দুর্দান্ত বেনজেমার পরও বৃষ্টিভেজা মাদ্রিদে ফাইনালের পথে কিছুটা এগিয়ে গেল চেলসি
চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে এর আগে কখনো মুখোমুখি হয়নি রিয়াল মাদ্রিদ-চেলসি। অঝোরে বৃষ্টির মধ্যে আলফ্রেড ডি স্টেফানো স্টেডিয়ামে প্রথম দেখায় জেতেনি কেউই। তবে সেমির প্রথম লেগে ১-১ গোলের ড্রতে চেলসিরই বেশি খুশি হওয়ার কথা। যদিও থমাস তুখেল জানেন, প্রথমার্ধের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে তারা ফাইনালের পথে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারত। তারপরও রিয়ালের বিপক্ষে পাঁচবারের দেখায় অপরাজিতই রইলেন তুখেল।
কেউ যদি ভেবে থাকেন থমাস তুখেলের চেলসি অ্যাওয়ে ম্যাচে ডিফেন্ড করার জন্য নামবে তাহলে শুরু থেকেই সেটা ভুল প্রমাণিত করেছে তারা। ম্যাচের প্রথম থেকেই চেলসি জানান দিয়েছে তারা গোল পেতেই এসেছে মাদ্রিদে। প্রথম গোলটা পেয়ে যেতে পারত মিনিট দশেকের মধ্যেই। দারুণ একটা আক্রমণ থেকে ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচের হেড গিয়ে পড়ে টিমো ভের্নারের কাছে। মাত্র ছয় গজ দূর থেকে জার্মান স্ট্রাইকারের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দিয়েছেন থিবো কোর্তোয়া। তবে কোর্তোয়ার কৃতিত্বের চেয়ে অত কাছ থেকে গোল মিস করার জন্য সম্ভবত ভের্নারের ব্যর্থতাই বেশি। এই মৌসুমে সহজ গোল মিস করার লিস্ট আরও বাড়ল ভের্নারের।
তবে বেশিক্ষণ আফসোস করতে হয়নি চেলসিকে, ১৪ মিনিটের মধ্যেই পেয়ে যায় গোল। ব্যাকে তিনজন ডিফেন্ডার নিয়ে শুরু থেকেই খাবি খাচ্ছল রিয়াল, এবারও রুদিগারের লং বলে তারা অফসাইডে রাখতে পারেনি পুলিসিচকে। বলটা ধরার পর ঠণ্ডা মাথায় এগিয়ে আসা কোর্তোয়াকে কাটিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছেন পুলিসিচ। চ্যাম্পিয়নস লিগে সর্বোচ্চ গোল করা আমেরিকান এখন তিনি।
প্রথম ২০ মিনিটে রিয়ালের ওপর দিয়ে একরকম ঝড়ই গেছে। আক্রমণ ঠেকাতেই বেশি ব্যস্ত ছিল রিয়াল, ৩-৫-২ এ নামলেও মার্সেলো ওপরে উঠে থাকায় বাস্তবে ফর্মেশন ছল ৪-৪-২। এর মধ্যেই করিম বেনজেমা জানান দিয়েছেন, কেন তিনি এই মুহূর্তে জিদানের সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস। বক্সের বাইরে থেকে বল ধরার পর বাঁ পায়ের গোলার মতো পোস্টে লেগে চলে যায় বাইরে। নইলে তখনই এগিয়ে যেতে পারত রিয়াল।
তবে কিছুক্ষণ পর আর আফসোস করতে হয়নি বেনজেমাকে। এবার শর্ট কর্নার থেকে ভিনিসিয়াসের হেডের পর মিলিতাওয়ের হেডে বল চলে আসা বেনজেমার কাছে। মাথা দিয়ে বলটা ধরে ডান পায়ের দুর্দান্ত এক সাইডভলিতে বল জড়িয়ে দিয়েছেন জালে, মনে করিয়ে দিয়েছেন ডি বক্সের ভেতর ক্লাসিক সেন্টার ফরোয়ার্ডদের গোলকে। এই গোলেই রাউলকে ছুঁয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগে বেনজেমার গোল এখন ৭১টি। সামনে শুধু লেভানডফস্কি, মেসি আর রোনালদো। এই গোলের পরেই টনি ক্রুস বক্সের বাইরে থেকে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শট চলে যায় বাইরে।
তবে গোল খাওয়ার পরও চেলসি আবার খেলায় চেষ্টা করে। ভের্নার পরে আরও একটা হাফ চান্স পেয়েছিলেন, কিত্নু এবার সাইড নেটে বল মেরে দেন। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ভালদেবাবাসে প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে ১-১ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য খেলাটা কিছুটা থিতিয়ে পড়ে। এই অর্ধে কেউই তেমন পরিষ্কার সুযোগ পায়নি। সেই অর্থে গুছিয়ে খেলতে পারছিল না কেউই, এর মধ্যে ভের্নারের একটা শট ব্লক হয়। আর বেনজেমা চেলসি বক্সে ঢুকে শট নিলেও সেটা চলে যায় অনেক ওপর দিয়ে। ৬০ মিনিটের পর জিদান ভিনিসিয়াসের জায়গায় নামান এডেন হ্যাজার্ডকে। ওদিকে তুখেল একেবারে তিনটি পরিবর্তন করেন; পুলিসিচ, ভের্নার আর আজপিলিকুয়েতার জায়গায় নামিয়ে দেন জিয়েখ, হ্যাভার্টজ ও রিস জেমসকে। চেলসির খেলায় অবশ্য একটু ধার আসে, কিন্তু সেই অর্থে সুযোগ পাচ্ছিল না। জিয়েখদের কোনো সুযোগ পেতে দিচ্ছিলেন মিলতাওরা। জিদানও পরিবর্তন করেন এরপর, মার্সেলোকে নামিয়ে আসেন্সিওকে ওঠান। বোঝাই যাচ্ছিল, রিয়াল নিজেদের মাঠে অন্তত আর একটা গোল চায়।
কিন্তু এরপর চেলসি বা রিয়াল, কেউই সেই গোলের কাছাকাছি যেতে পারেনি। জিয়েখ ফ্রিকিক থেকে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কোর্তোয়া ছিলেন জায়গামতো। ক্রুসের একটা শট দিকবদল করে একটুর জন্য চলে যায় পোস্ট ঘেঁষে। সেই কর্নার থেকেই ভারানের হেড চিলওয়েলের মাথায় লেগে আরেকটু হলে ঢুকে যেত জালে। কিন্তু সেটা হয়নি। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল হয়নি এই অর্ধে। এর মধ্যেও নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন আজকের ম্যাচসেরার দাবিদার কান্তে। তবে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর তুখেলের চেয়ে জিদানই বেশি মন খারাপ করবেন।