কিক অফের আগে: পিএসজি-সিটির এল ক্যাশিকোতে লড়াইয়ের ভেতরেও অনেক লড়াই
চ্যাম্পিয়নস লিগ, সেমিফাইনাল ১ম লেগ
পিএসজি-ম্যান সিটি
পার্ক ডি প্রিন্স, রাত ১টা
লড়াইটা হছে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগের। কিন্তু পিএসজি-ম্যানচেস্টার সিটির ম্যাচটাকে চাইলে অনেক নামই দেওয়া যায়। এল ক্যাশিকো, তেল ক্যাশিকো বা এল গ্যাশিকো থেকে শুরু করে এমনকি তৃতীয় গালফ ওয়ার বা উপসাগরীয় যুদ্ধ হিসেবেও তো চালিয়ে দেওয়া যায়। ইংল্যান্ড আর ফ্রান্সের দুই ক্লাবের উত্থানের পেছনে তো তেল আর গ্যাসের মধ্যপ্রাচ্যের টাকার ঝনঝনানি। সেখানে সিটি আবু ধাবির আশীর্বাদপুষ্ট আর পিএসজির পেছনে আছে কাতারের অর্থ।
দুই দলের মধ্যে মিল আসলে অনেকই আছে। ঘরোয়া লিগে তাদের সাফল্য এলেও তারা ঘরোয়া ও ইউরোপীয় মঞ্চে বড় দল হয়ে উঠেছে এই আরব অর্থের জন্যই। কিন্তু দুই দল মিলে ৩ বিলিয়ন ইউরো খরচের পরও এখনও ইউরোপে প্রাপ্তির খাতা শূন্য- কোনো চ্যাম্পিয়নস লিগ নেই কারও। ঘরোয়া লিগে শিরোপাজয়ের উৎসব নিয়মিত করলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে সেটার সুযোগ হয়নি। সবচেয়ে কাছাকাছি অবশ্য পিএসজিই গিয়েছিল, গত বার ফাইনালে উঠেছে। পেপ গার্দিওলার সিটির অবশ্য সেমিফাইনালের বেশি ওঠা হয়নি। তবে দুই দলের কোচের জন্য এখন অ্যাসাইনমেন্ট একটাই- যে করেই হোক ইউরোপিয়ান ট্রফি চাই। পিএসজির জন্য ডালভাত হয়ে যাওয়া ঘরোয়া ট্রফিটা এখন আর অগ্রাধিকারও নয়। গার্দিওলাও স্বীকার করে নিয়েছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগটাই এখন তারা পাখির চোখ করছেন। সেটা তারা পেতে চান যে কোনো মূল্যে।
মিল খুঁজলে পাওয়া যাবে আরও। দুই দলের কোচ মরিজিও পচেত্তিনো ও পেপ গার্দিওলার কোচিং দর্শনেও মিল আছে অনেক। পচেত্তিনো সবসময় মার্সেলো বিয়েলসার প্রভাবের কথা বলে এসেছে স্পষ্ট করেই, গার্দিওলাও বলেছেন আর্জেন্টাইন কোচ তাকে কীভাবে তাকে প্রভাবিত করেছেন। হাই প্রেসিং ফুটবলে দুজনের খেলার ধরনেও তাই বিয়েলসার ছাপ আছে কিছুটা। গার্দিওলা অবশ্য ম্যাচ শুরুর আগে বলেছেন, এই লড়াইটা কোনোভাবেই ব্যক্তিগত নয়। পচেত্তিনর সঙ্গে ইংল্যান্ডে অনেকবারই দেখা হয়েছে তার। দুজনের মুখোমুখি ১৮ দেখায় গার্দিওলার জয় ১০টি, আর পচেত্তিনর তিনটি।
তবে দলের সঙ্গে আজ ফোকাস থাকবে কয়েকজনের ওপর আলাদা করেও। সিটি এই মৌসুমে অবশ্য পুরোপুরি দল হিসেবেই খেলছে। কেভিন ডি ব্রুইন লম্বা সময়ের জন্য বাইরে থাকলেও সমস্যা হয়নি তাদের। মাঝমাঠের প্রাণভোমরা অবশ্য আজ থাকছেন মাঠে, তবে আরও একবার সম্ভবত কোনো স্বীকৃত স্ট্রাইকার ছাড়াই মাঠে নামতে যাচ্ছে সিটি। পিএসজির ক্ষেত্রে সেই ফোকাসটা থাকবে পুরোপুরি দুজনের ওপর। বায়ার্নের সঙ্গে প্রথম লেগে নেইমার যেভাবে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন, তাতে গার্দিওলা আরও বেশি ভাববেন তাকে নিয়ে। এমবাপেও নকআউট পর্বে নিয়মিত গোল করে জানান দিচ্ছেন, তাকে কেন পেতে চাইছে রিয়াল-বার্সা। নেইমার অবশ্য কদিন আগে বলেছেন, তিনি পিএসজিতে সুখেই আছেন, ভালো আছেন। তবে এমবাপেকে নিয়ে একটা গুঞ্জন আছেই। পচেত্তিনো নিশ্চয় চাইবেন না, এসব কথা দুজনের ফোকাসে কোনো প্রভাব ফেলুক।
গার্দিওলা অবশ্য জানেন, বার্সা-বায়ার্নকে হারিয়ে আসা পিএসজি হবে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই জন্য আজ উপভোগের মন্ত্র জপে দিচ্ছেন ছেলেদের কানে, বলছেন এই ম্যাচটা শুধু একটা প্রীতি ম্যাচ হিসেবে দেখতে। দুই দলের হেড টু হেড হেড রেকর্ড অবশ্য সিটির পক্ষেই। চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে পাঁচ বছর আগের দেখায় প্যারিসে ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর ইতিহাদে গিয়ে জিতেছিল সিটি। সেই ম্যাচে একমাত্র গোল করেছিলেন ডি ব্রুইন। তার কাছ থেকে আজও সেরকম কিছু চাইবেন গার্দিওলা।
দলের খবর
বড় ধরনের কোনো চোটের সমস্যা নেই গার্দিওলার দলের। নিষেধাজ্ঞা শেষে একাদশে ফেরার কথা স্টোনসের, নিয়মিত একাদশের সবাইকেই পাচ্ছেন গার্দিওলা। মাঝমাঠে রদ্রির ওপর ভরসা রাখতে পারেন, ওদিকে স্টার্লিংয়ের জায়গায় আসতে পারেন বার্নাডো সিলভা। পিএসজিও ভেরাত্তিকে পাচ্ছে আজ, মার্কিনিয়সও ফিট থাকলে নামতে পারেন।
ম্যান সিটি
এডারসন, ক্যান্সেলো, ডিয়াজ, স্টোনস, ওয়াকার, রদ্রি, গুন্দোয়ান, ডি ব্রুইন, মাহরেজ, ফোডেন, বার্নাডো সিলভা
পিএসজি
নাভাস, মার্কিনিয়স, কিমপেম্বে, ডিয়ালো, ফ্লোরেঞ্জি, গায়ে, পারেদেস, ভেরাত্তি, ডি মারিয়া, এমবাপে, নেইমার