ডি ভিলিয়ার্স ঝড়ের পর থ্রিলার জিতে শীর্ষে ব্যাঙ্গালোর
গ্রুপপর্ব, আহমেদাবাদ (টস- দিল্লি/ফিল্ডিং)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ১৭১/৫, ২০ ওভার (ডি ভিলিয়ার্স ৭৫*, পাতিদার ৩১, ম্যাক্সওয়েল ২৫, আভেশ ১/২৪, ইশান্ত ১/২৬, আক্সার ১/৩৩)
দিল্লি ক্যাপিটালস ১৭০/৪, ১০ ওভার (পান্ট ৫৪*, হেটমায়ার ৫৩*, প্যাটেল ২/৩৭, জেমিসন ১/৩২, সিরাজ ১/৪৪)
ব্যাঙ্গালোর ১ রানে জয়ী
ফিফটি করে কিংবা শেষ দুই বলে দুই চার মেরেও হতাশায় ডুবলেন ঋষভ পান্ট, বাউন্ডারি হজম করলেও উল্লাসে মাতলেন মোহাম্মদ সিরাজ-বিরাট কোহলিরা। শেষ ২ বলে ব্যাঙ্গালোরকে টপকাতে দিল্লির প্রয়োজন ছিল অন্তত ২ ওভার-বাউন্ডারি শট, পান্ট সেটি পারলেন না। প্রায় ছিটকে যাওয়া ম্যাচে দিল্লিকে ফিরিয়ে এনেছিলেন যে শিমরন হেটমায়ার, তিনি শুধু চেয়ে চেয়েই দেখলেন ওপাশ থেকে। এবি ডি ভিলিয়ার্সের ৪২ বলে ৭৫ রানের ক্ল্যাসিক ইনিংসে ব্যাঙ্গালোর তুলেছিল ১৭১, শেষ ওভারে প্রথমবার বোলিং করতে আসা মার্কাস স্টোইনিসের কাছ থেকে ২৩ রান তুলেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। এরপর হেটমায়ারের ২৫ বলে অপরাজিত ৫৩, পান্টের ৪৮ বলে ৫৮ রানের অপরাজিত দুই ইনিংসের পরও দিল্লি আটকে গেছে ১ রান আগেই। চেন্নাইকে টপকে শীর্ষে যাওয়ার সুযোগ ছিল দুই দলেরই, শেষ হাসি এদিন হেসেছেন ডি ভিলিয়ার্সরাই।
হেটমায়ার যখন নেমেছিলেন, তখন ভুগছে দিল্লি। শিখর ধাওয়ান আর স্টিভেন স্মিথ দ্রুত ফিরে গেছেন, পৃথ্বি শ, মার্কাস স্টোইনিস শুরু করলেও বড় করতে পারেননি ইনিংস। পাওয়ারপ্লেতে ২ উইকেটে ৪৩ রান তোলা দিল্লির শেষ ৪০ বলে প্রয়োজন ছিল ৭৮ রান, হেটমায়ার যখন নামেন। পান্ট ছিলেন, তবে নিজেকে যেন এদিন হারিয়ে খুঁজছিলেন তিনি। ১৫তম ওভারে সিরাজকে ছয়-চারে প্রতি-আক্রমণ শুরু করলেন হেটমায়ার, এরপর ম্যাচটাকে প্রায় বের করে নিয়েছিলেন তিনি। সিরাজ, কাইল জেমিসন বা হার্শাল প্যাটেল- ব্যাঙ্গালোরের তিন পেসারেরই বোলিং ফিগারের ক্ষতি করেছেন হেটমায়ার। জেমিসনের করা ১৮তম ওভারে হেটমায়ারের তিন ছয়ে উঠেছিল ২১ রান, প্যাটেলের করা পরের ওভারে ১১। ২৩ বলেই হেটমায়ার পূর্ণ করেছিলেন ফিফটি, এ মৌসুমে প্রথমবার ঝলক দেখালেন যিনি।
শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১৪, তবে স্ট্রাইকে ছিলেন পান্ট। প্রথম দুই বলে দুজন স্ট্রাইক বদলালেও পান্টকে স্বভাববিরুদ্ধ ধীরগতির ইনিংসের দায়মোচনের সুযোগ দেননি সিরাজ। ফিফটির পর পান্টের চোখেমুখে হতাশা ছিল স্পষ্ট, মাইলফলকে যেতে যে তার লেগেছে ৪৬ বল! শেষ বলে অন্তত ছয় লাগতো, থার্ডম্যান দিয়ে চারের বেশি মারতে পারেননি দিল্লি অধিনায়ক।
অবশ্য এই শেষ বলের আগে নিজেদের বোলিং ইনিংসের শেষ ওভারটা নিয়েও হতাশা আছে দিল্লির। টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে ব্যাঙ্গালোরকে চেপে ধরেছিলেন তারা, শুধু টলাতে পারেননি ডি ভিলিয়ার্সকে। পান্টের হাতে অপশন হিসেবে ছিলেন শেষ ওভারে ৩ ওভারে ২৭ রান দিয়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের উইকেট নেওয়া অমিত মিশ্র, তবে তিনি এনেছিলেন স্টোইনিসকে। সেখানেই মোমেন্টামের অনেকখানি আরেকবার নিজেদের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স, তিন ছয়ে।
এর আগে মোমেন্টামটা দিল্লির দিকে গিয়েছিল পাওয়ারপ্লের পরপর দুই বলে-- আভেশ খানের পর ইশান্ত শর্মা যখন ফিরিয়েছিলেন যথাক্রমে বিরাট কোহলি ও দেভদত্ত পাডিক্কালকে। কোহলি অফস্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শট খেলতে গিয়ে হয়েছেন প্লেইড-অন, পাডিক্কাল ফিরেছেন ইশান্তের দারুণ সেট-আপে। ওভার দ্য উইকেট থেকে এর আগের ডেলিভারিগুলি বেরিয়ে গিয়েছিলে পাডিক্কাল থেকে, এবার সেটি ঢুকেছে ভেতরে, ভড়কে দিয়ে ভেঙেছে স্টাম্প।
ব্যাকফুটে যাওয়া ব্যাঙ্গালোর পাওয়ারপ্লেতে তুলেছিল ৩৬ রান, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল চড়াও হয়েছিলেন এরপর দুই স্পিনারের ওপর- মিশ্র ও প্যাটেলের বলে একটি করে ছয় মারার পর অবশ্য লং-অনে ধরা পড়েছেন। ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে ৩৮ বলে ৫৪ রানের জুটির অংশ হয়ে ফিরেছেন রজত পাতিদারও। ডি ভিলিয়ার্স ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৩৫ বলে, শেষ পর্যন্ত সেটিও হয়ে দাঁড়িয়েছে তার আরেকটি ক্ল্যাসিকে। দেখেছেন, পড়েছেন, বুঝেছেন, এরপর বের করেছেন মারণাস্ত্র।
ডি ভিলিয়ার্স ঝড়ের পর আহমেদাবাদে এসেছিল বালুঝড়, যার কারণে মিনিট বিশেক দেরিতে শুরু হয়েছিল খেলা। আগেরদিন শিশিরের কারণে পরে ফিল্ডিং করা দলের বল গ্রিপিংয়ে সমস্যা হয়েছিল ব্যাপক, তবে সেই বালুঝড়ের কারণেই কিনা দাপট দেখাতে পারলো না শিশির, এদিন ব্যাঙ্গালোরের বোলিং-ফিল্ডিংয়ে সমস্যা হলো না তেমন। শেষ পর্যন্ত এদিন যা সমস্যা হওয়ার, তা তো হয়েছে দিল্লিরই।