ডি ব্রুইন-মাহরেজে প্যারিস থেকে জয় নিয়ে ফিরল গার্দিওলার সিটি
২০১১ সালের পর আর চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের অভিজ্ঞতা হয়নি পেপ গার্দিওলার। ম্যানচেস্টার সিটির দৌড়ও ছিল সেমিফাইনাল পর্যন্ত। সেই স্বপ্নের ফাইনালের পথে বড় একটা ধাপ এগিয়ে গেল ম্যান সিটি। পিএসজির মাঠে এসে ২-১ গোলের জয় পেয়েছে। ঘটনাবহুল ম্যাচে পরের পর্বে ওঠার জন্য নিজেদের দারুণ অ্যাওয়ে ফর্মের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পিএসজিকে।
ম্যাচে আসলে দুই অর্ধটা দুই রকম গল্প বলছে। প্রথমার্ধে পিএসজির দারুণ কিছু আক্রমণের পর মার্কিনিয়সের গোলে লিড প্রাপ্য ছিল। কিন্তু এরপর ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরেছে সিটি। দ্বিতীয়ার্ধে তারা আরও বেশি ধারালো ছিল, কেভিন ডি ব্রুইন ও রিয়াদ মাহরেজের গোলে তারা লিডটা নিয়েছে। আর শেষদিকে ইদ্রিস গায়ে লাল কার্ড দেখে পিএসজির ম্যাচে ফেরার সুযোগটা হাতছাড়া করেছেন পুরোপুরি।
পেপ গার্দিওলা আগেরবার থেকে শিক্ষা নিয়েই বোধ হয়, এবারের একাদশে কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করেননি। গত কিছুদিনে যেমন নামিয়েছেন, স্ট্রাইকারবিহীন একাদশের ওপরেই ভরসা রেখেছিলেন আজ। শুরুর দিকে ম্যানচেস্টার সিটিই একটু দাপটে খেলছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিএসজি জানান দেয়, কেন তারা বার্সেলোনা, বায়ার্নের মতো দলকে হারিয়ে সেমিতে উঠেছে।
প্রথম সুযোগটা অবশ্য মিনিট দুয়েকের মাথায় পেয়ে গিয়েছিল পিএসজি। নেইমারের শটটা ওয়াকারের পায়ে লেগে দুর্বল না হলে সেবারই ভালো পরীক্ষা দিতে হতো এডারসনকে। সেটা দিতে হয়েছে খানিক পর, নেইমার-ডি মারিয়ার যুগলবন্দিতে। শুরুতে নেইমার আর ডি মারিয়ার পাসিং বেশ ভুগিয়েছে সিটিকে।
গোলের জন্য অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি পিএসজিকে। ১২ মিনিটে ডি মারিয়ার একদম কম্পাস দিয়ে মাপা নিখুঁত কর্নারে দারুণ একটা হেড করে এগিয়ে দেন মার্কিনিয়স। তার দুর্দান্ত দৌড় মার্ক করতে পারেনি সিটির কেউ। রোনালদো ও গ্রিজমানের পর টানা দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ও সেমিতে গোল করলেন এই ডিফেন্ডার। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি তার তৃতীয় গোল, সর্বশেষ ডিফেন্ডার হিসেবে এক মৌসুমে এত গোল ছিল শুধু ২০১৮ সালে আয়াক্সের নিকোলাস টালিয়াফিকোর। দিয়াস-স্টোনসের রক্ষণ আগের তিন ম্যাচেই তাই ক্লিন শিট রাখতে পারল না। এরপর আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল কর্নার থেকেই, কিন্তু পারেদেসের হেড অল্পের জন্য চলে যায় বাইরে দিয়ে।
সিটি অবশ্য গুছিয়ে একটু খেলায় ফেরার চেষ্টা করে। বার্নাড সিলভা লং ক্রস থেকে নাভাসকে নিয়ার পোস্টে একটু পরীক্ষায় ফেলার চেষ্টা করেছিলেন, তবে নাভাস ছিলেন সতর্ক। ওদিকে পিএসজি প্রেস করছিল ভালোমতোই, সিটির রক্ষণকে কাঁপিয়ে সুযোগও পাচ্ছিল। নেইমার একটা পেনাল্টির আপিল করেছিলেন, তবে সেটা ধোপে টেকেনি। তবে সিটি নিজেদের সেরা সুযোগটা পেয়ে যায় প্রথমার্ধের শেষ দিকে। প্রেস আর কাউন্টার প্রেসের খেলায় পিএসজি রক্ষণের ভুলে সিলভার পাসটা ফিল ফোডেন পেয়েছিলেন বক্সের মাথায়। বাঁ পায়ের শটে জোর ছিল অনেক, কিন্তু সেটা চলে যায় সরাসরি নাভাস বরাবর। পিএসজি গোলরক্ষক এ যাত্রা তাই বাঁচিয়ে দিয়েছেন দলকে।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নাভাসই ডুবিয়েছেন পিএসজিকে। এই অর্ধে শুরু থেকেই বেশ দ্রুত বল পাসিং করতে থাকে সিটি। ডি ব্রুইন দুর্দান্ত একটা ওভারহেড কিক গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন, কিন্তু বল চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। কিন্তু খানিক পর যেভাবে গোল পেলেন, সেটা নিজেও আশা করেননি নিশ্চয় ডি ব্রুইন। কর্নার থেকে বল তার পায়ে এসে পড়ে বাঁ প্রান্তে। ক্রসই করেছিলেন, কিন্তু সবাইকে ফাঁকি দেওয়া বলটা অবিশ্বাস্যভাবে সেটা চোখের সামনে দিয়ে দূরের পোস্টে জড়িয়ে যেতে দেখলেন নাভাস।
এরপরে সিটি পিএসজিকে আরও চেপে ধরতে থাকে। এর মধ্যে অবশ্য পিএসজি পালটা আক্রমণে চেষ্টা কছিল, ভেরাত্তি পা ছোঁয়াতে পারলে এগিয়েও যেতে পারত। কিন্তু সেটা আর হয়নি। কিন্তু পিএসজি খোলসে ঢুকে গিয়ে সুবিধা করে দিয়েছে সিটিকে। ৭১ মিনিটে ডি বক্সের মাথায় অপ্রয়োজনীয় একটা ফ্রিকিক দেয় পিএসজি। ওয়ালটা ডি ব্রুইনের জন্যই ছিল, কিন্তু ফ্রিকিকটা নিলেন মাহরেজ। লখিন্দরের বাসরের মতো দেয়ালের মাঝখানে ফুটো হয়ে বলটা ঢুকে নাভাসকে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। পিএসজি পায় লিড।