'জাদেজা সুপার কিং'-এ মৌসুমে প্রথম হারের স্বাদ কোহলিদের
গ্রুপপর্ব, মুম্বাই (টস-ব্যাঙ্গালোর /ব্যাটিং)
চেন্নাই সুপারকিংস ১৯১/৪, ২০ ওভার (জাদেজা ৬২*, ফাফ ডু প্লেসি ৫০, গায়কোয়াড় ৩৩, চেহেল ১/২৪, হারশাল ৩/৫৪)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস ব্যাঙ্গালোর ১২২/৯, ২০ ওভার (পাডিক্কাল ৩৪, ম্যাক্সওয়েল ২২, জেমিসন ১৬, জাদেজা ৩/১৩, তাহির ২/১৬, ঠাকুর ১/১১ )
চেন্নাই সুপার কিংস ৬৯ রানে জয়ী
শেষ ওভার শুরুর আগেও চেন্নাইয়ের রান ছিল ১৫৪, রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাটিং করছিলেন ২১ বলে ২৬ রানে। সেখান থেকে চেন্নাই গেল ১৯১ পর্যন্ত, হারশাল প্যাটেলের এক ওভারেই যে এক নো-সহ ৩৭ রান তুললেন জাদেজা! ছয়টি ছয় মারেননি, তবে ব্যাঙ্গালোরকে যেন সেখানেই একদফা ছিটকে দিলেন তিনি ম্যাচ থেকে ২৮ বলে ৬২ রানের অপরাজিত ইনিংসে। জাদেজা যথেষ্ট মনে করলেন না সেটিও, এরপর বোলিংয়ে নিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট, ৪ ওভারে দিলেন মাত্র ১৩ রান। শেষ হলো না তাতেও, সময়ের অন্যতম সেরা ফিল্ডার একটা রান-আউট করলেন ডিরেক্ট থ্রো-য়েও। কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ যদি ওয়ান-ম্যান শো হয়ে থাকে, ম্যাচসেরা নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাজটা যদি সহজতম হয়ে থাকে, তাহলে এই ম্যাচটা তার উদাহরণ। ‘জাদেজা সুপার কিং’-এর কাছেই এ মৌসুমের প্রথম হারের স্বাদ পেয়েছে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। এ জয় দিয়ে ব্যাঙ্গালোরকে টপকে টেবিলের শীর্ষেও উঠে এসেছে চেন্নাই।
আগের ম্যাচে বড় লক্ষ্য অনায়াসে তাড়া করে ব্যাঙ্গালোরের এবারের শুরুটাও হয়েছিল ঝড়ো। তবে মাত্র ৮ রানেই স্যাম কারানের বলে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বিরাট কোহলি। তাতে বিচলিত না হয়ে অন্য ওপেনার দেভদূত পাডিক্কাল ছিলেন আক্রমণাত্মক। তবে আক্রমণ করতে গিয়েই শারদুল ঠাকুরের বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে রায়নার কাছে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ১৬ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। পাওয়ারপ্লেতে অবশ্য ৬৫ রান তুলে ভালোভাবেই ম্যাচে ছিল ব্যাঙ্গালোর।
টুর্নামেন্টের দারুণ ফর্ম বজায় রেখে নেমেই বেশ সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন ম্যাক্সওয়েল। তবে দিনটা যে আসলে ছিল জাদেজার- আক্রমণে এসে মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন ব্যাঙ্গালোরের ব্যাটিং লাইনআপ। তাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রুতুরাজ গায়কোয়াড়ের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ৭ রান করে ফিরে যান তিনে নামা ওয়াশিংটন সুন্দর। একটু পরেই ১৫ বলে ২২ রান করে জাদেজার বলে পরাস্ত হয়ে বোল্ড ম্যাক্সওয়েল। পরের ওভারে ড্যান ক্রিশ্চিয়ান শিকার হন দুর্দান্ত এক রান আউটের। নায়ক? আবারও সেই জাদেজা। পরের ওভারে এসেই ব্যাঙ্গালোরের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকে দেন এবি ডি ভিলিয়ার্স্কে বোল্ড করে, তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শেষ সুযোগটাও ধ্বংস করে দেন সেই জাদেজাই।
