বোলিংয়ে উজ্জ্বল মোস্তাফিজ, কলকাতাকে রেখে হারের বৃত্ত থেকে বেরুলো রাজস্থান
গ্রুপপর্ব, মুম্বাই (টস- রাজস্থান/ফিল্ডিং)
কলকাতা নাইট রাইডারস ১৩৩/৯, ২০ ওভার (ত্রিপাঠি ৩৬, কার্তিক ২৫, রানা ২২, মরিস ৪/২৩, মোস্তাফিজ ১/২২, উনাডকাট ১/২৫ )
রাজস্থান রয়্যালস ১৩৪/৪, ১৮.৫ ওভার ( স্যামসন ৪২*, মিলার ২৪*, জাইসওয়াল ২২, চক্রবর্তী ২/৩২, মাভি ১/১৯, কৃষ্ণ ১/২০)
রাজস্থান ৬ উইকেটে জয়ী
মোস্তাফিজুর রহমান ও ক্রিস মরিসের দারুণ বোলিংয়ের পর অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসনের অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংসে 'দুই হারতে থাকা দলের লড়াইয়ে' ৬ উইকেটে জয় পেয়েছে রাজস্থান। আইপিএলের এ ম্যাচ হতে পারত সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মোস্তাফিজের প্রথম দ্বৈরথ। তবে আগের ম্যাচের মতো এবারও কলকাতা একাদশে ছিলেন না সাকিব, আর এখন পর্যন্ত সবকটি ম্যাচ খেলা মোস্তাফিজ এদিনও ছিলেন সপ্রতিভ।
মরিসের চার উইকেটের পাশে মোস্তাফিজের বোলিং ফিগার অসাধারণ না মনে হলেও স্লোয়ার, কাটারে কলকাতা ব্যাটসম্যানদের ব্যাতিব্যস্ত করে চার ওভারে দিয়েছেন ২২ রান, ক্যাচ না পড়লে নামের পাশে একটির বদলে থাকতে পারত আরও উইকেট। কলকাতার বেধে দেওয়া ১৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় এরপর স্যামসন আগলে রেখেছেন রাজস্থানকে, প্রথম ম্যাচ জয়ের পর থেকে টানা হারের রেকর্ডটা কলকাতার বদলালো না তাই, সেটি সাকিবের বদলে নারাইন বা অন্য পরিবর্তন এনেও।
রাজস্থানের পেস আক্রমণ শুরু থেকেই চেপে বসেছিল কলকাতার ওপরে। মোস্তাফিজ তার প্রথম ওভারেই পেতে পারতেন উইকেট, দারুণ অফকাটারে শুবমন গিলকে বিভ্রান্ত করলেও তার আকাশে তুলে দেওয়া ক্যাচ নিতে পারেননি আসরে প্রথম খেলতে নামা জাইসওয়াল। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি গিল, মোস্তাফিজের পরের ওভারেই দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে বাটলারের দারুণ ডিরেক্ট থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরে গেছেন মাত্র ১১ রানেই, মোস্তাফিজ ওই ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ২। সেই চাপ ধরে রেখেছিলেন রাজস্থান পেসাররা, পাওয়ারপ্লেতে কলকাতা তুলতে পেরেছিল মাত্র ২৫ রান।
পাওয়ারপ্লের চাপেই নিতিশ রানা কট-বিহাইন্ড হয়েছেন চেতন সাকারিয়ার বলে, ২৫ বলে ২২ রান করেছেন তিনি। সুনীল নারাইনকে চারে নামানো হয়েছিলো, তবে সেই পরিকল্পনা কাজে লাগেনি, তিনি ফিরেছেন ৬ রানেই। সহজ একটা ক্যাচ মিস করার পরে দারুণ ক্যাচ নিয়ে কিছুটা চাপমুক্ত হয়েছেন জাইসওয়াল, জয়দেভ উনাডকাটের স্লোয়ারে নারাইনের তোলা ক্যাচ লং লেগ থেকে এসে নিয়েছেন ডাইভ দিয়ে। কলকাতার দুর্ভোগ আরও বেড়েছে মরগানের অদ্ভুত রান-আউটে- ত্রিপাঠির স্ট্রেইট ড্রাইভ সজোরে স্টাম্পে লেগে বোলার মরিসের কাছেই ফিরে এলেও ত্রিপাঠির রানের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে সেটা বুঝতে পারেননি মরগান।
