৪৩৭ রানতাড়ায় আক্রমণের পথে হেঁটে আগেভাগেই হোঁচট বাংলাদেশের
দ্বিতীয় টেস্ট, পাল্লেকেলে (টস-শ্রীলঙ্কা/ব্যাটিং)
চতুর্থ দিন, স্টাম্পস
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৪৯৩/৭ ডিক্লে., ১৫৯.২ ওভার (করুনারত্নে ১১৮, থিরিমান্নে ১৪০, ফার্নান্ডো ৮১, ডিকওয়েলা ৭৭, তাসকিন ৪/১২৭, শরিফুল ১/৯১, তাইজুল ১/৮৩, মিরাজ ১/১১৮) ও ২য় ইনিংস ১৯৪/৯ (করুনারত্নে ৬৬, ডি সিলভা ৪১, নিসাঙ্কা ২৪, তাইজুল ৫/৭২, মিরাজ ২/৬৬, সাইফ ১/২২)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২৫১ অল-আউট, ৮৩ ওভার (তামিম ৯২, মুমিনুল ৪৯, মুশফিক ৪০, সাইফ ২৫, জয়াবিক্রমা ৬/৯২, লাকমাল ২/৩০, মেন্ডিস ২/৮৬) ও ২য় ইনিংস ১৭৭/৫ (মুশফিক ৪০, সাইফ ৩৪, মুমিনুল ৩২, শান্ত ২৬, মেন্ডিস ৩/৮৬, জয়াবিক্রমা ২/৫৮)
বাংলাদেশের জয়ের জন্য ২৬০ রান প্রয়োজন
৪৩৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় চতুর্থ দিন ৪৮ ওভার ব্যাটিং করেই প্রথম পাঁচজন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। বেশিরভাগ সময় আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছিলেন তারা, এখন পর্যন্ত ইনিংসে ২২টি চারের সঙ্গে হয়েছে দুটি ছয়। তবে রমেশ মেন্ডিস ও প্রভিন জয়াবিক্রমার কাছে উইকেটও দিয়ে আসতে হয়েছে তাদের, মোটামুটি সবাই শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউই। শেষদিন ৫ উইকেট বাকি নিয়ে ২৬০ রান প্রয়োজন তাদের এখন। আলোকস্বল্পতায় মিনিট ত্রিশেক আগেই খেলা শেষ হয়েছে, লিটন দাসের সঙ্গী হিসেবে আছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে স্পিনিং-ট্র্যাকে তাদের সামনে এখন দীর্ঘ পথ।
এদিনও আক্রমণাত্মক শুরু করেছিলেন তামিম, সুরাঙ্গা লাকমালকে ব্যাকফুট পাঞ্চে চার মেরে। এরপর মেন্ডিসের বলে সামনে এসে মেরেছিলেন ছয়, আলগা বল ছাড়েননি। তবে শীঘ্রই মেন্ডিসের ফাঁদে পড়তে হয়েছে তাকে, টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে এজড হয়েছেন তিনি ২৬ বলে ২৪ রান করে। চার মেরে অফ দ্য মার্কে যাওয়া সাইফ হাসানও আক্রমণই করে গেছেন, তবে শট খেলার মাঝের সময়গুলিতে খুব একটা দৃঢ় ছিলেন না তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি ফিরেছেন জয়াবিক্রমার ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ব্যাট ছুঁড়ে, কাভারে ধরা পড়ার আগে করেছেন ৪৬ বলে ৩৪, ৫ চার ও এক ছয়ে। এর আগে একবার বেঁচেছিলেন তিনি রিভিউ নিয়ে।
শ্রীলঙ্কা অবশ্য ৩৬ ওভারের মাঝেই হারিয়ে ফেলেছে তিনটি রিভিউ- দুটি শান্ত ও একটি লিটনের বিপক্ষে নিয়েছিল তারা। শান্ত অবশ্য ঠিকই ফিরেছেন- শুরু থেকে সুইপের দিকে ঝোঁক ছিল তার, তবে আউট হয়েছেন জয়াবিক্রমার রাফে পড়ে টার্ন করা বল তার ডিফেন্স চিড়ে ভেতরে ঢুকে পড়ায়। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও অবিচ্ছিন্ন থেকে বিরতিতে গিয়েছিলেন মুশফিক-মুমিনুল, বিরতির পরই ভেঙেছে সে জুটি।
মেন্ডিসের বাইরের বলে আলগা শট খেলতে গিয়ে ইনসাইড-এজে বোল্ড হয়েছেন মুমিনুল। মুশফিক জীবন পেয়েছিলেন ডিকওয়েলার হাতে, সামনে এসে কিছু একটা করতে গিয়ে তার দুই পায়ের ফাঁক গলে বল চলে গিয়েছিল, কিন্তু শ্রীলঙ্কান উইকেটকিপার স্টাম্পিং করতে পারেননি। বাংলাদেশ ইনিংসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০ রান তার, তবে আউট হওয়ার আগে থেকেই নড়বড়ে ছিলেন তিনি। অবশেষে মেন্ডিসের বাড়তি বাউন্সের বলে গ্লাভড হয়ে লেগস্লিপে ধরা পড়েছেন তিনি। লিটন বেঁচেছেন দুইবার- একবার শ্রীলঙ্কানদের রিভিউ বৃথা গেছে, আরেকবার তিনি নিয়েছেন রিভিউ। শেষদিকে এসে রিভিউ নিয়ে কটের সিদ্ধান্ত থেকে বেঁচেছেন মিরাজও।
