আলোকস্বল্পতার আগে উজ্জ্বল শান্ত-মুমিনুলে দৃঢ় অবস্থানে বাংলাদেশ
১ম টেস্ট, পাল্লেকেলে (টস- বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
২য় দিন, চা-বিরতি
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৪৭৪/৪, ১৫৫ ওভার (শান্ত ১৬৩, মুমিনুল ১২৭, তামিম ৯০, মুশফিক ৪৩*, লিটন ২৫*, ভিশ্ব ফার্নান্ডো ২/৭৫, কুমারা ১/৮৮, ধনঞ্জয়া ১/১০৩)
মুমিনুল হকের দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, নাজমুল হোসেন শান্তর দেড়শ-পেরুনো ইনিংস, দুজনের রেকর্ড জুটির পর বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতা আঘাত হেনেছে পাল্লেকেলেতে। তৃতীয় সেশনে প্রথমে বৃষ্টির কারণে মিনিট সাতেক বন্ধ ছিল খেলা, তবে এরপর ১০ ওভার হওয়ার পরই আলোকস্বল্পতায় বন্ধ হয়ে গেছে সেটি। দিনে হয়েছে ৬৫ ওভার, সেখানে বাংলাদেশ তুলেছে ১৭২ রান। শান্ত ও মুমিনুলকে ফেরাতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা, আগেরদিনের চেয়ে তুলনামূলক ভাল বোলিং পারফরম্যান্স ছিল যাদের।
আগেরদিনের শেষ সেশনের মতো এদিনের শুরুটাও হয়েছিল উইকেট ছাড়াই। সেখানে ক্যারিয়ারের ১১তম ও বিদেশের মাটিতে প্রথম সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন মুমিনুল, ফলে বিদেশের মাটিতে সেঞ্চুরি ছাড়াই সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ড থেকে 'মুক্তি' পেলেন তিনি। আগেরদিন ৬৪ রানে অপরাজিত থাকা মুমিনুল এদিন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে নব্বইয়ের ঘরে গিয়েছিলেন, এরপর সেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে তার লেগেছে আর ১১ বল। ২২৪ বলে ডি সিলভাকে লেট কাট করে চার মেরেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছিলেন তিনি।
প্রথম সেশনে তুলনামূলক বেশ ভাল বোলিং করেছিল শ্রীলঙ্কা, তবে উইকেট তাদেরকে সহায়তা করেনি সে অর্থে, মুমিনুল-শান্তও বলতে গেলে সুযোগ দেননি কোনও। দিনের দ্বিতীয় ওভারে দুজনের মাঝে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে, তবে মুমিনুল থেকেছেন নিরাপদ। বাংলাদেশও চালিয়ে গেছে দাপট দেখানো।
প্রথম ঘন্টায় বেশ সতর্ক ছিলেন দুজন, সে সময়ে তুলেছিলেন ৩১ রান। দিনের দ্বিতীয় ওভারে ভিশ্ব ফার্নান্ডোকে থার্ডম্যান দিয়ে প্রথম চারটি মেরেছিলেন মুমিনুল, এরপর দ্বিতীয় বাউন্ডারি হয়েছে ১০ম ওভারে গিয়ে। ডি সিলভাকে চার মেরেই দেড়শ পূর্ণ করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তও, যিনি আউট হয়েছেন লাঞ্চের পর।
আগের দিন থেকেই মোটামুটি বেশ আঁটসাঁট বোলিং করছিলেন লাহিরু কুমারা, আজ সেটির পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। তার স্লোয়ারে বোকা বনেছেন শান্ত, হোল্ড করা বলটায় শট খেলে ফেলেছিলেন আগেভাগেই। ফিরতি ক্যাচটা নিতে ভুল করেননি কুমারা, শান্ত ফিরেছেন ১৬৩ রান করে, ১৭টি চারের সঙ্গে একটি ছয় মেরেছেন যেখানে। নিজের প্রথম সেঞ্চুরি ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর এখন এটিই। মুমিনুলের সঙ্গে তার জুটি টিকেছে ৫১৭ বল, উঠেছে ২১৪ রান। তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি এটি, বলের হিসেবে যে কোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মুশফিক নেমে ছিলেন একটু নড়বড়ে, এমন একটা লম্বা জুটির পর পরবর্তী ব্যাটসম্যানের স্বাভাবিক আড়ষ্ঠতা প্রকাশ পেয়েছে যেন তার। নেমেই শ্রীলঙ্কার রিভিউয়ের সামনে পড়েছিলেন, তবে ইনসাইড-এজ হওয়াতে নাকচ হয়েছে সেটি। এরপর আরেকটি ইনসাইড-এজ পেরিয়ে আরেকবার বেশ সময় নিয়ে আউটই দিয়েছিলেন কুমার ধর্মসেনা, যদিও এবার রিভিউ করে বেঁচে গেছেন তিনি। টিভি আম্পায়ার শুরুতে মাঠের সিদ্ধান্ত ওভারটার্ন করার মতো পর্যাপ্ত এভিডেন্স নেই মনে করলেও ওভাররুল করেছেন সেটি শেষ পর্যন্ত ইনসাইড-এজের দেখা পাওয়াতে।
তবে মুশফিকের উইকেট না পেলেও মুমিনুলেরটি ঠিকই পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। বেশ কিছুক্ষণ ধীরলয়ে খেলার পর গিয়ার পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন মুমিনুল, বেছে নিয়েছিলেন এখন পর্যন্ত সবচেয়ে খরুচে বোলার ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেই। তবে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজড হয়ে স্লিপে ধরা পড়েছেন তিনি। ১২৭ রানের ইনিংসে খেলেছেন ৩০৪ বল, ক্যারিয়ারে যা সর্বোচ্চ তার, মেরেছেন ১১টি চার।
লিটন দাস অবশ্য নেমেই আক্রমণে যাননি, প্রথম বাউন্ডারির জন্য তিনি অপেক্ষা করেছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ফুলটস পাওয়া পর্যন্ত। এরপর লেগসাইডের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে নিজের তৃতীয় চারটি মেরেছেন মুশফিক। চা-বিরতিতে বাংলাদেশ গিয়েছিল ৪ উইকেটে ৪৪০ রান নিয়ে।
শেষ সেশনে শুরুতেই এরপর নেমেছিল বৃষ্টি, সেটি অবশ্য থাকেনি বেশিক্ষণ। এরপরের ১০ ওভারে বাউন্ডারি হয়েছে তিনটি, যার দুটি মেরেছেন লিটন, একটি মুশফিক। দিনশেষে ৪৩ রানে অপরাজিত আছেন মুশফিক, তার সঙ্গী লিটন ব্যাটিং করছেন ৩৯ বলে ২৫ রান নিয়ে। এদিনের খোয়ানো ওভার পুষিয়ে দিতে তৃতীয় দিন ১৫ মিনিট আগে শুরু হবে খেলা, সম্ভব হলে দিনের শেষভাগেও যোগ করা হবে সময়।