মৌসুমের প্রথম সুপার ওভারে হায়দরাবাদকে টপকে গেল দিল্লি
গ্রুপ পর্ব- চেন্নাই (দিল্লি/ ব্যাটিং)
দিল্লি ক্যাপিটলস ১৫৯/৪, ২০ ওভার ( পৃথ্বী ৫৩, পান্ট ৩৭, স্মিথ ৩৪*, কৌল ২/৩১, রশিদ ১/৩১, শঙ্কর ০/১৯)
সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১৫৯/৭, ২০ ওভার ( উইলিয়ামসন ৬৬*, বেইরস্টো ৩৮, সুচিথ ১৪*, অক্ষর ২/২৬, আভেশ ৩/৩৪ , মিশ্র ১/৩১)
ম্যাচ টাই, সুপার ওভারে দিল্লি জয়ী (হায়দরাবাদ ৭/০, দিল্লি ৮/০)
আইপিএলের এ মৌসুমের প্রথম সুপার ওভারে হায়দরাবাদকে টপকে গেছে দিল্লি। নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৬০ রানতাড়ায় ১৫৯ রানে আটকে গিয়েছিল হায়দরাবাদ, জনি বেইরস্টোর ১৮ বলে ৩৮ রানের ঝড়ের পর কেন উইলিয়ামসনের অপরাজিত ৬৬ রানের সঙ্গে শেষদিকে জগদিশা সুচিতের ৬ বলে ১৬ রানের ক্যামিওতে ভর করে। তবে সুপার ওভারে উইলিয়ামসনের সঙ্গে হায়দরাবাদ পাঠিয়েছিল ডেভিড ওয়ার্নারকে, সেখানে উইলিয়ামসনের এক বাউন্ডারিতে আক্সার প্যাটেলের কাছ থেকে ৭ রানের বেশি তুলতে পারেননি তারা। রশিদ খান এরপর শিখর ধাওয়ান ও ঋষভ পান্টকে শেষ বল পর্যন্ত নিয়ে গেলেও আটকাতে পারেননি দিল্লিকে।
এর আগে চিপকের শেষ ম্যাচে ১৬০ তাড়ার শুরুটা সতর্কভাবে করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার-জনি বেইরস্টো। ওয়ার্নারের রান-আউটে শুরুতেই ধাক্কা খায় তারা। শুরুতে রিভিউ নিয়েও শিমরন হেটমায়ারের ক্যাচ মিসে দুইবার বাঁচেন বেইরস্টো। নিজের ফর্মটা টেনে এনে এবার স্পিনারদের চড়াও হন, আইপিএলে চতুর্থ দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে পূর্ণ করেন ১০০০ রানও। তবে তার ১৮ বলের ৩৮ রানের ঝড় থামে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে চতুর্থ বোলার হিসেবে আসা আভেশ খানের স্লোয়ারে, মিড-অনে শিখর ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তার ঝড়েই পাওয়ারপ্লেতে হায়দরাবাদের ওঠে ৫৬ রান।
হায়দরাবাদের দূর্বল মিডল-অর্ডার মিলিয়ে তাদের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে ছিলেন উইলিয়ামসন, দিল্লির স্পিনারদের যিনি সামলেছেন দারুণভাবে, প্রান্ত বদল করে, বাজে বলে বাউন্ডারিতে। অন্যপ্রান্তে ভুগতে থাকা বিরাট সিং বিদায় নেন ১৪ বলে ৪ রান করে, আভেশ খানের বলে। এরপর দ্রুতই ফেরেন কেদার যাদবও, অমিত মিশ্রর বলে স্টাম্পড হয়ে।
কঠিন হয়ে আসা উইকেটের অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যান আসা যাওয়ার মাঝেও উইলিমাসন তার সহজাত খেলাটাি খেলে যাচ্ছিলেন, ৪২ বলে পূর্ণ করেছেন আইপিএলে তার ১৬তম ফিফটি। তবে ১৭ তম ওভারে আক্রমণে ফিরে অক্ষর প্যাটেল টানা দুই বলে ফেরান অভিষেক শর্মা ও রশিদ খানকে, রানতাড়া আরও কঠিন হয়ে আসে উইলিয়ামসনের জন্য। ১৯তম ওভারের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয় ম্যাচজুড়ে দারুণ বল করা আভেশকে, আস্থার প্রতিদান দিয়ে বিজয় শঙ্করকে ৮ রানে ফেরান তিনি। তবে নেমেই জগদিশা