তাসকিন, ডিকওয়েলার পর আঁধারের খেলা
দ্বিতীয় টেস্ট, পাল্লেকেলে (টস-শ্রীলঙ্কা/ব্যাটিং)
দ্বিতীয় দিন, স্টাম্পস
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৪৬৯/৬, ১৫৫.৫ ওভার (করুনারত্নে ১১৮, থিরিমান্নে ১৪০*, ফার্নান্ডো ৮১, ডিকওয়েলা ৬৪, তাসকিন ৩/১১৯, শরিফুল ১/৯১, তাইজুল ১/৮৩, মিরাজ ১/১০২)
তাসকিন আহমেদের ৩, মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের একটি করে উইকেটে প্রথম দিনের চেয়ে বেশ ভাল লড়াই করলেও নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে শ্রীলঙ্কা। আলোকস্বল্পতায় আগেভাগেই খেলা শেষ হওয়ার সময় ৬ উইকেটে ৪৬৯ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা, নিরোশান ডিকওয়েলের সমানসংখ্যক বলে ৬৪ রানের ইনিংসে। অবশ্য বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতা মিলিয়ে শেষ সেশনে খেলা হয়েছে ৯.৫ ওভার, ফলে দ্বিতীয় দিনই ইনিংস ঘোষণার পরিকল্পনা থেকে থাকলেও সেটি বাস্তবায়িত হয়নি শ্রীলঙ্কার।
১ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা প্রথম সেশনে ৪৩ রান তুলেছিল ৩ উইকেট হারিয়ে, মূলত তাসকিনের দারুণ ফাস্ট বোলিংয়ে। দ্বিতীয় সেশনটা অপেক্ষাকৃত ভাল গেছে তাদের, ২ উইকেটে সেখানে তারা তুলেছিল ৯১ রান। প্রথম সেশনে তাসকিন নিয়েছেন দুটি, পরের সেশনে আরেকটি। শেষ সেশনে পেতে পারতেন আরেকটি, তবে আবারও ক্যাচ মিস হওয়ায় সেটি হয়নি।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভাল ছিল প্রথম সেশনই, যেখানে তিন উইকেটের সবকটিই এসেছিল দ্বিতীয় ঘন্টায়- প্রথম ঘন্টায় আঁটসাঁট বোলিংয়ের ফল মিলেছে যেখানে। সকালের প্রথম ঘন্টায় বাউন্ডারি এসেছিল তিনটি, শরিফুল ইসলামকে ড্রাইভ করে একটি মেরেছিলেন থিরিমান্নে, বাকি দুটি মেরেছেন ওশাদা ফার্নান্ডো। ১০২তম ওভারে গিয়ে বলের আকার পরিবর্তন হয়ে যাওয়াতে সেটি পরিবর্তন করেছিলেন আম্পায়াররা, হয়তো বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে সেটিও। তবে ব্রেকথ্রুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের। মন্থর গতির ব্যাটিংয়েই ফিফটি পূর্ণ করেছেন ফার্নান্ডো, ১৩২ বলে, রাহিকে চার মেরে। থিরিমান্নের সঙ্গে তাদের জুটি সেঞ্চুরিও ছুঁয়েছে।
আগেরদিনও প্রথম ঘন্টায় শুরুটা সতর্ক ছিল, তবে এরপরই বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে ছিটকে দিয়েছিলেন করুনারত্নে-থিরিমান্নে। এদিন তেমন হয়নি মূলত তাসকিন অবশেষে ভাল বোলিংয়ের পুরস্কার পাওয়াতে-- অফসাইডে সরে যাওয়া লাহিরু থিরিমান্নে ডাউন দ্য লেগে তার বলেই হয়েছেন গ্লাভড। সে উইকেটেই যেন বাঁধ খুলে গেছে একটু। দুই বল পরই এজড হয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসও, তবে বোলার তাসকিন বা উইকেটকিপার লিটন দাস বা কেউ- আবেদনই করেননি। আগেরদিন ২৮ রানে জীবন পাওয়া করুনারত্নে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছিলেন অনেক, ম্যাথিউস অবশ্য সেটি করতে পারেননি। খানিক বাদেই তিনি ফিরেছেন তাসকিন-লিটন জুটিতেই। গুডলেংথে অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়েছিলেন ম্যাথিউস, ডানদিকে ডাইভ দিয়ে সেটি দারুণভাবে ধরেছেন লিটন, করেছেন দায়মোচন।
এরপর তাইজুল ইসলামের তীক্ষ্ণ টার্ন আর বাউন্সে নড়বড়ে হয়ে পড়েছিলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। এর আগেও টার্নে তাকে বিট করেছিলেন তাইজুল, তবে এবার হয়েছেন সফল, স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্ত বারদুয়েকের চেষ্টায় নিয়েছেন ভাল ক্যাচ।
পরের সেশনেও প্রথম ব্রেকথ্রু দিয়েছিলেন তাসকিন। ২১তম বলে গিয়ে অফ দ্য মার্কে যাওয়া নিসাঙ্কা একটা জীবনও পেয়েছিলেন, ১০ রানে রাহির বলে পয়েন্টে তাইজুল ইসলামের হাত গলে বেড়িয়ে গিয়েছিল ক্যাচ। তবে তাসকিনের নিচু হওয়া বলে ব্যাট নামাতে না পেরে বোল্ড হয়েছেন তিনি, যদিও পিচের লো-বাউন্সের সঙ্গে ফ্রন্টফুটের বদলে ব্যাকফুটে যাওয়াটাও সমান দায়ী এর পেছনে।
নিসাঙ্কার ইনিংস বড় না করতে পারার আক্ষেপ থাকলে ওশাদা ফার্নান্ডোর আছে সেঞ্চুরি থেকে ১৯ রান দূরে থামার আক্ষেপ। তিনি অবশ্য লিটন দাসের দারুণ আরেকটি ক্যাচের শিকার হয়েছেন। তাকে সুইপে উদ্যত হতে দেখে আগে থেকেই লেগসাইডে যাওয়া শুরু করেছিলেন লিটন, তার পেছনে স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তও। মিরাজের বল প্রথমে কনুই, এরপর সেখান থেকে ব্যাটে লেগে উঠেছে ক্যাচ, আগে থেকেই অনুমান করা লিটনের কাছেই গেছে সেটি। নিসাঙ্কার সঙ্গে ফার্নান্ডোর জুটি ছিল ৫৪ রানের, তবে দুজন ফিরেছেন একই রানে দাঁড়িয়ে, ৫ বলের ব্যবধানে। ২২১ বলে ৮১ রানের ইনিংসে ফার্নান্ডো মেরেছেন ৮টি চার।
ক্রিজে এরপর দুই নতুন ব্যাটসম্যান, ফলে ভাল সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। চা-বিরতির আগে অবশ্য রমেশ মেন্ডিস ও ডিকওয়েলার জুটি বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ সেশনে এসেছিল সে সুযোগ। ১২ রানে দাঁড়িয়ে তাসকিনের বলে এজড হয়েছিলেন তিনি, তবে শান্ত মিস করেছেন সেটি। ইনিংসে তাসকিনের বলে এটি দ্বিতীয় ক্যাচ মিস করলেন শান্ত। ডিকওয়েলাকেও একবার আউট দিয়েছিলেন কুমার ধর্মসেনা, তবে সে দফা কট-বিহাইন্ড থেকে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন তিনি।
এরপরই নেমেছে আঁধার। প্রথমদফা প্রায় ২৫ মিনিট বন্ধ ছিল খেলা, এরপর চলেছে প্রায় ৩৮ মিনিট। এরপর শুরু হয়নি আর।