের দশ ওভারে। তার ৭৯% শেষের পাচঁ ওভারে। মানে সবচেয়ে কঠিন সময়েই উড়েছেন ভিলিয়ার্স। এখন তিনি মুম্বাইয়ে। ওয়াংখেড়ের পিচ ব্যাটসম্যানদের জন্য চেন্নাইয়ের মতো কঠিন হবে না। আপনার কল্পনায় কি এখনো ঝড় শুরু হয়ে যায়নি!
বিঃদ্রঃ চেন্নাইয়ে অনুষ্টিত প্রথম ছয় ম্যাচ পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত