আবারও আগ্রাসী তামিম, বৃষ্টির পর পাল্লেকেলেতে অনুমিত ড্র
১ম টেস্ট, পাল্লেকেলে (টস- বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৪১/৭ ডিক্লে., ১৭৩ ওভার (শান্ত ১৬৩, মুমিনুল ১২৭, তামিম ৯০, মুশফিক ৬৮*, লিটন ৫০, ভিশ্ব ফার্নান্ডো ৪/৯৬, কুমারা ১/৮৮, লাকমাল ১/৮১, ধনঞ্জয়া ১/১৩০) ও বাংলাদেশ ২য় ইনিংস ১০০/২, ৩৩ ওভার (তামিম ৭২*, মুমিনুল ২৩*, লাকমাল ২/২১)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৬৪৮/৮, ১৭৯ ওভার (করুনারত্নে ২৪৪, ডি সিলভা ১৬৮*, থিরিমান্নে ৫৮, তাসকিন ৩/১১২, তাইজুল ২/১৬৪, মিরাজ ১/১৬১
ম্যাচ ড্র
তামিম ইকবালের আক্রমণাত্মক ইনিংসের পর বৃষ্টি এসে অনুমিতভাবেই ড্র হয়েছে পাল্লেকেলেতে প্রথম টেস্ট। ১০৭ রানের লিড নিয়ে শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করার পর ২৭ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ওপর যদি কোনো শঙ্কা ভর করেও থাকে, সেটি মিলিয়ে গেছে তামিমের ওই ইনিংসে। চা-বিরতিতে বাংলাদেশ গিয়েছিল ৭ রানে পিছিয়ে থেকে, তামিমের অপরাজিত ৯৮ বলে ৭৪ রানের ইনিংসে ভর করে। তার সঙ্গী অধিনায়ক মুমিনুল হকের রান ছিল ৮৬ বলে ২৩। তবে বিরতির পরই বাড়তে থাকা বৃষ্টিতে খেলা হয়নি আর, শেষ পর্যন্ত আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ানো তামিমের সেঞ্চুরিও পাওয়া হয়নি তাই। এই ড্র দিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসের মতোই তামিম এদিনও শুরু থেকেই করেছিলেন আক্রমণ, বাংলাদেশের প্রথম ৫২ রানের ৫০ রানই ছিল তার, ইনিংসে ১৩ বাউন্ডারির সবকটিই তার! সুরাঙ্গা লাকমালকে দুই চারে শুরু করেছিলেন, সবচেয়ে বেশি ঝড়টা গেছে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ওপর দিয়ে। তিনটি ছয়ের সবকটিই মেরেছেন তাকে, সবকটিই ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে দারুণ নিয়ন্ত্রণে।
এর মাঝে লাকমালের শিকার হয়েছেন সাইফ হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। সাইফ পা না নড়িয়ে খোঁচা দিয়ে পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন, প্রথম ইনিংসের পর আরেকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি। শরীর থেকে দূরে খেলতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার শান্তও, তিনি ফিরেছেন শূন্যেই। শান্তর উইকেটের পর একটু গতি কমিয়ে এনেছিলেন তামিম, একটু খোলসের ভেতরে ঢুকেছিলেন তিনি।
এর মাঝে তার একটা ক্যাচ নিয়ে নাটকও হয়েছে। ডি সিলভাকে জায়গা বানিয়ে কাভারের দিকে খেলতে গিয়েছিলেন তামিম, সিলি-পয়েন্টের বুটে লেগে ওঠার পর সেটি নিয়ে ক্যাচ ক্লেইম করেছিলেন নিরোশান ডিকওয়েলা। সফট সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল আউট, প্রথমদফা রিপ্লেতে বল বাউন্স করেছে মনে করলেও এরপর বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন টিভি আম্পায়ার। শেষ পর্যন্ত বেঁচেই গেছেন তামিম।
এরপরের ওভারে ডি সিলভাকে চার মেরে আবার আক্রমণ শুরু করেছেন তামিম, ভিশ্ব ফার্নান্ডোকে মারা টানা তিন চারে ফিফটিতে পৌঁছে গেছেন ৫৬ বলেই। এরপর ডি সিলভাকে মেরেছেন দুই ছয়। সেঞ্চুরিটা একসময় সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে হচ্ছিল তার। আরেকদিকে মুমিনুল হক অবশ্য সতর্ক ছিলেন বেশ, উইকেটও যেতে দেননি। তার বিপক্ষে একটা রিভিউ নিলেও শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কাজে আসেনি সেটি।
এর আগে আগেরদিনের সঙ্গে ১৩৬ রান তুলে লাঞ্চের মাঝে ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। উইকেটশূন্য এক দিনের পর এক সকালেই ৫ উইকেট, এ টেস্টে বোলিংয়ে সেরা সেশনটা গেছে বাংলাদেশের। সকালে তাসকিন আহমেদ ভেঙেছেন দিমুথ করুনারত্নে ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ৩৪৫ রানের জুটি, এ দুজনকেই ফিরিয়েছেন তিনি। এ ইনিংসে ভাল বোলিংয়ের পুরস্কার বেশ লম্বা বিরতির পর আরেকদফা পেলেন তিনি।
শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন করুনারত্নে-ডি সিলভা, গতকাল কোচ মিকি আর্থার যেমন বলেছিলেন। দিনের ৫ম ওভারে প্রথম ব্রেকথ্রু পেয়েছিল বাংলাদেশ, তাসকিনের অফস্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে শেষ মুহুর্তে ব্যাট চালিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছিলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, আগেরদিনের সঙ্গে আর ১২ রান যোগ করে। প্রায় ৯১ ওভার পর আরেকটি উইকেটের দেখা পেয়েছে তাতে বাংলাদেশ।
তাসকিনের পরের ওভারে শর্ট বলে টপ-এজড হয়েছেন করুনারত্নে, ২৪৪ রান করে- যা শ্রীলঙ্কান কোনো ব্যাটসম্যানের দশম সর্বোচ্চ স্কোর। ৫ ওভারের স্পেলের পর তাসকিনের জায়গায় এসেছিলেন এবাদত, সফল হয়েছেন তিনিও। ১৪১ কিলোমিটার গতির অফস্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শটে এজড হয়েছেন পাথুম নিসাঙ্কা। নিরোশান ডিকওয়েলা ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা দ্রুতগতিতে রান তোলার চেষ্টা করেছিলেন এরপর।
ডিকওয়েলা ফিরেছেন হাসারাঙ্গার সঙ্গে বড় ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউট হয়ে, ৩৩ বলে ৩১ করে, ৩টি চারের বেশি মারা হয়নি তার। সুরাঙ্গা লাকমালের সঙ্গে হাসারাঙ্গার পরের জুটি শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে দিয়েছে বেশ। হাসারাঙ্গা ৪৩ রান করে বোল্ড হয়েছেন তাইজুল ইসলামের বলে, আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে। লাকমালের সঙ্গে তার জুটিতে ৬৪ বলে উঠেছে ৬২ রান।