এর আগে আগেরদিনের স্কোরের সঙ্গে ৩৫.২ ওভারে ১৭৭ রান যোগ করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেশনে দিমুথ করুনারত্নের ফিফটি, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, পাথুম নিসাঙ্কা, নিরোশান ডিকওয়েলায় ভর করে ৩২ ওভারে ১৫৫ রান তুলেছিল তারা, ওভারপ্রতি ৪.৮৪ হারে।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন আগেরদিনের অবিচ্ছিন্ন করুনারত্নে-অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস জুটি। ম্যাথিউস অবশ্য ফিরেছেন তাড়াতাড়িই, তাইজুলকে পেছনে গিয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাট-প্যাডে শর্ট লেগে ধরা পড়েছেন বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলি রাব্বির কাছে। চতুর্থ উইকেটে করুনারত্নে ও ডি সিলভা এরপর যোগ করেছেন ৭৩ রান, ১৩.৩ ওভারেই। এ জুটিতেই ৩০০ লিড পেরিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। মাঝ দিয়ে তাসকিন আহমেদকে এনেছিলেন মুমিনুল, তবে বাংলাদেশ পেসারের ওপর চড়াও হয়েছিলেন ডি সিলভা। তাদের জুটি ভেঙেছে পার্ট-টাইমার সাইফের হাত ধরে। তার বলে ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট লেগে ইয়াসিরের আরেকটি ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে করুনারত্নে করেছেন ৭৮ বলে ৬৬। ব্যাটিংয়ের জন্য মোটামুটি কঠিন এক উইকেটে ভাল ইনিংস খেলেছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক, ৫৯ বলে ফিফটি করেছেন, ৭ চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছয়ও।
ডি সিলভা অবশ্য ফিফটি পাননি, তবে তার কাজটা তিনি করে গেছেন ৫২ বলে ৪১ রানের ইনিংসে। মিরাজকে গ্লাইড করতে গিয়ে তার এজ লিটনের প্যাডে লেগে গেছে স্লিপে থাকা শান্তর কাছে। আর পাথুম নিসাঙ্কা তাইজুলকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মিড-অনে, এর আগে নিরোশান ডিকওয়েলার সঙ্গে তার জুটিতে এসেছে ৩৮ রান।
দ্বিতীয় সেশনে ২২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ইনিংস ঘোষণা করেছিল শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেশনের মতো দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করছিল তারা আবারও, তবে সেটি এগোয়নি খুব বেশিদূর। বিরতির পরপরই তাসকিন আহমেদকে পুল করতে গিয়ে তাইজুলের হাতেই ক্যাচ দিয়েছিলেন ডিকওয়েলা। মেন্ডিসের বিপক্ষে তাইজুলের বলে বাংলাদেশের একটা রিভিউ ব্যর্থ হওয়ার ঠিক পরের বলেই ফিরেছেন তিনি পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে।
সুরাঙ্গা লাকমাল নেমে একটা ছয় মেরেছিলেন তাইজুলকে, পরের ওভারে লং-অফে আবু জায়েদ রাহি ক্যাচ মিস করার পর হয়েছিল চার। তবে ঠিক পরের বলেই বোল্ড হয়েছেন তিনি। এটি দিয়েই ৫ উইকেট পূর্ণ হয়েছে তাইজুলের, ক্যারিয়ারে এটি ৮ম পাঁচ এটি তার। এ কন্ডিশনে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মূল বোলারের ভূমিকা পালন করেছেন তিনিই।