পাল্লেকেলের মরা উইকেটে যে শিক্ষা দেখছেন তাসকিন
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশী পেসারদের জীবনটা সহজ নয় মোটেও। দেশের মাটিতে তারা সাম্প্রতিক সময়ে ‘দ্বিতীয় শ্রেণি’র নাগরিক, ‘হোম-কন্ডিশন’ কাজে লাগানোর ‘সামর্থ্য’ হওয়ার পর থেকে তো তাদেরকে আরও পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয় প্রায়ই। অনভ্যাসে মরচে পড়ার মতো পেস-সহায়ক কন্ডিশনে গিয়েও তাই ঠিকঠাক জ্বলে ওঠা হয়ে ওঠে না তাদের।
পাল্লেকেলে টেস্টে বাংলাদেশ পেসারদের গল্পটা অবশ্য আরেকটু অন্যরকম। সবুজাভ উইকেটের রেশ ধরে খেলানো হলো তিন পেসার, একই লাইন-আপ নিয়ে এগুলো শ্রীলঙ্কাও। তবে উইকেট থেকে সহায়তার মিললো না তাদের। উইকেট হয়ে থাকলো ফ্ল্যাট, নিজেদের স্কিল নিয়ে এমন উইকেটে তাই হুট করেই অচেনা অতিথি হয়ে পড়তে ধরলেন বাংলাদেশ পেসাররা।
এখন পর্যন্ত এ টেস্টে (এক ইনিংসে) ৫৫ ওভার বোলিং করেছেন বাংলাদেশ পেসাররা, উইকেট মিলেছে একটি। উপমহাদেশে নিজ দেশে ছাড়া শেষ কয়েকটি টেস্টেই এই ‘ওয়ার্কলোড’ নিতে হচ্ছে তাদের। দেশের বাইরে এর আগে খেলা তিন টেস্ট- রাওয়ালপিন্ডি, কলকাতা ও ইন্দোর- সবকটিতেই পাল্লেকেলেতে এখন পর্যন্ত করা ওভারের সমান বা বেশি বোলিং করতে হয়েছে এক ইনিংসে পেসারদের। ২০১৭ সালে গলেও করতে হয়েছিল তাই। অথচ দেশের মাটিতে শেষ কোনো ইনিংসে এতো বোলিং তারা করেছিলেন সেই ২০১৪ সালে, মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই।
তবে নিজেদের স্কিল ঝালাই, আর এমন উইকেটে বোলিংয়ের ব্যাপারটা তো আরেকটু বেশি করে জানা হলো তাদের, তাসকিন আহমেদ প্রাপ্তি দেখছেন সেটিকেই। বলছেন, এর বেশি কিছু করার নেই-ও তাদের, “এটা আসলে কম্বিনেশনের চেয়ে বড় ব্যাপার হলো ভাল বল করা। হয়ত এই কন্ডিশন বোলারদের জন্য কঠিন, টেস্ট ক্রিকেটে বোলাররা উইকেট থেকে টার্ন (মুভমেন্ট) বা সিম পেলে আরেকটু ভাল করতে পারে। এখন এরকম উইকেটে কিছু করার নেই। আমরা সেরাটা দিয়েছি, বলতে পারেন ভিন্ন অভিজ্ঞতা হচ্ছে, শেখার চেষ্টা করছি যে এরকম উইকেটে কীভাবে ভাল বোলিং করা যায়।”
“সত্যি কথা বলতে টেস্ট ক্রিকেটে এমন উইকেট খুব কঠিন বোলারদের জন্য। ওদের (সুরাঙ্গা) লাকমালও কিন্তু ৩৫ ওভার বল করেছে (৩৬ ওভারে ৮১ রানে ১ উইকেট)। আমাদের বাকি যারা করেছে ভাল করেছে। উইকেটটা এমন যে, সুযোগ তৈরি হওয়ার জায়গা কম ছিল। ভালো বলও উনিশ-বিশ হলে বাউন্ডারি হয়ে যাচ্ছে। আমরাও তো ৫৭৪ (৫৪১) করে ডিক্লেয়ার করেছি। আরেকটু ভাল উইকেট যদি হতো, উইকেটে সহায়তা যদি থাকত তাহলে ভাল হতো।”
তবে সহায়তা না মিললেও এমন উইকেটে বোলিংয়ের শিক্ষার দিকটাও দেখছেন তিনি, “অবশ্যই আসলে এরকম কন্ডিশনে দেখা যাবে নিজেরও একটা কিছু করার জায়গা থাকে। যেমন নিয়মিত একটা ভাল জায়গায় বোলিং করে যাওয়া। ব্যাটসম্যানকে একটা পরিকল্পনায় বল করা। এটা নিজের জন্য অনেক বড় শিক্ষার ব্যাপার। আর এরকম কন্ডিশনে যথেষ্ট স্কিল ও ফিটনেস না থাকলে ভাল করা যায় না, এটাও একটা বড় শিক্ষা। তো সব কিছুই লাগবে এরকম কন্ডিশনে টিকে থাকার জন্য। আমরা আমাদের মতো সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করছি। আশাকরি কাল আরো ভাল দিন হবে।”
চতুর্থ দিন সকালে একটু আঁটসাঁট বোলিং করলেও বাংলাদেশ ক্রমাগত চাপ তৈরি করতে পারেনি এ মরা উইকেটে। ব্যাটসম্যানরাও সে অর্থে ভুল করেননি তেমন। তিন পেসারের মাঝেও তুলনামূলক ভাল পারফরম্যান্স তাসকিনেরই, প্রথম দিনই সে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। অথচ তাসকিন টেস্ট খেলছেন ২০১৭ সালের পর প্রথমবার।
“এটা আসলে মেনে নিতেই হবে। কন্ডিশন যেমন হোক আবহাওয়া বা উইকেট তো আমাদের হাতে নেই। যেটা ফোকাস করছি তা হল– ভাল জায়গায় বল করা, কিভাবে রান আটকে রাখা যায়, ওই চিন্তা করেই বল করছি। আমি আমার শক্তি অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করছি। যেহেতু উইকেটে সহায়তা নাই, তো কিছু তো করার নাই। দলকে সেরাটা দিয়ে সহায়তা করার চেষ্টাই করছি।
“আর কামব্যাক করার বিষয়টা- আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভাল লাগছে। কারণ টেস্ট ক্রিকেটটাই আসল ক্রিকেট। এখানে মানসিক, শারিরিক, স্কিল সব কিছুই বেশি লাগে। তো এখানে ভাল করলে ভবিষ্যতে ছোট ফরম্যাট সহজ হবে। এটা অনেক চ্যালেঞ্জের জায়গা। আমি খুবই ভাগ্যবান যে আবার টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছি।”
সে সুযোগটা তারা নিয়মিত পাবেন কিনা এখন থেকে, প্রশ্ন তো আদতে সেটাই।