কলকাতার বিপদ কিছুটা সামলে উঠেছিলেন রাহুল ত্রিপাঠি ও দীনেশ কার্তিক। তবে ১৬তম ওভারে গিয়ার পরিবর্তন করতে গিয়ে মোস্তাফিজের দারুণ অফ কাটারে রিয়ান পরাগের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ২৬ বলে ৩৬ করা ত্রিপাঠি। এরপর কলকাতার শক্ত লোয়ার ব্যাটিং অর্ডার এদিন একদম মুখ থুবড়ে পড়েছে মরিসের সামনে। নিজের শেষ স্পেলে ১৪ রান দিয়ে তিনি নিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল, দীনেশ কার্তিক, প্যাট কামিন্স আর শিভাম মাভির উইকেট, সব মিলিয়ে দিয়েছেন মাত্র ২৩ রান।
ওয়াঙ্খেড়ের উইকেটে ১৩৪ রানের লক্ষ্য খুব একটা বড় হওয়ার কথা না হলেও জস বাটলারের সাথে নতুন ওপেনিং সঙ্গী হিসাবে এই মৌসুমে প্রথম নামা জাইসওয়াল হয়ত কিছুটা স্নায়ুচাপেই ভুগছিলেন, প্রথম ওভারেই শুবমান গিলের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বেঁচে যান তিনি। তবে তার ওই চাপ যেন সংক্রমিত হয় অপর প্রান্তে, বরুণ চক্রবর্তীর স্লাইডারে এলবিডব্লিউ হয়ে মাত্র ৫ রানেই ফিরে যান বাটলার। উইকেটে এসেই অধিনায়ক সাঞ্জু স্যামসন প্রথম বলেই যে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মারেন সেখান থেকেই হয়ত কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পান জাইসওয়াল, এরপর খেলেছেন দারুণ কিছু শট। তবে এই মৌসুমে প্রথমবার নামা আরেকজন শিভাম মাভির উপর চড়াও হতে গিয়ে বদলি ফিল্ডার কামলেশ নাগারকোটির হাতে ধরা পড়েন তিনি ১৭ বলে ২২ রান করে। তবে এই জুটিতে ভর করে পাওয়ারপ্লেতে দুই উইকেটে ৫০ রান তুলেছে রাজস্থান।
গত ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা দুবেকে সাথে নিয়ে এরপর বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন স্যামসন। মাঝের কয়েকটা ওভারে নারাইন আর চক্রবর্তীর কিপ্টে বোলিংয়ের কারণে বাউন্ডারির খোঁজ করতে যাওয়াটা কাল হয় দুবের, চক্রবর্তীকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরে গেছেন ২২ রানে। ওপরে আসা রাহুল তেওয়াতিয়াকে, তবে কৃষ্ণকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাগারকোটির হাতে সহজ ক্যাচে তিনি ফিরেছেন আগেভাগেই।
এরপরে ডেভিড মিলারকে সঙ্গী করে আর কোন বিপদ ঘটতে দেননি স্যামসন। ২৩ বলে ২৪ রানে অপরাজিত থেকে মিলার তার অধিনায়ককে দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গ। কামিন্সের বলে সিঙ্গেল নিয়ে জয়টা এসেছে অধিনায়কের ব্যাট থেকেই, ৪১ বলে ৪২ রানের ইনিংসই হয়েছে দারুণ কার্যকর, যে ইনিংসে জয়ের হার থেকে বের হওয়া নিশ্চিত হয়েছে তাদের, আর হারের বৃত্তেই থেকে গেছে কলকাতা।