সুচিথ চার-ছয় মেরে শেষ ওভারের লক্ষ্যটা নামিয়ে আনেন ১৬ রানে। রাবাদার করা শেষ ওভারের প্রথম বলটাই হয় ওয়াইড, পরের বলটা কোথায় আসতে যাচ্ছে অনুমান করেই দারুণ স্কুপে চার মারেন উইলিয়ামসন। পরের বলে ব্যাটে বলে না হলেও সুচিথে ভরসা রেখে সিঙ্গেল নিলে পরের বলেই ছয় মেরে সুচিথ সমীকরণ নামিয়ে আনেন ৩ বলে ৪ রানে। তবে শেষ তিন বলে তিন সিঙ্গেল নিলে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে অক্ষর প্যাটেল বল করবেন জেনেও বেইরস্টোকে পাঠায়নি হায়দরাবাদ, স্টাম্প বরাবর বল করে ওয়ার্নার-উইলিয়ামসনকে একেবারেই সুবিধা করতে দেননি তিনি। রশিদ খান দারুণ করলেও পান্টের সুইচ হিটে মারা একটি চারই ব্যবধান গড়ে দেয় শেষ পর্যন্ত। পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউের রিভিউ করা হলেও বেঁচে যান পান্ট। শেষ বলে ধাওয়ান ব্যাট লাগাতে না পারলেও লেগবাই থেকে পাওয়া সিঙ্গেলে ম্যাচ জেতে দিল্লি।
চেন্নাইয়ের ধীরগতির উইকেটের শেষ পরীক্ষার দিনেও টসে জিতে এদিন ব্যাটিং নিয়েছিল দিল্লি, শুরুতে একটা সুযোগ দিলেও বেঁচে যান শিখর ধাওয়ান। তবে ফর্মে থাকা তার সঙ্গে পৃথ্বি শর জুটি ঠিকই পাওয়ারপ্লেতে তোলে ৫১ রান। আক্রমণে এসেই অবশ্য জুটি ভাঙেন রশিদ খান, ২৬ বলে ২৮ করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান ধাওয়ান। চিপকের উইকেট সময়ের সাথে আরও মন্থর হয়ে আসে বলে শেষ ওভারগুলোতে রান করা দুষ্কর হয়ে উঠে, সেটা মাথায় রেখেই রানের চাকা সচল রাখতে এদিন তিনে নামেন অধিনায়ক পান্ট।
শুরু থেকেই পান্ট আক্রমণাত্মক হওয়াতে অন্যপ্রান্তে থাকা শর জীবন সহজ হয় আরেকটু, ৩৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর রান-আউট হন শ অদ্ভুতভাবে- সুচিথের বলে তিনি পরাস্ত হলেও স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করেন বেইরস্টো, বল যে ওখানেই ছিল বুঝতে না পেরে দৌড় দেওয়াতে বেইরস্টোর থ্রো তুলে নিয়ে সহজেই বোলিং প্রান্তে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন সুচিথ। শেষের ব্যাটিংয়ের আগে বোলিংয়েও দারুণ করেছেন সুচিথ, ৪ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ২১ রান।
পান্টের সাথে থাকা স্টিভেন স্মিথ অনেকক্ষণ ধরে উইকেটে থাকলেও বাউন্ডারি বের করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, খেলছিলেন কিছুটা শ্লথ গতিতে। আক্রমণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে দুটি চার মারার পরে উড়িয়ে মারতে গিয়েই ফিরে যান পান্ট, ২৭ বলে ৩৭ রান করে সিদ্ধার্থ কৌলের বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ ১৯তম ওভারে কৌল হেটমায়ারকে ফেরানোর পর দেন ৩ রান, খলিল আহমেদের করা শেষ ওভারে ১৪ রান তুলে স্মিথ ১৫৯ পর্যন্ত নিয়ে যান দিল্লিকে, যিনি অপরাজিত ছিলেন ২৭ বলে ৩৪ রান করে।
বেইরস্টো ঝড়ের পর হায়দরাবাদকে এরপর অনেকদূর এগিয়েছিলেন উইলিয়ামসন, তবে সুপার ওভারের শেষ হাসিটা তার হাসা হলো না আরেকবার।