পাডিক্কাল-কোহলি ঝড়ে উড়েই গেলেন মোস্তাফিজরা
গ্রুপপর্ব, মুম্বাই (টস- ব্যাঙ্গালোর/ফিল্ডিং)
রাজস্থান রয়্যালস ১৭৭/৯, ২০ ওভার (দুবে ৪৬, তেওয়াতিয়া ৪০, পরাগ ২৫, সিরাজ ৩/২৭, হারশাল ২৩/৪৭ )
রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস ব্যাঙ্গালোর ১৮১/০, ১৬.৩ ওভার ( পাডিক্কাল ১০১*, কোহলি ৭২*, মোস্তাফিজ ০/৩৪)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস ব্যাঙ্গালোর ১০ উইকেটে জয়ী
দেভদূত পাডিক্কালের প্রথম আইপিএল সেঞ্চুরি- যেটিতে তিনি অপরাজিত, সঙ্গে বিরাট কোহলির অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসে মোস্তাফিজুর রহমানদের রাজস্থানকে উড়িয়ে ১০ উইকেটের জয় পেয়েছে ব্যাঙ্গালোর, ১৭৭ রান তারা পেরিয়ে গেছে ২১ বল বাকি থাকতেই। এ মৌসুমে টানা চার জয়ে টেবিলের শীর্ষেও ফিরে এসেছে তারা। বিরাট কোহলির ৬০০০ আইপিএল রান পূর্ণ করার দিনে তার তরুণ ওপেনিং সঙ্গী পাডিক্কাল করেছেন ৫২ বলে ১০১। রাজস্থানের অন্য বোলারদের মতো মোস্তাফিজও থেকেছেন বিবর্ণ, ৩.৩ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে তিনি থেকেছেন উইকেটশূন্য।
গত মৌসুমের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা পাডিক্কাল এবারের বিজয় হাজারে টুর্নামেন্টে ছিলেন দারুণ ফর্মে। তবে করোনা থেকে সেরে উঠে ফিরে আসার পর মৌসুমের প্রথম দুটি ম্যাচ ভাল কাটেনি তার। সেসব আক্ষেপ যেন মেটালেন আজই। এমন সময় খুব কমই আসে যখন কোহলি মুখ্য ভূমিকায় থাকেন না, এদিন যেন তরুণ পাডিক্কালের মন্ত্রমুগ্ধ দর্শক হয়ে থাকাটাই উপভোগ করেছেন তিনি। পাডিক্কালের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লেতে ব্যাঙ্গালোর তোলে বিনা উইকেটে ৫৯ রান, ২৭ বলেই ফিফটি পূর্ণ করেছেন তিনি। প্রথম ১০ ওভারেই ১০৭ করে ফেলে তারা, যেখানে কোহলি করেছিলেন ২৪ বলে ২৬ আর পাডিক্কালের সংগ্রহ ছিল ৩৬ বলে ৮০!
এরপর অবশ্য কোহলি নিজেও হাত খুলে খেলেছেন, ফিফটি করেছেন ৩৪ বলে। তার ফিফটি হয়ে যাওয়ার পরে রাজস্থান বোলারদের মনে হয়েছে আরও অসহায়। কোনো বলেই যেন এই দুইজন কে টলানোর কোনো উপায় বের করতে পারেনি রাজস্থান। কোহলি শট খেলা শুরু করে পাডিক্কালকে সেঞ্চুরি করার যেই সুযোগ করে দিয়েছিলেন সেটা তিনি লুফে নিয়েছেন দুই হাত ভরে, ৫১ বলে করেছেন আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
ব্যাঙ্গালোর পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর ব্যাটসম্যানদের কিছু অবিবেচক শটে ওয়াঙ্খেড়ের রানপ্রসবা পিচে এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রাজস্থানের শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি। মোহাম্মদ সিরাজের গুড লেংথের বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করে গেছেন বাটলার, ফিরেছেন মাত্র ৮ রানেই। দুর্বিষহ এক মৌসুম কাটানো মনন ভোহরার ভাগ্যও খোলেনি নিজের দোষেই, কাইল জেমিসনের বলে ভুল শট খেলে মিড অনে কেন রিচার্ডসনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন মাত্র ৭ রানে। মৌসুমে প্রথমবার চারে নেমে সিরাজের দারুণ ইয়র্কারে শূন্য রানেই ফিরে গেছেন ডেভিড মিলার। পাওয়ারপ্লেতে এই মাঠে ৩২ রান তুলে ৩ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই খেই হারিয়েছিল রাজস্থান।
অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন চেষ্টা করেছিলেন বিপদ সামাল দেওয়ার, তবে ২১ রানে থাকতে ওয়াশিংটন সুন্দরের নিরীহ একটা বল মিড অনে ম্যাক্সওয়েলকে যেন ক্যাচ অনুশীলন করিয়েছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে থাকা শিভাম দুবের উপর এই মৌসুমে রাজস্থান বেশ ভরসা করলেও তার এতদিন প্রতিদান দিতে পারেননি, তবে দলের বিপদে পাঁচে নেমে তিনি বুঝিয়েছেন কেন তাকে এতটা মূল্যায়ন করা হয়। নবম ওভারে যুজভেন্দ্র চেহেলের বলে দুটি বিশাল ছয় মেরে দেখিয়েছেন পেশির জোর, প্রান্ত বদল করে অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানকেও থিতু হতে সহায়তা করেছেন।
রিয়ান পরাগ তাই হয়ত তার ক্যামিওর জন্য কিছুটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন দুবেকে, তবে সুযোগ পেয়েও তিনি ইনিংস বড় করতে পারেননি, ১৬ বলে ২৫ করে স্কুপ করতে গিয়ে টপ এজড হয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়েছেন চেহেলের কাছে। এরপর রাহুল তেওয়াতিয়াকে নিয়ে এগিয়ে গেলেও বল মাঠছাড়া করতে গিয়ে নিজেই লং অনে ম্যাক্সওয়েলের তালুবন্দি হয়েছেন দুবে, রিচার্ডসনের বলে ফিরে যাওয়ার আগে ৩২ বলে করেছেন ৪৬ রান।
দুবের গড়ে দেওয়া ভিতেই এরপর আক্রমণ করেছেন তেওয়াতিয়া, সিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে শাহবাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২৩ বলে ৪০। শেষ দিকে এসে কিছুটা খরুচে হলেও শেষ ওভারে ২ উইকেট নিয়ে রাজস্থানের স্কোরটা বেশি বড় হতে দেননি হারশাল প্যাটেল, ১৭৭ রানে গিয়ে থেমেছে রাজস্থানের ইনিংস, যেটিকে মাঝপথে মনে হচ্ছিল লড়াই করার মতো ভাল স্কোর।
তবে পাডিক্কাল-কোহলি সে রানতাড়াকে বানিয়ে ফেলেছেন ছেলেখেলা।