এরপরে বাকি ছিল শুধু ম্যাচ শেষের আনুষ্ঠানিকতা। অধিনায়ক এমএস ধোনির মুখের হাসি অবশ্য আরও বিস্তৃত হয়েছে আসরে প্রথম খেলতে নামা ইমরান তাহিরের পারফর্ম্যান্সে, বুড়ো হারের ভেল্কিতে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন হারশাল প্যাটেল ও নাভদিপ সাইনির উইকেট, সাথে ১৩ বলে ১৬ করা কাইল জেমিসনকে ফিরিয়েছেন দারুণ এক রান আউটে। এরপর যুঝবেন্দ্র চেহেল ও মোহাম্মদ সিরাজ মিলে দলীয় স্কোর নিয়ে গেছেন ১২২ রানে। অল-আউট করতে না পারলেও এক জাদেজাময় ম্যাচ সুপার কিংস পেয়েছে ৬৯ রানের বিশাল জয়।
এর আগে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে উইকেট না পেলেও দারুণ এক ওভার দিয়ে ইনিংস শুরু করেছিলেন সিরাজ। তবে সেটা ধরে রাখতে পারেননি ব্যাঙ্গালোর বোলাররা। আগের ম্যাচের ফর্ম ধরে রেখে ফাফ ডু প্লেসি ও গায়কোয়াড় জুটি মুহুর্তেই হয়ে উঠেন ভয়ঙ্কর। অফসাইডে দারুণ সব চার মেরে বোলারদের ব্যাতিব্যাস্ত করে রাখেন গায়কোয়াড়। দুজনের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লেতে বিনা উইকেটে ওঠে ৫১ রান। অবশ্য এর কিছু পরে স্পিনারদের উড়িয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিলেই ফিরে যেতে হয় গায়কোয়াড়কে, চেহেলের ভাসিয়ে দেওয়া লেগ স্পিনে ডিপ স্কয়ারে জেমিসনের সহজ ক্যাচে শেষ হয় তার ২৫ বলে ৩৩ রানের ইনিংস।
রায়নাকে সঙ্গী করে অবশ্য দারুণ শুরুটা কাজে লাগিয়ে দলের স্কোর বড় করার কাজটা ভালভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন ডু প্লেসি, ৪০ বলে তিনি পূর্ণ করেন তার টানা দ্বিতীয় ফিফটি। তবে বিপত্তি ঘটে হারশাল প্যাটেলের করা ১৪তম ওভারে। দারুণ কিছু স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হওয়ার পর কিছুটা অস্থির হয়েই রায়না তার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়েই পাডিক্কালের সহজ ক্যাচে পরিণত হন, ভাল শুরু করেও ১৬ বলে ২৪ রানেই শেষ হয় তার ইনিংস। পরের বলেই উড়িয়ে মারতে গিয়ে ওই ৫০ রানে থাকতেই লং অনে ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের তালুবন্দি হয়ে ফিরে যান ডু প্লেসিও। ১৫তম ওভারে ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যানের আগমনের সুযোগ নিয়ে কিছুটা চেপে বসার চেষ্টা করেন ব্যাঙ্গালোর বোলাররা। সেই চাপ থেকেই বল আকাশে উড়িয়ে মারতে যান জাদেজা, তবে ০ রানে থাকতেই জাদেজার ঐ সহজ ক্যাচ ফেলে দেন ক্রিশ্চিয়ান। তখন বোধয় ক্রিশ্চিয়ান ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি কী ঘটতে চলেছে তাদের সাথে।
আম্বাতি রাইডুকে সাথে নিয়ে জাদেজা এগুচ্ছিলেন, তবে হারশালের বলে ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দিয়ে ১৪ রানেই ফিরে যান রাইডু। পুরো ম্যাচজুড়ে দারুণ বল করে ৩ ওভারে মাত্র ১৪ রান গুণে ৩ উইকেট নেওয়া হারশালকে শেষ ওভারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার প্রথম বলটাই ছিল অফ কাটার, সেটা সজোরে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছয় মেরেই জাদেজা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কিছু একটার। এরপরের দুই বলেও ছয়, সঙ্গে তিন নম্বর বলটা নো বল হওয়ায় ফ্রি হিটেও তাই, ২৫ বলেই ফিফটি হয়ে যায় জাদেজার। এরপর দুই-ছয়-চার দিয়ে ৩৭ রানের ওভার শেষ করেন তিনি।
দিনটা যে জাদেজারই হতে চলেছে সেটা তো সেই শেষ ওভারেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।