অবশেষে জয়ের দেখা পেল সাকিবহীন কলকাতা
গ্রুপ পর্ব, আহমেদাবাদ (টস- কলকাতা/ ফিল্ডিং)
পাঞ্জাব কিংস ১২৩/৯, ২০ ওভার ( আগারওয়াল ৩১, জর্ডান ৩০, পুরাণ ১৯, কৃষ্ণ ৩/৩০, নারাইন ২/২২, কামিন্স ২/৩১)
কলকাতা নাইটরাইডার্স ১২৬/৫, ১৬.৪ ওভার ( মরগান ৪৭*, ত্রিপাঠি ৪১, কার্তিক ১২*, শামি ১/২৫, আরশদিপ ১/২৭, হেনরিকস ১/৫)
কলকাতা নাইটরাই্ডার্স ৫ উইকেটে জয়ী
হারের বৃত্ত থেকে অবশেষে বের হয়ে আসলো কলকাতা নাইটরাইডার্স। বোলারদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাত্র ১২৩ রানে পাঞ্জাব কিংসকে আটকে দেওয়ার পরে পাওয়ারপ্লেতে শুরুটা হয়েছিলো ভয়াবহ। পরে রাহুল ত্রিপাঠির ৪১ ও অধিনায়ক মরগানের সময়োপযোগী ৪৭* রানের ইনিংসে আহমেদাবাদে আসরের প্রথম ম্যাচে সহজ জয়ই পেয়েছে তারা। সাকিবকে ছাড়া মাঠে নেমে এই প্রথম জয়ের দেখা পেল কলকাতা।
লক্ষ্য ছিল ছোট, তবে কলকাতার খারাপ ফর্মের চাপ যেন পেয়ে বসেছিল তাদের। প্রথম ওভারেই মইসেস হেনরিকসের অত্যন্ত নিরীহ ফুলটসে শাহরুখ খানের কাছে ক্যাচ দিয়ে নিজের খেলা প্রথম বলেই ফিরে যান নিতিশ রানা। দুর্বিষহ এক মৌসুম কাটানো শুবমান গিলও ড্রেসিং রুমের পথ ধরেছেন একটু পরেই, মোহাম্মদ শামির ভেতরে ঢোকা বল আড়াআড়ি ব্যাটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেছেন মাত্র ৯ রান করেই। চারে নামা সুনীল নারাইন ফিরে গেছেন চতুর্থ বলেই, বেশখানেক দৌড়িয়ে সামনে ঝাঁপিয়ে অসাধারন ক্যাচ নিয়ে রবি বিষ্ণয় তাকে ফিরিয়েছেন শূন্য রানে। এর কিছু পরেই বুড়ো ক্রিস গেইল যেন ফিরে গিয়েছিলেন পুরনো দিনে, দারুণ ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বল লুফে নিয়ে করেছিলেন সরাসরি থ্রো। রাহুল ত্রিপাঠি ধরেই নিয়েছিলেন তার ইনিংস শেষ, তবে টিভি আম্পায়ারের রিপ্লেতে দেখা গেছেন অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন তিনি। ঘটনাবহুল পাওয়ারপ্লেতে অধিনায়ক অইন মরগানকে নিয়ে আর কোন বিপদ ঘটতে দেননি ত্রিপাঠি, পাওয়ারপ্লেতে এসেছে ৪২ রান।
মরগান-ত্রিপাঠি জুটি এরপরে সতর্কভাবে খেলে গেছেন। ত্রিপাঠি একটু হাত খুলে খেললেও বাজে বল ছাড়া বাউন্ডারির খোঁজ করেননি মরগান, দলকে জয় এনে দিতে ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অবশ্য মারমুখী হতে গিয়েই ফিরে গেছেন ত্রিপাঠি, দিপক হুডার বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে শাহরুখকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৩২ বলে করেছেন ৪১। আরশদিপ সিংয়ের দারুণ থ্রোতে রান আউট হয়ে রাসেল মাত্র ১০ রান করে ফিরে গেলে আবারও কিছুটা বিপদে পরে কলকাতা। তবে দীনেশ কার্তিককে সাথে নিয়ে পাঞ্জাবের বোলারদের আর চেপে বসতে দেননি মরগান। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৭০০০ রান পূর্ণ করার দিনে ৪০ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত থেকে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছেরেছেন মরগান।
হারের বৃত্ত থেকে বের হতে হলে দারুণ কিছু করতে হত কলকাতার বোলারদের। প্রথম কয়েক ওভারে সুযোগ তৈরি করেও ফলাফল পাননি, টপ- এজড হয়ে কতগুলো বল হয়েছে মাঠছাড়া। তবে তাতে হতাশ না হয়ে লাইন লেংথ ধরে রেখেছিলেন পেসাররা। কিছুটা ধীরগতিতে খেলা লোকেশ রাহুলই সেই চাপে আউট হয়েছেন একটু পরেই, প্যাট কামিন্সের বলে উড়িয়ে মারতে গেলে এক্সট্রা কাভারে সুনীল নারাইনের তালুবন্দি হয়ে ফিরে যান ২০ বলে ১৯ রান করে। আর কোন উইকেট না হারিয়েই অবশ্য পাওয়ারপ্লেতে ৩৭ রান তোলে পাঞ্জাব।
তবে পাওয়ারপ্লেতে যেভাবে চেপে ধরেছিল কলকাতার পেসাররা, সেটার ফলই তারা পেয়েছে পরের ওভারগুলোতে। দুর্দান্ত বল করা শিভাম মাভির মুখোমুখি প্রথম বলেই ফিরে যান ক্রিস গেইল, উইকেটের পিছনে দীনেশ কার্তিকের কাছে ক্যাচ দিয়ে। দারুণ এক স্পেল শেষে চার ওভারের কোটা পূর্ণ করে মাভি দিয়েছেন মাত্র ১৩ রান। গেইলের বিদায়ে মায়াঙ্ক আগারওয়ালের উপর আক্রমণের দায়িত্ব বর্তালে সেই চাপেই ফিরে গেছেন তিনিও, উড়িয়ে মারতে গিয়ে নারাইনের বলে আউট হয়েছেন ৩১ রানে। সামনে ঝাঁপিয়ে পরে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ত্রিপাঠি।
এরপর থেকে পাঞ্জাবের গল্পটা শুধুই হতাশার, নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর। শূন্য রানে থাকতেই মইসেস হেনরিকসের ক্যাচ রাহুল ফেলে দিলেও কাজে লাগাতে পারেননি সে সুযোগ, ফিরে গেছেন ২ রানেই নারাইনের কাছে বোল্ড হয়ে। বাজে এক মৌসুম কাটানো নিকোলাস পুরানের ভাগ্য খোলেনি এই ম্যাচেও। বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে থাকলেও বরুন চক্রবর্তীর ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন ১৯ বলে ১৯ রান করে। থিতু হয়েও হাত খুলতে গিয়েই শাহরুখ খান আউট হয়েছেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর বলে মরগানের কাছে ক্যাচ দিয়ে, করেছেন ১৩ বলে ১৩। চক্রবর্তী-নারাইনের স্পিনজুটির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের পরে শেষে এসে ক্রিস জর্ডানের প্রতি আক্রমণে কিছু রান এসেছিল পাঞ্জাবের। তবে শেষের দুই ওভারে কামিন্স-কৃষ্ণ টেইল পরিষ্কার করেছেন সফলভাবে। জর্ডানের ৩০ বলে ১৮ রানের ইনিংস শেষ হয়েছিলো কৃষ্ণর বলে বোল্ড হয়ে, পাঞ্জাব করতে পেরেছিল ১২৩ রান।